চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধোবড়া গ্রামের এক অসহায় দিনমজুর ইব্রাহিম আলী। বাবা ইয়াসিন আলীর আদর ¯েœহ থেকে বঞ্চিত হয়ে দুঃখীনি মায়ের হাতের ছোঁয়ায় বেড়ে উঠা তাঁর জীবন। অনেক দুঃখে কষ্টে বেড়ে উঠা ইব্রাহিম আলী অভাবের তাড়নায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত কোন রকমে পড়ালেখা করেছে। পড়ালেখায় সে আর বেশি দুর এগোতে পারেনি। তাই স্বাক্ষর জ্ঞানটুকু অর্জন করে অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার বেড়েছে গাছ লাগানোর নেশা। তাই অভাবি হলেও থেমে নেয় তার গাছ লাগানো। শাহাবাজপুর ইউনিয়নের ধোবড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় সর্বপ্রথম স্কুল চত্তরে কয়েকটি ফলজ গাছ লাগালে স্কুলের শিক্ষকরা তাকে উৎসাহ দিলে সে গাছ লাগানোর ব্যাপারে আরো উৎসাহী হয়ে উঠে। পড়ালেখা বেশিদুর করতে না পারলেও তার গাছ লাগানোর নেশা আজো আছে। শুধু শিবগঞ্জ উপজেলায় নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার সাতকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লিচু, ডাব, সুপারী, কৃষ্ণচুড়া ফুলসহ বিভিন্ন জাতের ১০০টি গাছ লাগিয়েছে সে। কাশিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ এলাকায় রাস্তার পাশে বিভিন্ন জাতের ফুল ফলের গাছ লাগানো হয়েছে তার উদ্যোগে। এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার ধোবড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, পারদিলালপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ধোবড়া সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ লাগিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইব্রাহিম আলী একজন দিনমজুর। হাতে খাটে পেটে খায় তবুও থেমে নেয় তার নিজ অর্থায়নে গাছ লাগানো। যা আয় উপার্জন করে সেখান থেকে সংসারের খরচের কিছু অংশ টাকা রেখে গাছ লাগানোর কাজে খরচ করে। শুধু তাই নয় বিনা মজুরীতে সরকারী রাস্তার গাছের পরিচর্যা করে থাকে নিয়মিত। শাহাবাজপুর ইউনিয়নের পারদিলালপুর গ্রামের মৃত খোদা দিল মন্ডলের ছেলে নুর জামান, ধোবড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আজিজুল হক, মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে জিন্নুর রহমান, মৃত সাদেকুল ইসলামের ছেলে সাইদুর রহমানসহ অনেকে জানান, ইব্রাহিম খুব গরীব। অভাবের কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি। সে দিনমজুরের কাজ করে। যা আয় হয় তাতে সংসার চালাতে হিমসিম খেলেও সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে নিজ খরচে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার পাশে গাছ লাগায়। এটি ভালো উদ্যোগ। সরকারী সহায়তা পেলে সে আরো বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারতো। তার মঙ্গল কামনা করছি। গাছ প্রেমিক ইব্রাহিম আলী জানায়, গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা আমার নেশা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছি এবং সেগুলোর পরিচার্য করি আমি। ব্যাপকহারে গাছ লাগানোর ইচ্ছা আমার আছে কিন্তু গরীব মানুষ হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে বেশি গাছ লাগাতে পারছিনা। সরকারী সহযোগিতা পেলে আমি ব্যাপকহারে গাছ লাগাতে পারবো। গাছ মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশের ভারমসাম্য বজায় রাখে। গাছ সমসময় আল্লাহ পাকের ইবাদতে মসগুল থাকে। গাছ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাই আমি নিঃস্বার্থভাবে গাছ লাগাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার সামান্য আয়ের কিছু অংশ খরচ করে গাছ লাগিয়ে যেতে পারি। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নিজ উদ্যোগে মোঃ ইব্রাহিম আলীর গাছ লাগানোর বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। এটি ভালো উদ্যোগ। আমাদের বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীতে আমার তাকে সংযুক্ত করবো। ইব্রাহিম আলী যে সব জায়গায় গাছ লাগিয়েছে আমরাও সেগুলো তদারকি করবো ইনশাআল্লাহ।