সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন

যৌতুক: সন্তান নিয়ে বিপাকে গৃহবধূ

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

দারিদ্র পরিবারের মেয়ে শিল্পী বেগম। বিয়ে করেন প্রতিবেশী মেহেদুল সরদারকে। কিছুদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সে। এমতাবস্থায় যৌতুকের দাবি করে স্বামী। এ দাবি পুরণ করতে না পারায় শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। এমনকি বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নেয় বাবার গৃহে। সেখানেই কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান। এ সন্তানকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটছে গৃহবধূ শিল্পীর। সরেজমিনে বুধবার গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের তরফ আল (উত্তরপাড়া) গ্রামে দেখা হয় শিল্পী খাতুনের সঙ্গে। এসময় তার শিশুসন্তান মাফিয়া আক্তার(২) কে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বসে ছিলেন তিনি। জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে মেহেদুল সরদার আগেও একটি বিয়ে করছিলেন। সেই স্ত্রী নির্যাতনের কারনে ভেঙে যায় ঘর সংসার। এরপর গত ২০১৮ সালের ১৬ জুন তারিখে একই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে শিল্পী বেগমের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। এ বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয় শিল্পী। এরপর মেহেদুল ইসলাম বাধ সাধে যৌতুকের। দফায় দফায় যৌতুক দাবি অব্যাহত থাকে। কিন্তু গরীব পিতা মোসলেম উদ্দিনের পক্ষে যৌতুক পরণে সম্ভব হয়নি। যার ফলে শিল্পীর ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ধারাবাহিকতায় অন্তঃসত্ত্বা শিল্পী বেগমকে বাড়িতে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয় মেহেদুল। এরপর শ্বশুর-শাশুরির হাত থেকে রক্ষা হয়নি নির্যাতনের। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয় শিল্পী। সেখানে বসবাসে শিল্পীর কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটেফুটে কন্যাসন্তান। প্রসবের সময় করতে হয়েছে সিজারিয়েশন। এতে ব্যয় হয়েছে মোটা অংকের টাকা। কিন্তু খোঁজ রাখেনি স্বামী মেহেদুল। অসহায় বাবা মোসলেম উদ্দিন ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে সিজারিয়েশনের টাকা। সেই থেকে দুই বছরে ধরে নবজাতক সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে রয়েছে শিল্পী। পিতার অভাব অনটনের সংসারে শিশুসন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অবশেষে গাইবান্ধা আদালতে মামলা করে শিল্পী। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। নির্যাতিত গৃহবধূ শিল্পী বেগম বলেন, যৌতুকের দাবি পুরণ করতে না পেরে বিভিন্ন সময়ে স্বামী-শ্বশুর-শাশুরির হাতে মারডাংয়ের শিকার হয়েছি। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন ২ বছর বয়সি সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অর্ধাহারে-অনাহারে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এসব তথ্য অস্বীকার করে অস্বীকার করে অভিযুক্ত মেহেদুল ইসলামের মা মিনারা বেগম বলেন, আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে করেছে শিল্পী। এমনকি মামলাও করেছে। তারপরও সৃষ্ট ঘটনাটি মিমাংশা করার চেষ্টা করা হলে সেটি মেনে নেয়নি শিল্পী ও তার পরিবার। এ বিষয়ে ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা জানান, শিল্পী-মেহেদুলের ঘটনাটি সমাধানের জন্য একাধিকবার বসা হয়েছিল। কিন্ত তা সম্ভব হয়নি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com