ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীস্মকে বিদায় জানিয়ে বর্তমানে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে চারিদিকে। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে রাত শেষে ভোরের আলো ফোটতেই দেখা মিলছে কুয়াশাচ্ছন্ন চারদিক। শরীরে অনুভূত হচ্ছে ঠান্ডা অনুভূতি। দিনের বা রাতের প্রথমাংশে বেশ গরম কিংবা শীত অনুভূত না হলেও মাঝ রাতে ঠিকই কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমোতে হয় নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় এলাকা গুলোতে। অত্র এলাকায় নতুন করে শীত পড়তে থাকায় লেপ-তোশকসহ গরম কাপড় কিনতে শুরু করেছেন এলাকার মানুষ। এ নিয়ে বুধবার উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ও বাজার গুলো ঘুরে দেখা গেছে, অত্র উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকাতে হওয়ায় আগে-ভাগেই শীতের উষ্ণতা বেড়েছে। শীতে প্রাচীন কাল থেকেই লেপ, তোষক ও কম্বলের জুড়ি নেই। ক্রেতাদের চাহিদার যোগান দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন লেপ-তোষক কারিগরগণ। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিত্য-নতুন অনেক ধরনের শীত বস্ত্র বাজারে থাকলেও লেপ ও তোষক ব্যবহারে বাড়তি আগ্রহ রয়েছে সবার মাঝে। কারণ প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে লেপ তোষকের ব্যবহার। বলতে গেলে এটা হচ্ছে বাঙালির ঐতিয্য। দুর্গাপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি বড় বাজার রয়েছে। প্রতিটি বাজারেই ১৫ থেকে ২০ টির মত দোকান রয়েছে লেপ-তোষকের। এ নিয়ে বিভিন্ন বাঁজার গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কারিগররা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে ব্যাস্ত। দিন দিন ক্রেতাদের চাপ বেড়েই চলছে। সময়মত পণ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। এছাড়া পুরাতন কাজের চাপ তো আছেই। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন অত্র এলাকার ছোটবড় সকল কারিগররা। এখন দম ফেলার যেন সময় নেই তাদের। উপজেলার শীবগঞ্জ, ঝাঞ্জাইল, কুমুদগঞ্জ, দুর্গাপুর সদর, গাঁওকান্দিয়া, চন্ডিগড়, উৎরাইল, বিপিনগঞ্জ, কালিকাপুর বাজারসহ সকল বাজারেই শীতের পোশাক বিক্রির চাহিদা বেড়েছে। ব্যাবসায়ীরা দোকানে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শীতের কম্বলও রেখেছেন। লেপ-তোশক কারিগর বিল্লাল মিয়া বলেন, ধীরে ধীরে শীত বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে কোয়াশা দেখা দেয়। শেষ রাতের দিকে খুব ঠান্ডা পড়ে এদিকে। তাই অনেক ক্রেতারা এই ঠান্ডা নিবারনের জন্য লেপ-তোষক বানাতে আসছেন আমাদের কাছে। এছাড়া আমরা ক্রেতাদের কথা ভেবে আগাম বেশকিছু লেপ-তোষক বানিয়ে রাখার পাশাপাশি তুলা কিনে রেখেছি। ঝাঞ্জাইল বাজারের লেপ-তোষক ব্যাবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনার কারণে ব্যাবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা থাকা সত্বেও অনেক ক্রেতা সামর্থ অনুযায়ী জিনিস কিনতে পারছেন না। তাই এখন বিক্রি কম। শীতের তীব্রতা বাড়লে বিক্রিও বাড়বে আশা করি। বর্তমানে তুলার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি, তবে বড় এবং মাঝারি ধরনের লেপ-তোশককের চাহিদা বর্তমানে বেশি। প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্ডার পাচ্ছি, ক্রেতারা শীতের কথা মাথায় রেখে আগে ভাগেই অর্ডার দিয়ে লেপ-তোষক বানিয়ে নিচ্ছেন। লেপ-তোষক বানাতে সাইদুল ইসলাম বলেন, শীত আসতে শুরু করেছে, গত বছরের কাঁথা-বালিশ পুরোনো হয়ে গেছে। তাই এখন সেগুলো দিয়ে আগের মত শীত নিবারন হবে না বিধায় নতুন করে কাঁথা-বালিশ ও লেপ বানাতে দিয়েছি। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি। জেলা তথ্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকেই শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। এ বছর বর্ষাকালটা র্দীঘ মেয়াদি থাকায় শীতের প্রকোপটা স্বল্প মেয়াদী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় এ অঞ্চলে আকাশের মেঘের আনাগোনা কম। ফলে দিনে তাপমাত্রা একটু বেশি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সূর্যের তেজ ও তাপমাত্র কিছুটা কমতে শুরু করলেও অত্র অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়বে।