শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

গৃহের রানী

ইসরাত জাহান সারা:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১

নারী হলো গৃহের রানী। রুশ প্রবাদ : ১০টি নারীতে একটি আত্মা। ইটালীয় প্রবাদ : ঘোড়া ভালো হোক কি মন্দ, মারপিটের প্রয়োজন, নারী ভালো হোক কি মন্দ তার মারপিটের প্রয়োজন। স্পেনিশ প্রবাদ : কুৎসিত রমণী থেকে দূরে থাকা উচিত কিন্তু সুন্দর রমণীর ওপর ভরসা করা উচিত নয় (তামুদ্দুনে আরব-৩৭৮)। এসব প্রবাদ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মে নারীকে কিভাবে দেখা হতো তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
একজন নারীকে ইসলাম যে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে তা আর কোনো ধর্মই করেনি। ইসলামই প্রথম নারীকে প্রকৃত সম্মানে ভূষিত করেছে। সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলাম দিকনির্দেশক ভূমিকা রেখেছে। নারী ও পুরুষের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করে ইসলাম সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করেছে। জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা এবং সর্বোচ্চ সম্মান ইসলামই নারীদের দিয়েছে।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘নিসা’ নামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
প্রাক-ইসলামী যুগে নারীর যখন কোনো সামাজিক অধিকার ও সম্মানবোধ ছিল না, যখন নবজাত কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো এবং পুরুষরা নারীকে শুধু ভোগের জন্য ব্যবহার করত, তখন মহানবী সা: সৎকর্মে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদার কথা বলেন। তিনি মানুষকে জানিয়ে দিলেন, ‘পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না’ (সূরা আন-নিসা : ১২৪)।
জাহেলি যুগে নারীদেরকে মানুষ ও পশুর মাঝামাঝি একটি জীব বিশেষ মনে করা হতো। যার উদ্দেশ্য হলো মানুষের বংশ বৃদ্ধি এবং পুরুষের সেবা করা। আর এ জন্যই কন্যাসন্তানের জন্মগ্রহণ লোকসমাজে শরম ও লজ্জার কারণ ছিল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তাকে জীবন্ত কবর দিত এবং এটাকেই গৌরব ও আভিজাত্যের প্রতিক হিসেবে মনে করা হতো। এ ব্যাপারে আল কুরআনের হুঁশিয়ারি হলোÑ ‘যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’ (তাকভির : ৮-৯)।
সর্বত্র অবলা নারীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালানো হতো। জোর জবরদস্তি করে তাদের সাথে সহবাস করা হতো। তাদের ধারণা ছিল এটা যে, নারীরা হলো ভোগের সামগ্রী। নারীদেরকে তাদের নির্দিষ্ট ঋতুবর্তী সময়ে গবাদিপশুর মতো গোয়াল ঘরে বা আস্তাবলে বেঁধে রাখা হতো। মানুষ হিসেবে তাদেরকে অধিকার দিত না।
সেই অন্ধকার সময়ে জীব-জন্তু অন্যান্য প্রাণী ও নারীদের মাঝে কোনো পার্থক্য ছিল না। এই বর্বর জাতিদের অবস্থা স্বয়ং আল কুরআন থেকেই জানা যায়। নারী জন্মের পর পিতাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কুরআনে এসেছেÑ ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তান জন্মানোর সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং এক অসহনীয় মর্মাহতের মতো ভুগতে থাকে। তাকে যে কন্যা জন্মানোর সংবাদ দেয়া হয়েছে, তার লজ্জায় সে মানুষ থেকে লুকিয়ে থাকত। সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে ফেলবে?’ (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা বনি ইসরাইলের ৩১ নং আয়াতে বলেছেন, ‘দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি।’ অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের (অবলা শিশু সন্তানদের) হত্যা করা মহাপাপ।’
ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে, অত্যন্ত সম্মানজনক মর্যাদা দিয়েছে। বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। অর্থাৎ সব কল্যাণকর বিষয়ে যতটুকু পুরুষের অবদান, ঠিক ততটুকুই নারীর। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি অবদান নারীর। কিন্তু তারপরও সমাজে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না।
নবী করিম সা: স্বয়ং নারীদের শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ’ (ইবনে মাজা)।
আজ সর্বত্রই নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। এমন কোনো দিন অতিবাহিত হয় না যেদিন নারী নির্যাতনের কোনো সংবাদ পত্রপত্রিকায় স্থান না পায়। যৌতুকের দায়ে নারীকে হত্যা, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া, চুল কেটে ফেলা, টুকরো করে লাশ ফেলে দেয়ার খবরে এখন আর কেউ কান দেয় না। সবাই জানে, যে এসব ঘটনা নৈমিত্তিক। তবে কি অন্ধকার সেই সময় অন্য অবয়বে আবার ফিরে এসেছে?
ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছে সুমহান মর্যাদা। আরবিতে গৃহিণীকে বলা হয় ‘রব্বাতুল বাইত’ অর্থাৎ ঘরের পরিচালিকা, প্রতিপালিকা, অভিভাবিকা। ইসলাম একজন মুসলিমাহকে ঘরের রানী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। নারীর অধিকার রক্ষায় সূরা আন নিসায় আল্লাহ বলেছেনÑ ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো; যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন। আর যিনি দু’জন থেকে নারী-পুরুষ বিস্তার করেন’ (সূরা আন নিসা-১)। মোদ্দাকথা, পুরুষ ও নারী একই ঝরনার দু’টি তরঙ্গ মাত্র। সুতরাং নারীকে উপেক্ষা করে মানবতার জন্য যে কর্মসূচি তৈরি হবে তা হবে অসম্পূর্ণ। মানুষ হিসেবে দু’য়ের ভেতর বিশেষ পার্থক্য করা বাস্তবভিত্তিক নয়, বরং কল্পনাপ্রসূত। আল্লাহ অন্যত্র বলেনÑ ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক সাবধানী’ (সূরা আন নিসা-১৩)।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, ইসলাম নারীর যে মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছে তা বিরল। এ জন্যই বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আসুন, নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করি এবং সুখি-সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ গড়ে তুলি। লেখক: শিক্ষার্থী, কাদেরিয়া তৈয়বিয়া মহিলা মাদরাসা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com