শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

প্রতিবেশী দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে: সতর্ক বাংলাদেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। সে সময় প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে। তবে গত দুই মাস পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কমেছে কভিড-১৯ রোগের প্রকোপ। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতে আবারো ভাইরাসটির সংক্রমণ ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত থেকে যেন সংক্রমণ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় এ বিষয়ে সাতটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে সরকারে বেশ কয়েকটি বিভাগের সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্প্রতি উচ্চ পর‌্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাড়ানোসহ সাত দফা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে, বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার ব্যবস্থা, সবাইকে মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম জোরদার করা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে বেশি পরিমাণ জায়গা নিয়ে করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব স্থাপন, স্থানীয় সব পর‌্যায়ে গঠিত কমিটিকে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া, জনপ্রশাসনের সব পর‌্যায়ের কর্মকর্তাদের সুষ্ঠুভাবে টিকাদান কার্যক্রম ও করোনা মোকাবেলায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশনা দেয়া। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের সব মিশন থেকে হালনাগাদ তথ্য নেয়া হয়েছে। এতে ভারতের কেরালায় সংক্রমণের হার বেশি দেখা গেছে। অঞ্চলটি বাংলাদেশ থেকে দূরে হলেও সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্ত এলাকায় নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষার সংখ্যা ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাড়ানো এবং ট্রাকচালকদের টিকা দেয়ার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে স্থানীয় পর‌্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর‌্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, প্রায় ৬৭ হাজার প্রান্তিক প্রতিনিধি এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসারদের এ কমিটিতে সহায়তা ও পরামর্শ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারা দেশে স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রেখে করোনা মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে।
করোনার বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৈঠকে জানান, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার সংখ্যা শতকরা ৯৫ শতাংশ ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৯৯ শতাংশ খালি রয়েছে। সরকারের হাতে আড়াই কোটি টিকা রয়েছে। এখনো দৈনিক ছয় লাখ টিকা দেয়া হচ্ছে, যা আগামীতে ১০ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করা হবে। তবে জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে জানানো হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের জন্য করোনা সংক্রমণ শনাক্তে ল্যাব স্থাপনসহ প্রবাসীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমানবন্দরটিতে আরো একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে গত চার মাসে ১৪ হাজার চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভাইরাস, রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থা হলো মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, রোগী ব্যবস্থাপনা ও টিকা কার্যক্রম জোরদার করা। এসব বিষয়ে আগেও ঘাটতি দেখা গেছে। সিদ্ধান্ত নিলেও তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশে করোনার সংক্রমণ আবারো বাড়বে বলেও আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্য এশিয়া, পূর্ব ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণ আবারো বেড়েছে। এখন দেশে যে সংখ্যক রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাতে তাদের পরিপূর্ণ ব্যবস্থায় আনা সম্ভব। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি আলাদা করে রাখতে হবে। তাদের সংস্পর্শেও যারা আসবেন, সেসব ব্যক্তিকেও আলাদা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। চিকিৎসা ও রোগ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবকাঠামোগত দুর্বলতা।
নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা থাকলেও বাস্তবায়নের চিত্র ভিন্ন। যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হলো তখন কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। কাগজে-কলমে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সীমান্তও বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমি সীমান্ত বা বিমানবন্দর কোথাও সন্তোষজনক কিছু দেখিনি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে এখন পর্যন্ত সচেতন করতে বা বাধ্য করা যায়নি। করোনার সংক্রমণ যারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবেন, তাদের গুরুত্ব দিয়ে সভায় রাখেনি মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সংক্রমণ কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সরকারের তত্ত্বাবধানের মাত্রা কমেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে যেসব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়, তাতে বেশির ভাগ সময়েই বাস্তবায়নের দুর্বলতা থাকে। কখন কোন ধরন দেশে প্রবেশ করবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব হয় না। তাই যখন কোনো নতুন ধরন চলে আসে, তখন কিছুই করার থাকে না। এজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিত। তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com