গোপালগঞ্জ। নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরো বাংলাদেশ। কারণ, এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থানও গোপালগঞ্জ। জেলাটি নিন্মাঞ্চল হওয়ায় নদী, নালা, খাল-বিলে পরিপূর্ণ। দেশ স্বাধীনের আগে এখানকার অধিকাংশ মানুষ ছিলেন দরিদ্র ও নি¤œ-আয়ের। তাই, দেশ গঠনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু জন্মস্থানের উন্নয়নেও মনোনিবেশ করেছিলেন, যা এখনো চলমান রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর থমকে যায় উন্নয়নের যাত্রা। ফলে আর্থ-সামাজিক, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে পড়ে জেলাটি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় পালা বদল। তবে, ২০০৮ সাল থেকে গত ১২ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন এ এফ এম এহিয়া চৌধুরী। বর্তমানে জেলার জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রথম মহিলা জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। জেলায় ৫টি উপজেলা, ৫টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৬৭টি ইউনিয়ন এবং ৬৫৩টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এ জেলার উত্তরে ফরিদপুর, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট, পূর্বে মাদারীপুর ও বরিশাল এবং পশ্চিমে নড়াইল জেলা অবস্থিত।
জানা যায়, কলকাতার জ্ঞানবাজার নিবাসী প্রীতিরাম দাস ১৮০০ সালে অনুর্বর, অসমতল মকিমপুর পরগনার (বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার আওতায়) জমিদারি ১৯ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন। কালক্রমে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। এই বংশের সন্তান গনেশ ওই অঞ্চলের জমিদার হন। খাটরা এস্টেটের প্রজারা রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এস্টেটের রাজগঞ্জ বাজারের নাম বদল করে রানীর নাতি তথা গনেশের একমাত্র পুত্র নব গোপালের নামানুসারে রাখতে চান। নব গোপালের নামের ‘গোপাল’ ও রাজগঞ্জের ‘গঞ্জ’ এই মিলিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে জেলায় শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত সব উন্নয়ন চলছে বাধাহীন। মহাসড়ক, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নতুন-নতুন ভবন, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। টুঙ্গিপাড়ায় নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স, পর্যটন মোটেল, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ কামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কোটালীপাড়ায় নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সদরেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়। প্রকৌশল শিক্ষার প্রসারে গোপালগঞ্জ শহর-সংলগ্ন ঘোনাপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও অসংখ্য প্রকল্পের কাজ চলমান। গোপালগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের একটিতে (গোপালগঞ্জ-৩) রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আসন থেকে তিনি ৭ বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম-সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি এ আসন থেকে ৮ বার নির্বাচিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ-১ আসনে রয়েছেন দলের আরেক প্রেসিডিয়াম-সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি এ আসন থেকে ৫ বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের কল্যাণে গোপালগঞ্জকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
জেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও কমেছে। ২০১২ সালে চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। চালু হয়েছে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শেখ সেলিম ল’ কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, পিটিআই, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ও মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোটালীপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড)। সম্প্রতি শেষ হয়েছে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নির্মাণ কাজ। চলছে ৫০ আসনবিশিষ্ট শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজের নির্মাণ কাজ। এছাড়াও সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ১০ তলা কমার্স-ভবন এবং ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস, ১৮টি বেসরকারি কলেজে ৪ তলা ভবন, ২টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৩০টি হাইস্কুল, ১৮টি ৪ তলা মাদ্রাসা ভবন ও শেখ রাসেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। সিটি স্ক্যানারসহ হাসপাতালের চিকিৎসা-সরঞ্জামাদির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাকি চার উপজেলায় ৪টি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হয়েছে। সম্প্রতি কাশিয়ানীর ব্যাসপুরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেবাদান চলছে জেলার ১৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে। জেলা শহর সংলগ্ন ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম চক্ষু হাসপাতাল ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’। একই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্ল্যান্ট। যেখানে গোপালগঞ্জের প্রায় ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় নির্মিত হয়েছে ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে গোপালগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে রেল যোগাযোগ। এখান থেকে রাজশাহী ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রশস্ত হয়েছে পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে সংযোগ সড়কও। টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী এলাকায় মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে শেখ লুৎফর রহমান সেতু। এতে গোপালগঞ্জের সঙ্গে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ সহজ হয়েছে। নির্মিত হয়েছে চাপাইল সেতু।, যা গোপালগঞ্জের সঙ্গে খুলনা ও নড়াইল জেলাকে সংযোগ করেছে। হয়েছে গৌরনদী-আগৈলঝড়া-পয়সারহাট-কোটালীপাড়া-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। যা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ করেছে। নির্মিত হয়েছে গেড়াখোলা সেতু, সাতপাড় সেতু, জলিরপাড় সেতু। চলছে কালনা সেতু নির্মাণ কাজ; যেটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু। চলছে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-মোল্লাহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্ততা উন্নয়নের কাজ। এছাড়াও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জেলা মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীতে খনন করে বরিশাল-খুলনা নৌ-রুটের নাব্য ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মধুমতি নদী ও বর্ণির বাঁওড়সহ জেলার বিভিন্ন জলাধারের তীরে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত পাঁচুড়িয়া-টুঙ্গীপাড়া ১৭ কিলোমিটার নৌরুট খনন করে চালু করা হয়েছে এবং টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতী লঞ্চঘাট এলাকায় মধুমতি নদীর তীরে নির্মিত হয়েছে ল্যান্ডিং স্টেশন ও স্টিমার-ঘাট। ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে গোপালগঞ্জ জেলা। ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার-প্ল্যান্ট চালু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। স্থাপন করা হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। জেলা সার্ভার স্টেশন, ফায়ার-সার্ভিস স্টেশন, এনএসআই ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ১২-তলাবিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন। সদর ও কোটালীপাড়া থানায় ৪ তলাবিশিষ্ট থানা-ভবন। বিভিন্ন ইউনিয়নে হয়েছে ভূমি অফিস ভবন। জেলা হেডকোয়ার্টারে শেষ হয়েছে আনসার-ভিডিপি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার্স কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ।
চালু হয়েছে বাংলাদেশে বেতারের ১০ কিলোওয়াট এফ এম বেতার কেন্দ্র। সেখান থেকে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক চর্চায় নির্মিত হয়েছে জেলা শিশু একাডেমি ভবন, শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি অডিটোরিয়াম, কোটালীপাড়ায় উনশিয়া গ্রামে কবি সুকান্তের বাড়িতে মিলনায়তন এবং টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া মিলনায়তন। বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। চিত্ত-বিনোদনের জন্য গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। সম্প্রতি শেষ হয়েছে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাড সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ।
জেলার ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে মধুমতি লেকের পাড়ে নির্মিত হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল অ্যান্ড জিমনেসিয়াম এবং মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামেও গ্যালারি সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। চিত্ত-বিনোদনের জন্য গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। সম্প্রতি শেষ হয়েছে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাড সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে জেলার বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। কোটালীপাড়ায় হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। পাঁচ উপজেলাসহ জেলায় ৬টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের করে দেওয়া হয়েছে বীর নিবাস। জেলার কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে কৃষি গবেষণা, ধান গবেষণা ও পরমাণু কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে তারাইল পাঁচুড়িয়া বন্যা-নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প। সম্প্রতি গোপালগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী বৈরাগীর খালে পানি-প্রবাহ শুরু হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ জেলার ছোট ছোট বিভিন্ন নদী, খাল ও জলাশয়ের পুনঃখননের কাজ চলছে। সেচ প্রকল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকায় গোপালগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকও সহজে ন্যায্যমূল্যে তার উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করতে পারছেন।
গোপালগঞ্জ পৌর এলাকা বর্ধিত করা হয়েছে। ৯টি ওয়ার্ড থেকে ১৫টি ওয়ার্ডে উন্নীত করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা মধুমতির খাল লেকে রূপান্তর হয়েছে; যেটি শহরবাসীর চিত্ত-বিনোদনের বড় একটি ক্ষেত্র। মধুমতি লেকের উপরে ফেন্সি ও দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি লেকটির পুনঃখননসহ সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের পুরনো নজরুল পাবলিক লাইব্রেরিকে আধুনিকায়ন করে নতুন আঙ্গিকে চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান চর্চায় হাজির হন লাইব্রেরিতে। বড় ধরনের কোনো শিল্প-কারখানা না থাকলেও গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে সম্প্রতি ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্র ও কুটির-শিল্প সম্প্রসারিত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে সরকার জমি অধিগ্রহণ করায় জেলার বহু পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। উন্নয়নের প্রভাবে এখানকার জমির মূল্যও কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের নানা সহায়তা কার্যক্রম ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকায় জেলার অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।
জনসেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘কুইক সার্ভিস ডেলিভারি পয়েন্ট’ স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও সার্কিট হাউসে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত করতে এবং শিশু-কিশোরদের আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে চলছে নানা কার্যক্রম। এরই মধ্যে গৃহহীন ও ভূমিহীন ১৪’শ ৩টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে। আরও ৬শ’ ১০টি ঘরের নির্মাণ-কাজ চলছে। এছাড়াও গৃহহীন আরও ১ হাজার পরিবারকে ঘর করে দিয়েছে সরকার। এসব ছাড়াও জনগণের কল্যাণে জেলায় সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে; যার সুফল পাচ্ছেন গোটা গোপালগঞ্জবাসী। আরও অনেক নতুন নতুন কল্যাণকর ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এক নজরে গোপালগঞ্জ জেলা: জেলার আয়াতন ১ হাজার ৪৮৯ দিশমিক ৯২ বর্গকিলোমিটার। নির্বাচনী এলাকা রয়েছে ৩টি। জনসংখ্যা ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪১৫ জন (২০১ সালের আদমশুমারী)। পৌরসভা আছে ৪টি। ইউনিয়ন ৬৭টি। মোট গ্রাম ৯০৫টি। নদী ১১টি। বিল ৩ টি। বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১টি। মহাবিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২১টি, প্রাতমিক বিদ্যালয় ৭৬৫টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫৭টি। মাদ্রাসা ৪২টি। মেডিকেল কলেজ ১টি। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ২ এবং পিটিআই আছে ১টি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩২টি। এতিমখানা ১০৬টি। জেলায় স্বাক্ষরতার হার ৫৮.১ শতাংশ ( ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। হাসপাতাল ৮টি। জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স, হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থ স্থান ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ী, কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা, জয় বাংলা পুকুর-৭১ এর বধ্যভূমি, বর্ণি বাওড়, লাল শাপলার বিল ও পদ্ম বিল।
জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্না বলেন, গোপালগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এটা ঠিক। তবে জেলায় কর্মসংস্থানের জন্য কোনো প্রকল্প বা কলকারখানা গড়ে উঠেনি। এজন্য জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি জন্য ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও কল কারখানা তৈরি করা প্রয়োজন। এতে জেলায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। গোপালগঞ্জ জেলাকে ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জেলা উদীচী সংসদের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১২ বছরে জেলার ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেনি। গোপালগঞ্জ শহরের সড়কগুলো প্রশস্ত নয়। এতে চলাচলে অসুবিধা হয় সাধারণ মানুষের। রয়েছে পানির সমস্যা। বিশেষ করে গরমের সময় নোনা পানির কারণে ব্যাপকভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এসব সমস্যা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গোপালঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, একটি জাতির বা অঞ্চলের উন্নয়ন করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। তবে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য জেলায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রয়োজন। এছাড়া গোপালগঞ্জকে সিটি করপোরেশন করা দরকার। এতে জেলার মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে।- রাইজিংবিডি.কম