বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কালীগঞ্জে থামছে না কৃষি জমির মাটি কাটা কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ সারেংকাঠী ও গুয়ারেখা ইউনিয়নে ঢল নেমেছে স্বচ্ছ মনের প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ হকের পক্ষে শেরপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র খোকনের দায়িত্ব গ্রহণ অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা বশির আহমদ উপজেলার পর এবার সিলেট বিভাগেরও শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা প্রধান কালীগঞ্জের আল-জাছির হলেন দেশ সেরা কালিয়ায় মক্কীনগর কবরস্থানের উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল ঈশ্বরগঞ্জে প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা আরমান হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন

মহৎ চরিত্র

মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

অনুকূল কিংবা প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতিতে যিনি ছিলেন আদর্শের প্রতীক। যার আদর্শে কথা ও কাজের অতুলনীয় সমন্বয় ছিল। মানবতার কল্যাণে যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি আর কেউ নন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের সুমহান আদর্শের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন : ‘ওয়া ইন্নাকা লাআলা খুলুকিন আজিম’ অর্থাৎÑ আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন (সূরা আল-কলম-৪)। ‘খুলুকিন আজিম’ মানে কী? হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বীন। কেননা, আল্লাহ তায়ালার কাছে ইসলাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দ্বীন নেই। হজরত আয়েশা রা: বলেন, স্বয়ং কুরআন রাসূলুল্লাহ সা:-এর ‘মহৎ চরিত্র’। অর্থাৎ কুরআন পাক যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। হজরত আলী রা: বলেন, ‘মহৎ চরিত্র’ বলে কুরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কুরআন শিক্ষা দিয়েছে (কুরতুবি)। ‘খুলুকিন আজিম’ বলতে ইসলাম, দ্বীন অথবা কুরআন মাজিদকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ হলো, তুমি ওই মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছো, যার আদেশ মহান আল্লাহ তোমাকে কুরআনে অথবা ইসলামে দিয়েছেন। অথবা এর অর্থ হলো, এমন শিষ্টাচার, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিশ্বস্ততা, সততা, সহিষ্ণুতা এবং দানশীলতা ইত্যাদিসহ অন্য যাবতীয় চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলি যার অধিকারী তিনি নবুয়তের আগেও ছিলেন এবং নবুয়তের পর যা আরো উন্নত হয় ও সৌন্দর্য-সমৃদ্ধ হয় (তাফসিরে আহসানুল বায়ান)।
রাসূলুল্লাহ সা: নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন হজরত আয়েশা রা:। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র। (মুসনাদে আহমাদ-৬/৯১) হজরত আনাস রা: বর্ণনা করেছেন, আমি ১০ বছর যাবত রাসূলুল্লাহ সা:-এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোনো কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোনো কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোনো কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন (বুখারি-৬০৩৮, মুসলিম-২৩০৯)? রাসূলুল্লাহ সা:-এর সত্তায় আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি (মুসনাদে আহমাদ-২/৩৮১)।
জাহেলি যুগে লোকেরা মিথ্যা কথায় অভ্যস্ত ছিল। কথাবার্তায় মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে পারত না। মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষী দেয়া কিংবা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে অপরাধবোধ তাদের অন্তরে লালিত হতো না। বিশ্বনবী সা: নিজেকে সত্যবাদী হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। জীবনে একটি বারের জন্যও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নেননি। তাই আরবের মানুষেরা তাঁকে আস-সাদিক উপাধিতে ভূষিত করেছিল। আল্লাহর রাসূল সা:-এর উদারচিত্ত, বিরুদ্ধবাদীদের হৃদয় ও মন জয় করার সুযোগ তৈরি করে দিতো। রাসূল সা: তায়েফে রক্তাক্ত হয়েছেন; তবুও তাদের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ লালন করেননি। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করেছেন। মক্কার কাফির মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সা: ও সাহাবায়ে কেরামদের কত কষ্ট দিয়েছিল। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি তাদের উদ্দেশে ক্ষমার ঘোষণা জানিয়ে দিলেন। দ্বীনের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও অমুসলিমদের জন্য বদ দোয়া না করে কল্যাণ ও হেদায়াতের জন্য দোয়া করতেন।
আল্লাহর রাসূল সা: খুব সাদামাটা জীবনের অধিকারী ছিলেন। তাঁর আদর্শের অনন্য দিক ছিল, তিনি বিনয়ী ছিলেন, যা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। হজরত আবু মাসউদ রা: বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে কথা বলতে এলো। তখন ভয়ে সে কাঁপছিল। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, শান্ত হও। আমি কোনো রাজা-বাদশা নই। আমি একজন সাধারণ নারীর সন্তান (ইবনে মাজাহ : ৩৩১২)। হজরত আয়েশা রা:কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সা: ঘরে কী করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, তিনি পরিবারের কাজে সহযোগিতা করতেন (সহিহ বুখারি-৬৭৬)। সূরা আল-কলমের চতুর্থ আয়াতের দুটি অর্থ : এক. আপনি নৈতিক চরিত্রের সর্বোচ্চ মানের ওপর অধিষ্ঠিত। তাই আপনি বান্দাদের হিদায়াতের কাজে এত দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছেন। একজন দুর্বল নৈতিক চরিত্রের মানুষ এ কাজ করতে সক্ষম হতো না। দুই. কাফেররা আপনার প্রতি পাগল হওয়ার যে অপবাদ আরোপ করছে, তা মিথ্যা হওয়ার আরেকটি সুস্পষ্ট প্রমাণ আপনার উন্নত নৈতিক চরিত্র। কারণ উন্নত চরিত্র ও মস্তিষ্ক বিকৃতি একসাথে একই ব্যক্তির মধ্যে থাকতে পারে না (তাফহিমুল কুরআন)।
মহান চরিত্রের অধিকারী রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনাদর্শই আমাদেরকে মুক্তির মনজিলে পৌঁছাতে পারে। তাঁর অনুপম ও শাশ্বত জীবনাদর্শ অনুসরণই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার সুনিশ্চিত গ্যারান্টি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর আদর্শকেই আমাদের জন্য একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে জানিয়ে দিয়েছেন : ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একমাত্র আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ’ (৩৩. সূরা আল-আহজাব-২১)। লেখক: সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com