ধারের টাকা ফেরত না দিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে দিনাজপুরের চাল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন নাম জড়িত। আনোয়ার শহীদ দিনাজপুরে চাকরি করার সময় জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এ ঘটনায় জাকির হোসন ও তার সহযোগী সাইফুল ইসলামকে গ্রফতার করেছে র্যাব-২। সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত আনোয়ার হোসেন ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে মো. জাকির হোসেনের পরিচয় হয়। পরে এ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। দিনাজপুরে আনোয়ার জমি কেনার সময় জাকির তাকে সহযোগিতা করেন। জাকির জমির দালালিও করেন। জাকিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আনোয়ার বিভিন্ন সময় তাকে ১২ লাখ টাকা ধার দেন। মূলত এই টাকা ফেরত না দিতে এবং দিনাজপুরের জমিজমা আত্মসাৎ করতে আনোয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জাকির।’ তিনি বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন অবসরের পর ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। একবছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে ভিকটিমের সহযোগিতা চান। আনোয়ার তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানান। এ নিয়েও জাকিরের ক্ষোভ ছিল।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আনোয়ারকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন জাকির। যাতে তার টাকা ফেরত দিতে না হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী জাকির তার চালের আড়তের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে হত্যার নকশা তৈরি করেন। সাইফুল ইসলাম একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। সাইফুল জাকিরের প্রস্তাবে রাজি হন।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘আনোয়ার হোসেনকে হত্যার উদ্দেশে জাকির ও সাইফুল ১১ নভেম্বর সকালে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসেন। তারা কমলাপুরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই দিন বিকালে আনোয়ারকে ফোন করেন জাকির। তারা দেখা করেন শ্যামলীতে। এরপর মিরপুরে যান। সেখানে কিছু কেনাকাটা করেন। এরপর সেখান থেকে ফের দুজনে শ্যামলী আসেন। তাকে হলি লেন গলিতে নিয়ে যান জাকির। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে ছিলেন সাইফুল। জাকির গলিতে যাওয়ার পর সাইফুলকে চোখের ইশারা দিয়ে আনোয়ারকে দেখিয়ে দেন। এরপর সাইফুল তাকে ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাত করার পর জাকির প্রথমে আনোয়ারকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেন। অন্য পথচারীরা আসার পর তিনি চলে যান।’ তিনি আরও জানান, সাইফুল ও জাকির দুজনেই কমলাপুর হোটেলে যান। সেখান তারা মিলিত হন। রাত ৮ টায় কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুর যাওয়ার টিকিট নেন। কাউন্টারে এসে দিনাজপুরের এক পরিচিত ব্যক্তি জাকিরকে জানান, আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। তখন জাকির সন্দেহ এড়াতে তার টিকিট সময় চেঞ্জ করে ৯টায় নেন এবং আনোয়ারকে দেখতে যান।’
আনোয়ার শহীদ গম গবেষণা কেন্দ্রে ১৯৭৬ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে পরিচালক পদমর্যাদায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল জয়দেবপুর।