শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন গলার কাঁটা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কেন্দ্রে উপেক্ষিত হওয়ায় নির্বাচনি মাঠে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। এমনকি অনেক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বিজীয় হয়েছেন। নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন। তারা চরম বিপাকেও পড়ছেন। আর এ সুযোগে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্য দলের প্রার্থীরা জয় পেয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে না পারায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নানা ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ-অনেক জায়গায় শক্তিশালী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে দুর্বল প্রার্থী মনোনীত করায় এমন ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা নৌকার ভরাডুবি ঘটাতে বেছে বেছে দুর্বল প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে নামিয়ে দিচ্ছে।
অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী মনে করেন, ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে দলের প্রতীক প্রদানের ফলে এই নির্বাচনের আমেজ অনেকটা হারিয়ে গেছে। আগে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন তারা স্থানীয়ভাবে পরিচিত এবং জনগণের কাছে শ্রদ্ধেয় ছিলেন বলেও কেউ কেউ দাবি করে থাকেন। এটি একটি আপেক্ষিক বক্তব্য। কেননা স্থানীয় সরকার এবং গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে। গ্রামে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শাসন আগের মনোবৃত্তিতে নেই। একসময় হয়তো সেবা ও জনহিতকর কাজ করার জন্যই কেউ কেউ বারবার ইউনিয়ন কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। কিন্তু সেই যুগে ইউনিয়ন কাউন্সিলের জনহিতকর কাজের পরিধিও খুব বেশি ছিল এমনটি বলার মতো নয়। কটা রাস্তা বা পুল একটি ইউনিয়নে ৫ বছরে হতো সেই প্রশ্ন করা হলে মনে হয় মাথার চুলে হাত দিয়ে স্মরণ করতে হবে যে তখন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন চেয়ারম্যান ৫ বছরে কী করতে পেরেছিলেন। এখন তো সেই যুগ নেই। সুতরাং আগের ইউপির উন্নয়ন গতি এবং বর্তমান ইউপির কর্মকা-ের গতিধারার মধ্যে এখন ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ সমাজেরও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ফলে আগের অবস্থা দিয়ে বর্তমান এবং ইউনিয়ন কাউন্সিলকে দেখা বা বোঝা বোধহয় যথাযথ হবে না। গ্রামীণ সমাজ ও মানসিকতার যে পরিবর্তন তাতে নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, রাজনীতি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে। এখন রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানুষের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, এনআইডি, সরকারি নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বয়স্ক, বিধবা ভাতা, কাবিখা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি নানা ধরনের অর্থ-সংশ্লিষ্ট কাজ এই সংস্থার মাধ্যমে হয়ে থাকে। সুতরাং এখন যদি আমরা ৬০-৭০ বা ১০০ বছর আগের ইউনিয়ন কাউন্সিল এবং সেই সময়কার চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জনদরদি ভাবনা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি তাহলে নস্টালজিয়ার বেশি কিছু দিতে পারবে না। অথচ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী করার জন্য যে মানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আইন ও বিধান থাকা প্রয়োজন ছিল তার বিষয়ে আমাদের কি কোনো ভাবনা-চিন্তা কখনো পরিলক্ষিত হয়েছে? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগতা, রাজনৈতিক দীক্ষা, ব্যক্তিগত সততা, যোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনার যে অপরিহার্যতা দাবি করে সেটি কি দলগুলো বিবেচনায় নিয়েছে? অবশ্য শুধু ইউনিয়ন কাউন্সিল কেন, এর উপরের জনপ্রতিনিধি হওয়ার সংস্থাগুলোতেও এখন যাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে কিংবা যারা নির্বাচিত হয়ে আছেন তাদেরই বা শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা ইত্যাদি কতটা মনোনয়ন ও ভোটের জন্য বিবেচিত হয়ে থাকে সেটিও একটি মস্ত বড় প্রশ্ন। সর্বত্রই শিক্ষা, যোগ্যতা, সততা, দক্ষতার বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকছে, প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থবিত্ত, সমর্থকগোষ্ঠী এবং প্রভাব-প্রতিপত্তিতে। এটি ইউনিয়ন কাউন্সিলর একজন মেম্বার পদ থেকে মহান জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সব স্তরের জনপ্রতিনিধির সংস্থার ব্যাপারেও ঘটছে।
ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা না করাই ভালো ছিল। কিন্তু না দিলেও বা খুব বেশি হেরফের হতো এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় কিনা জানি না। তাতে চেয়ারম্যান পদ ও দলের একজনকে মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি এবার কাজে লাগেনি এই কারণেই যে, অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সুতরাং আওয়ামী লীগ এমন অবস্থায় একজনকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার একচেটিয়া সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এই মরিয়া হওয়াটি দলের অন্যদের ক্ষেত্রেও তদবিরের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে। সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দ-অপছন্দের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দ-অপছন্দের দ্বন্দ্ব ঘটেছে। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন। বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভও করেছেন। এই জয়ের পেছনে প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থবিত্ত, গ্রুপিং ইত্যাদি যেমন কাজ করেছে, নেপথ্যের কোনো কলকাঠিও কেউ কেউ নেড়ে থাকতে পারেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে ত্যাগী অনেকেই মেম্বার পদেও দলের সমর্থন খুব একটা পাননি। তাছাড়া এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এখন পদ-পদবি নিয়ে আদর্শের চেয়েও প্রভাবশালী ও বিত্তশালীদের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব পেয়ে বসেছে। অনেকের মধ্যে এখন উচ্চাকাক্সক্ষাও বেড়ে গেছে। দল তাদের কাছে একটি সাইনবোর্ড, আদর্শ নয়, শৃঙ্খলা মেনে চলাও নয়। যোগ্যদের মূল্যায়ন করাও এখন তৃণমূল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে যারা নিজেদের পরিচিত করছে তাদের বেশিরভাগেরই ভাবমূর্তি লোকালয়ে খুব বেশি নেই। কিন্তু তারা ভাবমূর্তিসম্পন্ন কাউকে দলীয় কর্মকা-ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতেও রাজি নয়। এর ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এখন মেধাবী, যোগ্য, প্রতিশ্রুতিশীল, আদর্শবান, সুশিক্ষিত তরুণদের খুব বেশি সংযোজন ঘটছে না। দলে এখন সংখ্যায় অনেককে দেখলেও যোগ্যতায় প্রতিযোগিতা করার ক্ষেত্রে বিরাট শূন্যতা বিরাজ করছে। রাজনীতির এই নীতিহীনতা, আদর্শহীনতা, বিত্তবৈভবের প্রতি লোভ-লালসা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বকে হানাহানি-মারামারিতে টেনে নিয়ে যায়। সেটি ঘটতে দেখা গেছে এবারের ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে। এখনই যদি এটির রাশ টেনে না ধরা হয়, মেধাবী, যোগ্য, শিক্ষিত এবং দলীয় আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবানদের তুলে আনার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে দলের ভবিষ্যৎই শুধু নয়, জাতির অস্তিত্বও সংকটের মুখে পড়তে পারে। যেসব নেতা এরই মধ্যে আদর্শের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বোধহয় গুডবাই বলার দিন এসে গেছে। অন্যদিকে যারা কমবেশি দলের প্রতি অনুগত থেকে এখনো নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরই ওয়েলকাম করার সময় এসেছে। আওয়ামী লীগ কি এভাবেই ভাববার প্রয়োজন মনে করছে?’
৪৮৬ ইউপিতে জয়ী নৌকা, স্বতন্ত্র ৩৩০ ইউপিতে: চলমান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয়ধাপের ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেশিরভাগ জায়গায় দলটির নৌকা প্রতীকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সারাদেশে অনুষ্ঠিত ৮৩৪ ইউপি ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৪৮৬টি ইউপিতে জয় পেয়েছে। যার মধ্যে আবার ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান হয়েছেন ৮১জন। স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়েছেন ৩৩০ জনের মত প্রার্থী।ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত। কেননা বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ১৮জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপা ১০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৪টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি ও খেলাফত মজলিশ ১টি ইউপিতে জয় পেয়েছে। দ্বিতীয়ধাপে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগে গত ২১জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমধাপের দু’দফায় অনুষ্ঠিত ৩৬৪ ইউপির মধ্যে অধিকাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিলো। যদিও ওই ধাপেও ৭৩জন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হন। ভোট পড়েছিলো প্রায় ৭০ শতাংশের মতো। আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১০০৪ ইউপির মধ্যে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছে ১০০জন। এখন পর্যন্ত তিনধাপে ২৫৪জন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ভোটকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ৭জনের প্রাণহানি ঘটে। ইউপি ভোটে এ পর্যন্ত ৩৭জনের প্রাণহানি হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com