মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করবে পরমাণু প্রযুক্তি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

পারমাণবিক শক্তির নাম শুনলেই অস্ত্র বা বোমার কথা চোখের সামনে ভেসে উঠে। মনে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আমেরিকান বাহিনীর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। বাংলাদেশও সেই পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পথেই হাঁটছে। তবে তা কোনো প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলার জন্য নয়, বরং মানুষের কল্যাণে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল পচনের হাত থেকে রক্ষা করতেই পরমাণু শক্তির রেডিয়েশন ব্যবহার করা হবে। বিশেষ এক প্রযুক্তির মাধ্যমে এ রেডিয়েশন ব্যবহার করবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা। তারওপর প্রতিবছর কৃষকের অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে, শুধু সংরক্ষণের অভাবে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের ফলে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, উপকরণ ব্যবহারে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, ভূমির স্বাস্থ্য ক্ষয়, সংগ্রহোত্তর ক্ষতি, সংরক্ষণাগারের অভাব, উৎপাদন উপকরণসমূহে প্রয়োজনীয় ভর্তুকির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে জনগণের খাদ্য চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলোর সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ওপর উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে নষ্ট হলে দেশ খাদ্য চাহিদা মেটাতে পড়বে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে।
গামা রেডিয়েশন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কি না, এ নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু আমরা যে মাত্রায় এটা ব্যবহার করি, আমরা বীজে যে রেডিয়েশন ব্যবহার করি, তাতে ক্ষতির ঝুঁকি নেই। বীজ থেকে রেডিয়েশন বের হলে তা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। পরমাণু রেডিয়েশন ব্যবহারের ফলে ফসল নষ্টের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামবে। পেঁয়াজ উৎপাদনশীন এলাকায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হলে কৃষকের যেমন লোকসান কমবে, সঙ্গে বাণিজ্যিক কৃষিতে ব্যবসায়ীরা লাভবানও হবে। পুরো অর্থনীতির চিত্রই তখন বদলে যাবে। সরকারও প্রচুর লাভবান হবে
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে কৃষকের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করা যায়, সে উপায় বের করতেই কাজ করছে বিনা। দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে ফসল রক্ষার নতুন পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে সংস্থাটি। সেটি হলো আধুনিক বিকিরণ প্রযুক্তি (রৎৎধফরধঃরড়হ ঃবপযহড়ষড়মু)। বিনার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বীকৃত ও কার্যকর এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের এত বিশাল ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব। এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ চলছে। ‘বঙ্গবন্ধু গামা ইরাডিয়েশন সেন্টার’ স্থাপন শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় কৃষিপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমানোর নতুন পন্থা বাস্তবায়িত হবে মাঠ পর্যায়ে।
বিনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বের সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কম-বেশি দেখা যায়। প্রতিবছর ফসল সংগ্রহের পর ক্ষতির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্যের যোগানের সমস্যাগুলো যে কোনো দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য। কৃষিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো, প্রতি বছর মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কৃষিপণ্যের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি উপাত্ত (বিবিএস, ২০১৯) অনুসারে, দেশে কেবল পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ, আলু ৫-৮, ধান ৮-৯, ডাল ৫-৬ এবং আমের বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, যা অর্থের বিবেচনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
বিনা আরও বলছে, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়, যার মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে তোলার পর স্বীকৃত ও স্বল্পমাত্রায় কার্যকর আধুনিক পরমাণু বিকিরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষতি ৯০-৯৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। একইভাবে দানাদার অন্যান্য শস্য, আদা, রসুন, কাচামরিচ, ফল ও শাক-সবজি ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রেও পরমাণু প্রযুক্তিটি কার্যকর।
পরমাণু বিকিরণ পদ্ধতিতে মোটেই স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। এটা কোনোভাবেই তেজষ্ক্রিয় পদার্থ তৈরি করে না। এটা নিরাপত্তা বলয়ে একটা ক্যাপসুলের মতো থাকবে, প্রটেকশন থাকবে ১০ মিটারজুড়ে, এতে ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা মাটির নিচে থাকবে, যেখানে ব্যবহার হবে জার্মানির প্রযুক্তি। কানাডাসহ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাগুলোর কারিগরি সহাযোগিতায় এটা করা হবে
এটি একটি ভৌতিক প্রক্রিয়া, যেখানে বাল্ক বা প্যাকেটজাত কৃষিপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বিকিরণ (গামা রে, এক্স-রে কিংবা ইলেক্ট্রন বিম) প্রয়োগ করা হয়। প্রযুক্তিটি কৃষিপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে প্রয়োগ করলে ক্ষতিকর পোকা ও কীটপতঙ্গ, পরজীবী, রোগজীবাণু এবং অণুজীব ধ্বংস হয় ও পণ্যের পচন রোধ হয়ে সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। প্রক্রিয়াটি খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ খাদ্য, কোয়ারেন্টাইন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে বাধ্যতামূলকভাবে বহুল ব্যবহৃত।
এশিয়ার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশেও দিন দিন প্রযুক্তিটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। প্রায় চার যুগ ধরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনস্থ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারে দুটি বিকিরণ প্ল্যান্ট ব্যবহার করছে। মূলত প্ল্যান্ট দুটি রপ্তানিমুখী ওষুধ শিল্প ও মসলাজাতীয় পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সেবা দিচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় কম। অপরদিকে, দেশে কৃষিপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে প্রযুক্তিটির ব্যবহার নেই বললেই চলে।
উল্লেখ্য, ভারত ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আম রপ্তানিতে এবং অস্ট্রেলিয়া পার্শ্ববর্তী দেশ নিউজিল্যান্ডে গ্রীষ্মকালীন ফল ও সবজি রপ্তানিতে কোয়ারেন্টাইনের শর্তানুযায়ী কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে পরমাণু বিকিরণ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খাদ্য বিকিরণ সুবিধা রয়েছে চীনে। খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারীও চীন।
বিনা জানায়, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রযুক্তিটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশে কৃষিপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে বিকিরণ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করার জন্য একটি গামা ইরাডিয়েশন সেন্টার স্থাপন জরুরি। সেজন্য পাইলটিং হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত স্থান পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ১৬০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি গামা ইরাডিয়েশন সেন্টার স্থাপনে উল্লিখিত প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com