বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে-মাফরুজা সুলতানা সুইজারল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস হাফেজা আসমা খাতুনের ইন্তেকালে বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক দেশের মেধাবী ও আদর্শবান লোকদেরকে দলে আনার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন: তারেক রহমান গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’ ট্রাম্পের কাছে বাস্তববাদী পদক্ষেপ আশা করছে ইরান ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার দিন-তারিখ ঠিক করে সংস্কার করা অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ নয়:খন্দকার মোশাররফ রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: ফখরুল বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে লুৎফুজ্জামান বাবর

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য তিন গ্রাম

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার করা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন একটি ওয়ার্ডের তিনটি গ্রামের মানুষ। ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ঘন ঘন টহলে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নেকমরদ ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফলে বিজয়ী হন রাজেন্দ্র নাথ। এই ফলাফল মেনে না নিয়ে পরাজিত প্রার্থী মতিউর রহমান পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানান। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার দাবি মেনে নেননি। এতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবরুদ্ধ ও প্রশাসনের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন মতিউরের কর্মী সমর্থকেরা।
ওই ঘটনায় সহিংসতার অভিযোগ এনে ভোটের পরের দিন শুক্রবার সকালে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কনিষ্ঠ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার হেলালউদ্দিন বাদী হয়ে পরাজিত ইউপি সদস্যকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩৫০ জনকে আসামি করে রাণীশংকৈল থানায় মামলা করেন। মামলার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন নেকমরদ ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের ময়মনসিংহ পাড়া, টাঙ্গাইল পাড়া ও জোতপাড়া এলাকার পুরুষেরা। এসব গ্রামে এখন থমথমে অবস্থা। গ্রেপ্তার আর পুলিশের ভয়ে কোনো পুরুষ বাড়িতে থাকছে না। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ৩টি গ্রাম। এতে স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামের নারীরা। মামলার পর গত ১৪ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘনশ্যামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে আবুল হোসেন (৪০), শাহ আলম (৬০), আব্দুল হালিম (৩৩) ও মো. হানিফকে (৫০) বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ঠাকুরগাঁও আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত তাদের জামিন নামুঞ্জর করে কারাগারে পাঠান।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল পাড়া এলাকায় গেলে কথা বলার মতো কোনো পুরুষ পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রতিবেদককে দেখে কয়েকজন নারী এসে জানান, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষেরা বাড়িতে থাকছেন না। এ ছাড়া দিনের বেলা অপরিচিত কোনো লোককে পাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই পুরুষেরা লুকিয়ে পড়ছে।
অপর গ্রাম জোতপাড়ার দিকে যেতে রাস্তার পাশে ধান কাটায় ব্যস্ত কিছু কৃষি শ্রমিককে ডেকে ঘটনা জানতে চাইলে তারা কাছে আসার সাহস পাচ্ছিলেন না। কমপক্ষে দশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তারা। তাদের মধ্যে কাদের নামে একজন বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝেই এ গ্রামে আসছে। আমরা তাদের দেখে লুকিয়ে যাই। আর রাতে বাইরে থাকি। এরই মধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন বয়স্ক মানুষ, একজনের সম্প্রতি অপারেশন হয়েছে। তারা কোনো হট্টগোলে নেই, তাও তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাদের আরও বলেন, পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা চাই। টাঙ্গাইল পাড়া গ্রামের আম্বিয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার স্বামী মাছ ধরে সংসার চালায়। ভোটের দিন মারামারির সময় আমরা যাইনি। পরে শুনেছি সবার নামে মামলা হয়েছে। এখন আমার স্বামী গ্রেপ্তারের ভয়ে বাসায় থাকে না। দুই সন্তান নিয়ে এখন আমি কিভাবে সংসার চালাই বলেন? খুব খারাপ অবস্থায় আছি।
জোতপাড়ার রোকেয়া খাতুন বলেন, কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। এই ভয়ে বাসায় কেউ থাকে না। পাকা ধান কাটতে পারছি না, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা দিনমজুর মানুষ, কী করবো এখন? ভোট দেয়াটাই কি আমাদের অপরাধ? আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ বিষয়ে মামলার বাদী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের মন্তব্য নিতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রাণীশংকৈল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাহিদ ইকবাল জানান, মামলার পর ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (১৫ নভেম্বর) তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করা হবে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com