কুমিল্লা নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড সংরাইশ বড় পুকুর পাড় এলাকার একটি গলি থেকে এলজি, পাইপগান, ১২ রাউন্ড বুলেট ও ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে ওই এলাকায় একটি বাড়ি ও বাউন্ডারি ওয়ালের মাঝখানের পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া তিনটি কাঁধ ব্যাগ থেকে এসব অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, গত সোমবার (২২ নভেম্বর) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মো. সোহেলসহ ডাবল মার্ডারের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে একটি বাড়ি ও বাউন্ডারি ওয়ালের মাঝখানে তিনটি কাঁধ ব্যাগ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করে এসব অস্ত্রশস্ত্র পায়। ব্যাগগুলো ওই কিলিং মিশনের অংশগ্রহণকারীদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার বিকালে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রের পাথরিয়াপাড়া কার্যালয়ে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালায়। এ সময় সি?টি কাউন্সিলর সোহেলসহ আট জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল ও সহযোগী হরিপদ সাহা নামে দুই জন মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন- জুয়েল (৪০), আউয়াল হোসেন রিজু (২৫), রাসেল (২৮), মাজেদুল হক, বাদল (২৫) ও সোহেল চৌধুরী।দিবস
৯ গুলিতে সোহেলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা: এলোপাতাড়ি ৯টি গুলি চালিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের (৫০) মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল ঘাতকরা। এর মধ্যে হামলাকারীদের পিস্তলের দুটি গুলি সোহেলের মাথায়, দুটি বুকে, অন্য পাঁচটি পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। গত সোমবার (২২ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সোহেলের সহযোগী আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহাও (৫৫)। কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নিহত হরিপদ সাহা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তার বুকে ও পেটে গুলি লেগেছিল। এছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরো অন্তত ৬ জন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে, এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর ওই ওয়ার্ডের সুজানগর, পাথুরিয়াপাড়া, বউ বাজা ও পাশের সংরাইশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহা আমাদের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা গেছেন। কাউন্সিলর সোহেলের শরীরে ৯টি গুলি লেগেছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি। দুজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা। পাশাপাশি অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে কাউন্সিলর সোহেল নিজ কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক করছিলেন। এ সময় ৪টি মোটরসাইকেল করে আসা অন্তত ১০ জন কালো মুখোশধারী সন্ত্রাসী ওই কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে গুলিবিদ্ধ সোহেল সঙ্গে সঙ্গেই নিজের চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির আওয়াজে আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা সীমান্তবর্তী বউবাজার এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ কাউন্সিলরসহ আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ওই দুজনের মৃত্যু হয়। হামলায় গুলিবিদ্ধ জুয়েল মিয়া বলেন, আওয়াজ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছেন। এ সময় আমার পায়ে গুলি লাগে। তারপর কী হয়েছে বলতে পারছি না। এদিকে, সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনার কারণ সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন বালু ব্যবসা, মাদক, ঠিকাদারি ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ওই কাউন্সিলরকে হত্যা করা হয়েছে।