মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি হবেই: কাদের কীটনাশক ও হরমোন ছাড়াই কৃষক পর্যায়ে টমেটো উৎপাদনে হাবিপ্রবি’র সাফল্য স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, ৩ দিন অবজারভেশনে থাকবে সুন্দরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ রাষ্ট্রপতির অবৈধ টিভি চ্যানেল ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে কার্যক্রম শুরু পাসপোর্ট অফিসে প্রতারণা: পুলিশের এসবি পরিচয়ে টাকা আদায় দেশে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক মহড়ার নির্দেশ পুতিনের সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা : টিআইবি

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ফলে রোগী ভর্তি বেশি বলে মনে করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান। তিনি জানান, ৮৫০ শয্যায় বিশেষায়িত চিকিৎসা দিচ্ছে এ হাসপাতাল। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণত ১ হাজার ২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় শয্যার বাইরের রোগীদের ভর্তি করা হয়। একটি শয্যার জন্য বহু রোগীকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। কেউ চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেলে বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তখনই শয্যা খালি হয়। ওষুধ, লোকবলসহ অন্যান্য উপকরণ নির্ধারিত শয্যার বেশি সরকার থেকে বরাদ্দ নেই। তবে অপ্রতুল হলেও সে বরাদ্দে বাকিদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তারা।
সরকার-সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশের সব সরকারি হাসপাতালের বাইরে বড় বোর্ডে উল্লেখ থাকে কোন চিকিৎসা পাওয়া যাবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। অন্য হাসপাতাল থেকে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগের চেয়ে জেলা হাসপাতালে রোগ নিরীক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়েও আগের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো হয়েছে।
কিন্তু রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম থাকায় সকল রোগীকে বেড দেয়া যা না। যেমন:চলতি মাসের শুরুতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন চাঁদপুরের পঞ্চাশোর্ধ্ব নুর আলম। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার নামে কোনো শয্যা বরাদ্দ করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেঝেতে বিছানা পেতে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে অবস্থানের প্রায় ১৫ দিন পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালটিতে মোট শয্যা সংখ্যা এক হাজার। তবে এর প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রোগী সেখানে ভর্তি রয়েছে। বাড়তি রোগীদের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় চিকিৎসার জন্য তাদের ঠাঁই হয় মেঝে ও বারান্দায়। এ অবস্থা যে কেবল নিটোরেই, তা নয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিশেষায়িত সব সরকারি হাসপাতালে শয্যার চেয়ে ৫৩ শতাংশ রোগী বেশি ভর্তি হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১০ শয্যা, ২০ শয্যা, ৩১ শয্যা ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিভিন্ন শয্যার হাসপাতালের সংখ্যা ৪৮৫। মাধ্যমিক পর্যায়ে রয়েছে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যার ৬২টি জেলা ও জেনারেল হাসপাতাল। টারশিয়ারি বা বিশেষায়িত পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যাা ৩০। বিশেষায়িত প্রতিটি হাসপাতালে ৫০০ থেকে দুই হাজার পর্যন্ত শয্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে টারশিয়ারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শয্যার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪টি শয্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। সংস্থাটি বলছে, এসবের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৪৯ হাজারের কিছু বেশি। যার ৩২ শতাংশ রয়েছে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয়। তবে স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষ পর্যায়ের এসব হাসপাতালে রোগী ভর্তির হারও সবচেয়ে বেশি। ১৫৩ শতাংশ রোগী চিকিৎসার জন্য এসব হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের হাসপাতালে শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তির হার ১৩৭ শতাংশ। তবে শয্যার তুলনায় কম রোগী ভর্তি হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের হাসপাতালে। শয্যার বিপরীতে ৭৮ শতাংশ রোগী ভর্তি হয় উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা তার নিচের পর্যায়ের হাসপাতালে।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য সরকারি চিকিৎসকের সংখ্যা ১ দশমিক ৫ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছেন দশমিক ৬ জন। প্রতি চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র দশমিক ৩০ জন। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে রোগীর অনুপাতে হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক, বরাদ্দ, লোকবল কিছুই পর্যাপ্ত নেই। ফলে ১০০ রোগীর জন্য বরাদ্দ পাওয়া অবকাঠামো ও লোকবল দিয়ে ২০০ রোগীকে সেবা দেয়া হয়। সরকার যে পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন পর্যায়ে ভাগ করেছিল তাতে ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকে রোগী ব্যবস্থাপনা করলে বিশেষায়িত হাসপাতালে অতিরিক্ত চাপ পড়ত না। কারণ সাধারণ মানুষই জানে না যে কোন রোগের জন্য কোথায় যেতে হবে। ফলে বিশেষায়তি হাসপাতালগুলোর ওপরই চাপ পড়ে। আবার দেশের মানুষ রোগ প্রতিরোধের বিষয়েও সতর্ক নয়। যথাযথ সতর্কতা থাকলে সব রোগের জন্য হাসপাতাল পর্যন্ত আসতেও হতো না।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) জনস্বাস্থ্য ও হাসপাতাল প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এএনএম শামসুল ইসলাম বলেন, এটা সত্য, জরুরি না হলে কেউ হাসপাতালে আসে না। তবে কোন হাসপাতালে কোন চিকিৎসা রয়েছেন সে বিষয়ে জানার ঘাটতি রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ, সচেতনতা, সংকটসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রাখতে হবে। সব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে একসময় অতিরিক্ত রোগী ভর্তির প্রয়োজন পড়বে না। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও শয্যা সংখ্যাও বাড়াতে হবে। কিন্তু রোগী ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে এ সমস্যা রয়েই যাবে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়া মানুষ বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমেদ মোস্তাক রাজা চৌধুরী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখনো বাজেট অনেক কম। দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ গ্রামে বাস করলেও তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এখনো আমরা জেলা পর্যায়ে সব রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিনি। রোগ নির্ণয়ে সরকারি হাসপাতালগুলো সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। জেলা হাসপাতালেও যখন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে না তখন মানুষ বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করে। দেশের সবখানের মানুষ যদি জানত, কোথায় গেলে কোন সেবা পাওয়া যাবে তাহলে তারা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করত না। এসব হাসপাতালে অনেকেই আসে যাদের চিকিৎসা জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে সম্ভব ছিল। হয়রানি, অব্যবস্থাপনা, রোগ নিরীক্ষণ ও অন্যান্য সেবার অভাবে মানুষ বড় হাসপাতালে আসে।
প্রতিরোধী ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হেলথ প্রমোশনের বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পত্রিকা, টেলিভিশন ও ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রম আরো বাড়ানো হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com