প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। শুধু দেশে নয়, বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। শীত মৌসুম এলে সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর লাখো পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে যান। কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন। পর্যটনের ভরা মৌসুমেও সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলো এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটনশিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। পাশাপাশি এবার পর্যটন খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যটন স্পটের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন। কিন্তু গত দুই মাসে তেমন পর্যটকের দেখা মেলেনি সুন্দরবনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণরোধে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্রেগুলো খোলা হয়। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। এতে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীশূন্য হয়ে পড়ে সুন্দরবন। পরিবহন ধর্মঘট থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নৌযানে ভাড়া না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে লঞ্চ ও জালিবোর্ড কর্মচারীদের। তবে পর্যটন খাতের বিকাশ ধরে রাখতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও এটি রাখতে চান ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বিটু ও জাহিদ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পর্যটনশিল্প আগের চেয়ে বিকাশিত হয়েছে। গত দুই বছর করোনাকালীন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই খাতে। তারপরও পর্যটনশিল্প সচল রাখতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এটি নিচ্ছেন তারা। তবে বর্তমানে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মানুষের আয়ের তুলনায় খরচ বেড়েছে। তাদের আসা-যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই পর্যটনশিল্প কিছুটা হুমকির মুখে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই খাতে নজর দিলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলেও জানান তারা। তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। পর্যটকরা আগে লঞ্চ ও বোট বুকিং দিলেও এখন বাতিল করেছেন। ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সুন্দরবন দেখতে রাজশাহী থেকে আসা শাজ্জাদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর পরিবার নিয়ে সুন্দরবনে ঘুরতে আসি। করোনার কারণে গত দুই বছরে আসা হয়নি। এ বছর তিনগুণ বাস এবং বোট ভাড়া দিয়ে এসেছি। করোনা মহামারির আগে শীত মৌসুমে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্র থেকে ৩৫-৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। কিন্তু এ বছর গত দুই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।
পূর্ব সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে পর্যটকের আনাগোনা বাড়ে বনের করমজল, কটকা, কচিখালী, হারবাড়িয়াসহ অন্তত ১০টি পর্যটন স্পটে। স¤প্রতি পরিবহন ধর্মঘটের পর তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। খরচ বেশি হওয়ায় দূর-দূরন্ত থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন না দর্শনার্থীরা। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে জানান এই বন কর্মকর্তা। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একদিকে করোনা অন্যদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি। এই দুটির প্রভাব পড়েছে পর্যটক খাতে। এবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে নানা রকম উদ্যোগ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।