জেলায় চলতি বছর ৭১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল অর্জিত হলে উৎপাদন হবে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪১ টন ভুট্টা। দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিং এ চলতি বছর দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জিত ফলন উৎপাদনের তথ্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারে জেলায় কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করতে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাগণ কৃষকদের সহায়তা দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলন পাওয়া যাবে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৯৩ টন। মোট ফলন অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪১ টন। তিনি জানান, গত বছর জেলায় ৭১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়েছিল, ফলন হয়েছিল প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৯৫ টন। মোট ফলন হয়েছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩ মেঃটন। গত বছর সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকার কারনে কৃষকেরা ভুট্টা বিক্রিতে একটু বাজার মূল্য কম পেয়েছে। এবারে আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশে থাকলে এবং করোনার ভয়াবহতা না হলে অর্জিত ভুট্টার ফলন কৃষকেরা যাতে ভাল পায় সে বিষয় কৃষি বিভাগ পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি জানান, দেশে অনাবাদি ও পতিত জমিগুলোতে এখন কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন হিসেবে ভুট্টা চাষে সফলতা অর্জন করেছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যা, জলাবদ্ধতা এবং ঝড় বৃষ্টির বালাই শেষে দেশের নদীগুলোর দু’পাশে বালুচরগুলোতেও ভুট্টাচাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। একসময় নদীর দু’পাশে বালু চরে কোনো ফসলের আবাদ হতো না। এখন আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ও কৃষি বিভাগের সফল উদ্যোগ গ্রহণের কারণে কৃষকেরা নদীর দু’পার্শ্বে চরে ভুট্টাচাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছে। নদীর দু’পাশের চরের জমির মূল্য বেড়ে গেছে। গত কয়েক বছর থেকে নদীর চর ছাড়াও উঁচু নিচু সবধরনের জমিতে ভুট্টা চাষ করে কৃষকেরা ব্যাপক সফলতা এনেছে।
তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৩টি ইউনিয়নে সব স্থানে ভুট্টা চাষ হয়ে থাকে। এই সফলটি এমনি একটি ফসল যে কোন বালাই ছাড়াই প্রতি বছর কৃষকরা সফলভাবে ভুট্টাা চাষে ভাল ফলন অর্জিত করে থাকে। একারেই ভুট্টাচাষের চাহিদা বেড়েই চলছে। ভুট্টা থেকে এখন ফাস্টফুডের দোকানে বিক্রিত বেকারী সামগ্রী তৈরী হচ্ছে। যা ফাস্টফুড দোকানের ক্রেতাদের কাছে রুচিশীল খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় ভুট্টার বাহিদা দেশে বেড়েছে। এছাড়া মাছ ও গবাদি পশু এবং পল্ট্রি ফার্মে ভুট্টা এখন প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জেলার বিরামপুর উপজেলার বিনাইল গ্রামের ভুট্টা চাষী হরেন্দ্র নাথ রায় (৬০) জানান, তিনি এবারে আগাম জাতের ভুট্টা একে চল্লিশ, পাইনওনিয়ার ৯২ ও ৯৬ জাতের ভুট্টার বীজ ১ একর ২০ শতক জমিতে বোপন করেছন। কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তিনি তার জমিতে ভুট্টার বীজ বোপন করেছেন। ভুট্টারচারা বড় হতে শুরু করেছে। জমিতে কৃষি বিভাগের চাহিদা মত এমওপি এবং এসএসপি সার ভুট্টার বীজ বপনের পূর্বেই দেয়া হয়েছে। এখন ভুট্টার চারা জেগে উঠার পর ইউরিয়া সার ছিটানো হবে। জমি চাষের সময় গোবর সার দেয়া হয়েছে। ফলে জমিতে ভুট্টার চারা সবুজে সমারোহ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, এবারে গত বছরের তুলনায় আরও ভুট্টার ফলন যাতে বেশী পায় সেই লক্ষ্যে এবার ভুট্টা চাষে তিনি মনোযোগী হয়েছেন।
একই কথা বলছেন দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার ধনতলা গ্রামের মানিক মিয়া (৪০)। তিনি বলেন, আগাম জাতের ভুট্টার বীজ পালোয়ান ৯২০ ও এভারেস্ট জাতের ভুট্টা বীজ ১ একর জমিতে বোপন করা হয়েছে। আমন ধান কর্তনের পর আরও ১ একর জমিতে পরবর্তী জাত সিনজেনটা ৭৭২০ এর বীজ বোপন করা হবে। গত বছর তিনি বাম্পার ভুট্টা চাষে সফল হয়েছিলেন। এবারেও সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানান, এবারে নতুন ভুট্টা ভ্যারাইটি হিসেবে পাইওনিয়ার ৩৩৫৫ ও ৩৩৮৮ ভ্যারাইটির বীজ কৃষি বিভাগের বীজ অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই জাতের ভুট্টার ফলন একটু বেশী হবে। আমন ধান কর্তনের পর ডিসেম্বর ও পুরো জানুয়ারি মাস ভুট্টা জমিতে বপন করতে পারবেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেন।