গাজীপুরে ইনস্যূরেন্স কম্পানীতে চাকুরী দেয়ার অপরাধে মা-মেয়েকে জীবন দিতে হলো সহকর্মী লিমার স্বামী বাবু ও তার বন্ধু জাহিদুলের হাতে। স্বামী বাবুর সন্দেহ তার স্ত্রীকে ইনস্যূরেন্স কম্পানীতে চাকরী দেয়ায় তাকে ডির্ভোস দেয় লিমা। তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হওয়ার পেছেনে জড়িত থাকার সন্দেহে অপর ইনস্যূরেন্স কর্মী ফেরদৌসী বেগম(২৮) ও তার পাঁচ বছরের মেয়ে তাসফিয়া আক্তার হত্যা করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর রাতে এ জোড়া খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরদিন শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে খুনে ব্যবহৃত দুইটি চাকুও উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো-সহকর্মী লিমা আক্তারের স্বামী ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া এলাকার মনির হোসেন ওরুফে ইনুর ছেলে মো. মহিউদ্দিন ওরফে বাবু(৩৫) এবং একই এলাকার সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান। নিহত ফেরদৌসী বেগম হলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বরাইয়া এলাকার বাছির উদ্দিন বেপারীর মেয়ে ও মুদি দোকানদার রবিউল ইসলামের স্ত্রী। তাসফিয়া হলো ফেরদৌসীর সাবেক স্বামী জয়নাল আবেদীনের ঘরে জন্ম নেয়া মেয়ে। শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব তথ্য জানানো হয়। এসময় মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রেজোয়ান আহম্মেদ, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, সদও থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান জানান, গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল এলাকায় ভিক্টিম ফেরদৗসী দুই মেয়ে হাফসা(১১) ও তাসফিয়া(৫) কে নিয়ে ভাঁড়া বাসায় থাকতেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বরাইয়া এলাকায় মৃত বাছির উদ্দিনের মেয়ে ও তার নাতনী। তিনি গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় গার্ডিয়ান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরি করতেন। অপরদিকে প্রতিবেশী লিমার সংসারের অভাব ঘুচাতে ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন ফেরদৌসী। এটাই তাদের মা-মেয়ের মৃত্যুর কাল হলো। স্ত্রীর চাকুরি করা নিয়ে লিমা ও তার স্বমী বাবু’র দম্পতির মধ্যে মাঝে মধ্যেই কলহ হতো। লিমাকে ওই চাকুরি থেকে বাদ কওে দিতে বাবু ফেরদৌসীর কাছে বিভিন্ন সময় অনুরোধও করেছে। কিন্তু লিমা চাকুরি ছাড়তে রাজি হয়নি। এসব কারণে তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী বাবুকে ডিভোর্স দেন। তাদের ছাড়াছাড়ির পেছনে ফেরদৌসীর হাত রয়েছে বলে বাবুর সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে প্রতিশোধ নিতে বাবু তার স্ত্রীর সহকর্মী ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর বিকেলে জাহিদুল ইসলাম খান ইনস্যুরেন্সের বিষয়ে কথা আছে বলে ফেরদৌসী বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। জাহিদুলের ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরদৌসী তার মেয়ে তাসফিয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। পরে জাহিদুল, ফেরদৌসী ও তার মেয়েকে নিয়ে রিকশাযোগে হাড়িনালের বাসা থেকে গাজীপুর মহানগরের দেশিপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় নিয়ে যায়। রিকশা থেকে নেমে কিছুদুর হেটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেয়া বাবু এবং সঙ্গে থাকা জাহিদুল গলায় ছুরিকাঘাত করে। এসময় ফেরদৌসীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনা দেখে ফেলায় তার মেয়ে তাসফিয়া চিৎকার দৌড়ে পালালোন চেষ্ঠা। পরে ওই মেয়ে ধরে এনে জাহিদুল তাকেও গলাকেটে হত্যা করে এবং লাশ ফেলে রেখে ঘাতকরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ২৫ নভেম্বর এ ব্যাপারে নিহতের ভাই হযরত আলী বাদি হয়ে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শুক্রবার রাতে ওই দুইজনকে কালীগঞ্জের সালদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে ওই খুনের ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে শনিবার দুপুরে অভিযুক্তদের গ্রামের বাড়ি সালদিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুইটি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার বিকেলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে তাদের মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।