জামালপুরে সাংবাদিকদের পিটিয়ে চামড়া তোলা নিয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) নাছির উদ্দীন আহমেদের আপত্তিকর বক্তব্য ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফাঁসানোর হুমকির ঘটনায় জেলাজুড়ে কর্মরত সাংবাদিকদের অব্যাহত আন্দোলনের ৩য় দিনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে পুলিশ সুপারকে বাঁচাতে অপতৎপরতা ও সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খানেরও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কর্মরতসাংবাদিকবৃন্দের ব্যানারে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামালপুর প্রেসক্লাব, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাব, জামালপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও জামালপুর টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এটিএন বাংলার সাংবাদিক লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক শোয়েব হোসেন, জামালপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আমাদের সময়ের সাংবাদিক আতিকুল ইসলাম রুকন, জামালপুর প্রতিদিনের সম্পাদক অধ্যাপক সুরুজ্জামান, ইনকিলাবের সাংবাদিক নূরুল আলম সিদ্দিকী, দৈনিক সচেতনকণ্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান, দিনকালের সাংবাদিক মুকুল রানা, বাসসের সাংবাদিক মুখলেছুর রহমান লিখন, একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক মুক্তা আহমেদ, সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ টুডের সাংবাদিক এম সুলতান আলম, প্রথম আলোর সাংবাদিক আজিজ আহমেদ প্রমুখ।প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক শোয়েব হোসেন জানান, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদককে পিটিয়ে চামড়া তোলে নিতে চেয়েছেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দীন আহমেদ। সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলারও হুমকি দিয়েছেন। একজন পুলিশ সুপারের কাছে যখন গণমাধ্যম কর্মীরাই নিরাপদ নয়, সেখানে পুলিশের কাছ থেকে সাধারণ জনগণ কতটুকু সেবা পাবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই জামালপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে জেলা থেকে পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার জরুরি।জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, পুলিশ সুপারকে বাঁচাতে সদর থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম খান অপতৎপরতা শুরু করেছেন। সাংবাদিকদের ফোন করে ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। রাতভর সাদা গাড়িতে চেপে সাংবাদিকদের বাড়িবাড়ি গিয়ে সমঝোতার নামে উৎকোচ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পুলিশ সুপারের সঙ্গে ওসিও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নীলনকশায় জড়িত। পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমরা ওসিরও প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ সুপার ও ওসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ও ওসির বক্তব্য নিতে তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে পুনাক মেলা সম্পর্কে অবহিত করতে সাংবাদিকদের মেলা প্রাঙ্গণে ডাকেন ওই পুলিশ সুপার। তার ডাকে সাড়া দিতে না পারায় পুলিশ সুপার ক্ষিপ্ত হয়ে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানকে ধরে পিটিয়ে চামড়া তুলে নেওয়াসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফাঁসানোর হুমকি দেন। তারপর থেকেই আন্দোলনে নামেন জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।