বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে মালচিং চাষ, কম খরচে ভালো ফলন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

ভাগ্যান্বেষণে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান এসএসসি পাস কামরুল হাসান। এক চাচা সেদেশে ছিলেন আগে থেকে। তিনি পাইলিং স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। কামরুল গিয়ে কাজ নেন ইলেক্ট্রিক্যালের। দুজনেরই আয়-রোজগার ছিল বেশ ভালো। করোনাভাইরাসের হানায় দেশে ফেরেন ১০ বছর পর। লাখ টাকার বেশি বেতন ছিল সেখানে। কিন্তু আর যেতে পারলেন না। চিন্তা করলেন দেশেই কিছু করতে হবে। বাপ-দাদা কৃষিজীবী। তিনিও বেছে নিলেন কৃষিকাজ। তবে বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আনলেন আধুনিকতা। তাতেই সফল তিনি। সরেজমিনে সবজির স্বর্গখ্যাত ময়মনসিংহ সদরের বোরোরচরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা। ক্ষেতে কাজ তদারকি করছিলেন কামরুল। ব্রহ্মপুত্রের এই বিশাল চরাঞ্চলে যতদূর চোখ যায় শুধু সবজি আর সবজি। চোখ ধাঁধানো সবুজ চারদিকে। এরই মধ্যে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটি মরিচ ক্ষেতে ছিলেন কামরুল। আশপাশের অন্য ক্ষেত থেকে তার ক্ষেতটি একটু আলাদা মনে হলো। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এটা মালচিং পদ্ধতির ক্ষেত। মালচিং পদ্ধতিতে বেড করার পর সার-বিষ কম লাগে। গাছের গ্রোথ ভালো থাকে। ফলনও আগাম পাওয়া যায়। নিড়ানির জন্য কোনো কামলা লাগে না। আর এক মালচিংয়ে চার-পাঁচ ফসল তোলা যায়। কোথা থেকে এই পদ্ধতির চাষ জানলেন, জানতে চাইলে কামরুল বলেন, সিঙ্গাপুরে ছিলাম দশ বছর। আমার সঙ্গে এক চাচা আছেন। তিনিও পার্টনার। তিনিও ছিলেন সিঙ্গাপুর। ওখান থেকে আমরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড গেছি। তাদের কাছে এই পদ্ধতি আমরা দেখি। তারা কীটনাশক অনেক কম ব্যবহার করে। ওদের পদ্ধতি অনেক ভালো। খরচ কম, ফলন ভালো। ওখান থেকে দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হই। করোনা শুরু হলে আমরা দেশে আসি। আর যেতে পারিনি। তখন মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের চিন্তা মাথায় আসে।
মালচিং পদ্ধতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পদ্ধতিতে পচনশীল এক প্রকার পলিথিন দিয়ে চাষের মাদাটি (বেড) ঢেকে দেওয়া হয়। এখানে মালচিং কাগজের ব্যবহার হয়। মালচিং কাগজের এক পাশে কালো ও অন্য পাশে রুপালি রং করা থাকে। কালো পাশ নিচে ও রুপালি পাশ ওপরের দিকে দিয়ে মাদাটি ঢেকে দিতে হয়। এভাবে মাটি ঢেকে দেওয়ার ফলে কালো রঙের প্রভাবে প্রচ- সূর্যের তাপেও মাটির আর্দ্রতা শুকিয়ে যায় না। এ কারণে মাটিতে পানিও কম লাগে। অন্যদিকে মাটি ঢেকে থাকায় আগাছা হয় না। রুপালি পাশ ওপরে থাকায় পোকামাকড়ের উপদ্রবও তুলনামূলক কম হয়। প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা টেনে কামরুল বলেন, চাচা পাইলিং সেকশনে ছিলেন। আমি ইলেক্ট্রিক্যাল সুপারভাইজর হিসেবে। উনি ছিলেন ১২ বছর। আমি ১০ বছর। বিদেশে দেখলাম মাঠ পর্যায়ে মালচিং পদ্ধতির চাষাবাদ বেশি। ওরা জৈব বালাইনাশক বেশি ব্যবহার করে। আমরা দেশে এসে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ভারতে এটা পাওয়া যায়। পাশাপাশি জৈব সারের ব্যবহার বাড়ালাম। ‘মালচিং এক ধরনের পলিথিনের মতো, এতে কার্বন দেওয়া থাকে। যে কারণে মাটি ঢাকা থাকলে ঘাস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভেতরে যে সার আমরা দিয়েছি, ঘাস না থাকার ফলে সব খাচ্ছে আমার গাছে। এজন্য গাছের গ্রোথ ভালো, ফলনও দিচ্ছে ভালো। অন্য রোগ-বালাই খুবই কম। ড্রেনে পানি দিলে গাছ টেনে নেয়।’
‘মালচিংয়ে বিঘায় খরচ ১১-১২ হাজার টাকা। মালচিংয়ের প্রতি রোল পাঁচ হাজার টাকা। এক রোলে ১৫ শতাংশ জায়গা কাভার করে। নিজেরাই ইম্পোর্টার। সিঙ্গাপুরে আমার আয় ছিল লাখ টাকার ওপরে। দুজনই ভালো অবস্থানে ছিলাম। এক বছর আগে ভারত থেকে ইম্পোর্ট শুরু করি।’ এ বছর মোট চার বিঘার মতো জমিতে চাষাবাদ করেছেন কামরুল। ফুলকপি আর মরিচ। এখানে দুই বিঘা জমি। এক বিঘায় মালচিং আর এক বিঘায় মালচিং ছাড়া চাষ করেছেন। নিজেই দেখালেন পার্থক্য।
বলেন, ছয় থেকে সাত মাস এই মরিচ গাছ টিকবে। সেপ্টেম্বরে লাগানো। কিছু মরিচ বিক্রি করেছি। দুই বিঘা জমি থেকে আশা করছি ১০ বা ৭ দিন দিন পরপর প্রতি তোলায় ৫৪ মণ করে মরিচ পাবো। প্রথমে মণ বিক্রি করেছি ৪৭শ’ টাকা। গত বাজারে কমে হয়েছে ২১শ’। আগাম মরিচ হওয়ায় দাম বেশি পেয়েছি তখন। দুই বিঘা জমিতে আশা করি সাত মাসে তিন লাখ টাকার বেশি আসবে। খরচ যাবে মোটামুটি ৮০-৯০ হাজার টাকা। মালচিং ছাড়া যারা করেছে তাদের খরচ আরও বাড়বে। ‘মালচিংয়ে দেখা গেছে দুই-একটি চারা মারা গেছে। কিন্তু মালচিং ছাড়া অংশে কয়েকশ’ চারা মরে ক্ষতি হয়েছে। এখনো মারা যাচ্ছে। খরচও বেশি হয়েছে। কিছুদিন পর পর আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। চার-পাঁচটা শ্রমিক লাগে। কিন্তু মালচিংয়ে এখন পর্যন্ত আমার কোনো শ্রমিক লাগেনি।’ এই চাষি বলেন, মালচিংয়ের এক বিঘায় খরচ ২৬ হাজার টাকা। আর মালচিং ছাড়া বাগানে খরচ ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। মালচিংয়ে সেচও কম, সারও কম লাগবে। অন্যটিতে প্রচুর সার লাগে। টিএসপি, এমওপি আর ইউরিয়া ব্যবহার করি। ছত্রাকনাশক আর বালাইনাশক দিতে হয়। যারা মালচিং করছে তারা অনেক ভালো করছে। আমরাই এখানে প্রথম শুরু করি। এখন অনেকে করছে। আর সিঙ্গাপুরে যাওয়া হবে কি না সে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি এসএসসি পাস। কিন্তু সিঙ্গাপুরে অনেক ট্রেনিং করেছি। আইটি, ইলেকট্রিক, সুপারভাইজর স্কিল প্রভৃতি বিষয়ে। খুব ভালো ছিলাম। কিন্তু আবার গেলে সেই কাজ পাবো কি না জানি না। আবার দেশেও ওই অভিজ্ঞতা বেশি একটা কাজে লাগবে না। তাই বাপ-দাদার পেশা কৃষিকাজই করছি। গত মৌসুমে টমেটোতে পাঁচ লাখ টাকা লোকসান করেছেন। এখানকার ফসল যায় ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ীতে। মৌসুমে দেড়-দুইশ’ ট্রাক যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
অভিযোগ করে কামরুল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য এ অঞ্চলের রাস্তা। বড় বড় গাড়ি যায় কিন্তু রাস্তা নেই। প্রায়ই ট্রাক আটকে যায়, উল্টে যায়, অনেক ক্ষতি হয়। আমরা প্রতিবার রাস্তার কথা বলি জনপ্রতিনিধিদের। অনেক সময় চাষি নিজে মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করে। অনেক রাস্তা আছে একটি ট্রাকই যাওয়া সম্ভব না। আমাদের অনেক বড় একটি রাস্তা দরকার। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা ইসলাম বলেন, পুরো বোরোরচরে গত বছর ১২৮৪ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত হয়েছে ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। আরও বাড়বে। মালচিং কেবল শুরু হয়েছে। ১০-১২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে এখন। যারা একটু ইনোভেটিভ চাষি তারাই কেবল মালচিং করছেন। মালচিং পদ্ধতি কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। এটা বেশ ফলদায়ক। যারা একবার করছেন তারা আগ্রহী হচ্ছেন মালচিংয়ের প্রতি। কারণ এখানে আগাছা দমন করতে হয় না। শীতের সময় মাটির তাপমাত্রা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে মালচিংয়ে ক্ষতিটা কম হয়। মালচিং পদ্ধতি নিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, মালচিংয়ের রেজাল্ট খুব ভালো। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com