মুমিনের জিন্দেগির দু’টি পার্ট ঈমানের দু’টি অংশ। ঈমানকে দু’ভাগ করলে একভাগে শোকর (শুকরিয়া) আদায়, অন্যভাগে সবর (ধৈর্য) ধারণ। একজন মুমিনের জীবন এই দুইয়ের থেকে বাইরে নয়। মুমিন ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করবে না হয় শুকরিয়া আদায় করবে। এর বাইরে গেলে হয় সে হতাশাগ্রস্ত হবে, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, ভাগ্যের/তকদিরের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করবে আর শুকরিয়া আদায় না করলে তাহলে সে অকৃতজ্ঞ এবং কুফরি কাজে লিপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি স্বার্থে এটি প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করলে আল্লাহর কোনো অপকার বা উপকার বা সৃষ্টি জগতের কোনো পরিবর্তন হবে এমনটা নয়। বরং আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’। (সূরা ইবরাহিম-৭) আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে রাজি অথচ মানুষের দ্বারা উপকৃত হলে তার উপকারের স্বীকৃতি দিতে রাজি।
অর্থাৎ আপনার মাধ্যমে আমি উপকৃত হয়েছি, আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি না। আধুনিকতার যুগে আমরা সর্বদা নিজেদের সেরা হিসেবে উপস্থাপনের জন্য অপরের কাছে সহজে হার মানি না। কেউ কোনো কাজে বা কোনো কারণে উপকার করলে তার প্রতিদান হিসেবে প্রাপ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অকৃতজ্ঞ মানুষকে একেবারেই পছন্দ করেন না। মানুষের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা পারস্পরিকভাবেও কৃতজ্ঞতা আদায় করেন না। রাসূল সা: বলেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না।’ যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে অকৃতজ্ঞদের কাতারে শামিল করেন। এই ব্যক্তি কখনোই প্রকৃত অর্থে শুকরিয়া আদায় করে না। এই জাতীয় ব্যক্তিদের যেমন দুনিয়ার মানুষ প্রশংসা করে না আবার পছন্দ ও ভালোবাসেও না। কিন্তু কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী ব্যক্তিকে দুনিয়ায় পছন্দ এবং ভালোবাসেন। কৃতজ্ঞতা স্বীকার মানুষের উন্নত মানবীয় একটি গুণ। কারো পক্ষ থেকে কোনো উপকার পেলে বা কারো অবদান পেলে সেই অবদানের স্বীকৃতি দেয়া প্রত্যেকটা ভালো মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য একটি গুণ। যার কারণে কৃতজ্ঞ হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সাথে কুফরি করো না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো- আমি তোমাদের আরো বাড়িয়ে দেবো।’ একজন মানুষ কৃতজ্ঞতা যত বেশি আদায় করবে তিনি একজন মানুষ হিসেবে উন্নত মানবীয় গুণ তার ভেতর তত বেশি ধারণ করতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞ বান্দাদের নেয়ামত যেমন বাড়িয়ে দেন তেমনি কৃতজ্ঞ মানুষকে দুনিয়ার মানুষজনও বেশি পছন্দ ও ভালোবাসেন। কিন্তু এর বিপরীতে অকৃতজ্ঞ যারা। অকৃতজ্ঞদের দুনিয়ার মানুষ স্বার্থপর হিসেবে চিহ্নিত করে। অফিস বা কোম্পানিতে এক কলিগ অপর কলিগের কাজ প্রায়ই সম্পন্ন করে থাকেন। তবে এতে উচিত বা করণীয়, যে ব্যক্তি আপনার কাজ সম্পূর্ণ করে দিলো তার অবদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। হোক সেই ভাইয়ের কাজ ছোট থেকেও ছোট। দুনিয়ার জিন্দেগিতে চলার মুহূর্ত থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে অনেকের উপকার হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে করণীয় একটাই- শুকরিয়া আদায় করা। আপনার রবের শুকরিয়া আদায় যেভাবে করা প্রয়োজন ঠিক তেমনি যার মাধ্যমে আপনি বিপদ বা কোনো সমস্যা সমাধান করতে পেরেছেন।
কৃতজ্ঞতার বড় একটি উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে আমরা মানসিক প্রশান্তি লাভ করে থাকি। আপনি যখন কোনো নেয়ামত পাওয়ার পরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাবেন তখন অন্তরে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব হবে। ভেতরে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করবে। যার ফলে দেখা যাবে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি প্রাপ্তি ঘটেছে। আরো একটি উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে অহঙ্কারিতা থেকে মুক্তি লাভ। যখন আপনার নেয়ামত আল্লাহর দিকে সমর্পিত হবে, কোনো একটি অর্জনের পর আপনার মধ্যে গর্ববোধ, অহঙ্কার বোধ হয় তাহলে এটা একটা মানসিক রোগ যা একটি মানবীয় ত্রুটি। আর এই ত্রুটি দূর করার জন্য প্রয়োজন শুকরিয়া আদায়।
অতএব আপনি মানুষের কোনো অবদানকে যদি স্বীকৃতি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান দেন সাথে সাথে দেখবেন আপনি মানসিক একটি প্রশান্তি অনুভব করছেন। আর যদি অকৃতজ্ঞ হন, অস্বীকার করেন, নিজের সাথে প্রতারণা করেন কারণ আপনি ওই ব্যক্তির অবদানকে উপেক্ষা করেন এবং সব সম্মান আর মান নিজেই নিতে চান তা হলো- এটা মানসিক একটি অসুস্থতা। এর ফলে কখনো আন্তরিক প্রশান্তি অনুভব সম্ভব নয়।
সুতরাং আল্লাহর কাছে আখিরাতে বিনিময় পাবো, দুনিয়াতে নেয়ামত বাড়িয়ে দেবেন, মানসিক প্রশান্তি হবে এবং অন্তর নিরহঙ্কার হবে। এ ছাড়া বহুবিধ উপকার রয়েছে কৃতজ্ঞতা আদায়ের মাধ্যমে। সর্ব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের কৃতজ্ঞ বান্দাদের মধ্যে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়