সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে নতুন উদ্ভাবন ডায়াবেটিক ধানের পরীক্ষামূল চাষ ঘোড়াঘাটে মাদক বিরোধী অভিযানে ১০ জন গ্রেফতার ফরিদপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালিত ডিমলায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা তীব্র তাপদাহ হাকিমপুরে ৪০০ শিক্ষার্থী পেলো ছাতা সফিউদ্দিন একাডেমিতে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও প্রাক্তন গুণীজন ছাত্রদের সম্মাননা বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক পেলেন গজারিয়ার মাইশা তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা জননেতা মতিয়ার রহমান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের সংবাদ সম্মেলন চাটখিলে দাখিল কৃতি শিক্ষার্থীদের সংর্বধনা

অযতœ আর অবহেলায় জলঢাকার ৪শত শহীদের ঠিকানা বধ্যভূমি

রিয়াদুল ইসলাম (জলঢাকা) নীলফামারী :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বদ্ধভুমি। সেখানে রয়েছে চারশত শহীদের ঠিকানা। উপজেলা সদর হতে ৮ কিলোমিটার দুরে ডিমলা রোড কালিগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বাজারের মেইন সড়কের পার্শ্বে উত্তর-পশ্চিমে স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৪শ জনের প্রাণ কেরে নেয় পাক সেনারা। সেই বদ্ধভুমিতে তাদের স্বরনে নির্মিত হয় স্মৃতি স্তভ।সেই স্মৃতি স্তভ আজ অযন্ত আর অবহেলায় পরে আছে। প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা ব্যাক্তিরা অনেক কথাই বলেন। চলে গেলে আর কিছুই হয় না ও মনে থাকে না। বদ্ধভূমির স্মৃতি স্তভের উপর উল্লেক্ষ করা আছে ৭৮ জনের নাম। রবিবা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুল বদ্ধভূমির চার পার্শ্বে ময়লা আবর্জনা,গাছের পাতা,মলমূত্র ত্যাগ,ও সামনে মাছ মাংসের ব্যাবসা,দোকান,সহ নাম ফলকে পাতা ময়লা দিয়ে ভর্তি, যা এক অস্বাস্থকর পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় সংসদের তৎকালীন চিফ হুইফ আব্দুর রউফ উক্ত স্থান পরিদর্শন করে বধ্যভূমি হিসাবে কালিগঞ্জকে চিহ্নিত করে নাম ফলক উন্মোচন করেন। তারপর হতে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিয়েই দায় শেষ করেন সকলে ।আর নিরবে পরতে থাকে সজন হারানো বেদনার অশ্র“। বিষয়টি গভীর ভাবে অনুধাভন করে তৎকালীন জলঢাকা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার্র হাসান হাবিব ২৬ মার্চ/১৪ইং তারিখে স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে ঘোষনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুরাল তৈরী করা হবে এবং যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এই কালীগঞ্জের মাঠিতে যারা প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের সাথে বঙ্গবন্ধু থাকবেন। যেহেতু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে বঙ্গবন্ধুর কিছুটা হলেও সমবেদনার স্মৃতি বইছে। আমি চাই এ স্মৃতি হাজার বছর বেচেঁ থাক’। কিন্তু তিনি বদলী হয়ে চলে যাবার পর এখানে বঙ্গবন্ধুর মুরাল আর হয়নি। এ বিষয়ে কালীগঞ্জের বাজার এলাকার কাসেম বলেন, তিনি তো বদলী হয়ে চলে গেছেন বর্তমানে তার এই ঘোষনার বাস্তবায়ন এর কোন উদ্দ্যোগ নেই। কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউ এন ও আসে ইউ এনও যায় কিন্তু তার ঘোষনা আর বাস্তবায়ন হয় না। কবে যে সে ঘোষনা বাস্তবায়ন হবে। আর বঙ্গবন্ধু মুরাল তৈরী হবে সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম। সেদিনের সেই গন হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ হেমন্ত শীলের পুত্র কমলাকান্ত শীল এ প্রতিবেদককে জানান, ‘সেদিন ছিল ৭১সালের ২৭ এপ্রিল। চারদিকে বাজছে যুদ্ধের বাজনা। আমরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বালাগ্রাম হতে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে সরনার্থী হয়ে যাওয়ার পথে কালিগঞ্জে জড়ো হই। কিন্তু সেখানে আমাদের বাধা হয়ে দাড়ায় পাশ্ববর্তী ডোমার থানা হতে ৭টি গাড়ীতে আসা পাক খান সেনারা । তারা নেমেই ছেলে বুড়ো, শিশু মহিলাদের আলাদা করে। তারপর বুড়ো ও যুবকদের একসাথে সারিবদ্ধ করে দাড় করায় ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে সময় আমি শিশুদের দলে থাকায় দুর থেকে দেখেছি সে দৃশ্য ও আমার পিতার মৃত্যুকালীন ছটফটানী। পরে মানুষের সাথে ভারতে চলে যাই। নয় মাস পর দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসি এবং দেখি আমাদের ভিটেমাটি সব জাল দলিল ও দখল করে মানুষ বসবাস করছে’। সেই সময়ে যুবকদের দল হতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া শহীদ অশ্বিনী অধিকারীর পুত্র অমর অধিকারী বলেন সেই দিন কালীগঞ্জের এই যায়গায় গুলি হবার সাথেই আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞ্যান ফিরে এলে দেখি আমার সারা গায়ে হালকা মাটিচাপা। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছিল। তারপর পা নাড়তে গিয়ে দেখি নড়েনা। আমার গোঙানীর শব্দ শুনে এলাকার লোকজন এসে আমাকে মাটির নিচ হতে উদ্ধার করলে দেখতে পাই পায়ে গুলি লেগেছে। সেই গুলি বের করলে ভালো হই। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সমবেদনা স্বরূপ ১৯৭২ইং সালের ১৮ডিসেম্বর একটি চিঠি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যাণ তহবিল হতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে মহকুমা প্রশাসকের নিকট হতে এক বান্ডিল টিন ও ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে চেক পাই। এই ছিল আমাদের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি’।স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ও স্বীকৃতি পাইনি।আর যেখানে চারশত প্রান কেড়ে নেওয়ার বদ্ধভুমির স্থানটি আজ পর্যন্ত অযন্ত ও অবহেলায় পরে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। এলাকাবাসীর দাবী স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে নারকীয় হত্যাকান্ডে নির্মম ভাবে নিহত হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সী প্রাণ হারানোর ঐতিহাসিক স্থান কালিগঞ্জ বদ্ধভুমির স্থানটিতে একটি কমপ্লেক্স নির্মান করার দাবী জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com