শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ঊনিশশ’ একাত্তর সালের এ দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে শীতার্ত এই দিনে। বিজয়ক্ষণে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারায়। বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে। এ উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২১ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী প্রদান করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবকবক অর্পণ করবেন। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৮টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ৯ টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার সহধর্মিনী বাসন্তী গুহঠাকুরতা তার একটি গ্রন্থে লিখেছেন, ‘নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পয়লা মার্চের আগেই সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারো অনেক আগে উনসত্তরের গন আন্দোলনের সময় থেকেই , কিংবা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে। একাত্তরে তারা প্ল্যান করে যুদ্ধে নামে। যুদ্ধতো নয় , কেবল নিরস্ত্র মানুষ নিধন। প্রথমে ওদের এলোপাতাড়ি মারা , তারপর শহরে , গ্রামে গঞ্জে বেছে বেছে ধনী , ব্যাবসায়ী , বুদ্ধিজীবি নিধণ করে নদীতে খালে ফেলে দেয়া। অনেকে মনে করেন, চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল। ’
একাত্তর সালে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন শত্রুদের হাত থেকে জাতি পরম মুক্তির প্রহর গুণছিল, ঠিক তখনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণ। সেদিন হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জিসি দেব), অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আ ন ম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক শিলালিপি পত্রিকার সম্পাদিকা বেগম সেলিনা পারভীন, ডা. আবুল খায়ের, ডা. রাশিদুল হাসান, ডা. ফজলে রাব্বী, ড. আবুল কালাম আজাদ, ডা. গোলাম মর্তুজা, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেক, ড. ফয়জুল মুতী, আব্দুল মুক্তাদীর, সন্তোষ ভট্টাচার্য, আবুল বাশার চৌধুরী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীকে।
কবি আসাদ চৌধুরী তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “১৪ ডিসেম্বর গবর্নর হাউজে গবর্নর ডা. মালিক, চরমপত্রের ভাষায় ‘ঠেটা মালিক্যা’, মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠকের ব্যাপারে রাও ফরমান আলী এবং চীফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেনের সায় ছিলো। মন্ত্রিসভার বৈঠক বসছে এগারোটায়, ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাকিস্তানী ওয়্যারলেসে সংবাদ ধরে ঠিক এগারোটায় যে রুমে বৈঠক বসেছিল সেখানে উপর্যুপরি রকেট বর্ষণ করে। বিমান হামলা বন্ধ হতে না হতেই চীফ সেক্রেটারি, পুলিশের আইজি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মালিক সাহেব পদত্যাগ করে ঢাকায় আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রতিনিধি মিস্টার রেনড-এর কাছে আশ্রয় চাইলেন।
এ দিন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীসহ ভারতীয় ১০১ কম্যুনিকেশনের একটি অংশ গাজীপুর জেলার শফিপুরের মৌচাকে পরাজিত করে পাকিস্তান বাহিনীকে। যৌথ বাহিনীর জন্য দলটি সেদিন সাভার নবীনগরের বিকল্প পথ ধরে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। নবীনগরে ঢাকা-যশোর সংযোগস্থলে আসার পর যৌথবাহিনী হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করেছিল। যৌথবাহিনীর একটি অংশ ১৫ ডিসেম্বর মিরপুর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৪ ডিসেম্বর লে. জেনারেল একে নিয়াজীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন।
এবার করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও কালো পতাকা অর্ধনমিত করণ, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৯টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ১০ টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ’৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে।
অনেকে মনে করেন, চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল। ( গ্রন্থনা: ইবরাহীম খলিল)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com