সরকার জনগণকে সত্য ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গতকাল রোববার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বাংলাদেশে যিনি প্রথম বলেছিলেন, উই রিভোল্ট, আমরা বিদ্রোহ করলাম। সেই মানুষটার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। তার কণ্ঠেই প্রথম আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি রেডিওতে।
তিনি বলেন, কেউ এখন আইন করে কিংবা কোনো আদালত রায় দিয়ে যদি আমাকে বলে যে, তুমি নিজের কানে যা শুনেছো সেটা বিশ্বাস করো না। আমি কি করে তা মানবো? আমি তো কারো কাছ থেকে শোনা কথা বলছি না। আমি আমার নিজের কানে শোনা কথা বিশ্বাস করবো না? কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের সত্য ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমি বলব, অপচেষ্টা হচ্ছে। দেশকে এই ধরণের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে হবে। যার যা প্রাপ্য সেটা তাকে দিতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটা একদিনের প্রস্তুতি না। আমাদের মহান মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনে মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার সংগ্রামে পৌঁছেছি, স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি। এই সময়গুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ এর নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মে যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার কথা তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলেই তো আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পুরণের জন্য সে সময়ে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরও আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, তারাও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। কারণ সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ক্ষেত্র প্রস্তুত না করতো তাহলে তো যুদ্ধে করে আমরা জনগণের সমর্থন পেয়ে বিজয়ী হতে পারতাম না। সেই সময়ে সারা দুনিয়ার যারাই আমাদের সহযোগিতা করেছে, সমর্থন জানিয়েছে তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।
তিনি বলেন, সেই সময়ে আমাদের দেশে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে, এমনকি যারা কিছু করতে পারেন নাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন তাদের কাছেও আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কিন্তু কাউকে কোনো মর্যাদা না দিয়ে, কারো প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ না জানিয়ে শুধুই যদি আমরা কেউ নিজেরা এই গৌরবকে দখল করতে চাই এটা জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না, এটা অন্যায়।
শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে এই মহান স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর সময়ে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের প্রতি, স্বাধীন বাংলাদেশের যে প্রথম সরকার সেই সরকারের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীসহ সব সেক্টার কামান্ডার, ফোর্সেস কমান্ডার, সাব সেক্টার কমান্ডার, যারা সৈনিক ছিলেন, যারা সহযোগী ছিলেন, যারা সাহায্য করেছেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর আমাদের, গভীর শ্রদ্ধা যারা সেই যুদ্ধে আমার মা-বোনেরা তাদের সারাজীবনের সর্বোচ্চ সম্পদ হারিয়েছেন, যে সন্তানরা তাদের মা-বাবা-ভাই-বোনকে হারিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দুই সন্তান পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কারাগারের মাসের পর মাস কাটাতে হয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধ। তাদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের, যিনি ৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কারাগারে দুই সন্তানসহ বন্দিজীবন কাটিয়েছেন আজকে আবার এই সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ কারারুদ্ধ হয়ে থাকতে হচ্ছে দারুণ অসুস্থ অবস্থায়। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
সাদা কাগজে শিশু-কিশোররা, ‘আমার মা, আমার দেশ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ধানের শীষ, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মিনার, খাল-খনন, সবুজ গ্রাম’ প্রভৃতি নানা রঙ দিয়ে আঁকে। শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তোমরা সত্য জানার চেষ্টা করো। মনে রাখবে জ্ঞান তাই যা সত্য। মিথ্যা জানা জ্ঞান নয়। যারা মিথ্যা জানাতে চায় তারা আমাদের অজ্ঞানতার অভিশাপে আবদ্ধ করতে চায়। কাজেই সত্য জানার আবেগ ও উতসাহ আরো জাগ্রত হোক।’ দলের স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বনির্ভর বিষযক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন, মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, মেজবাহ আহমেদ, আবদুল বারী ড্যানি, আমিনুল ইসলাম, আবেদ রাজা, খান রবিউল ইসলাম রবি, ফরিদা ইয়াসমীন, মহসিন মন্টু, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, রীতা আলী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।