যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে সাইট্রাস জাতীয় ফল রপ্তানি করেন সিলেটের ব্যবসায়ী হিজকিল গুলজার। তবে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল না থাকায় ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানি করতে হয় তাকে। এতে ব্যয় ও দুর্ভোগ দুটোই বাড়ে। আক্ষেপ করে হিজকিল বলেন, ‘ওসমানী অনেক আগেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়েছে। সিলেটের প্রচুর প্রবাসী রয়েছেন। ফলে এই বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল থাকা জরুরি ছিল। তা না থাকায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’ তবে হিজকিল গুলজারের এই দুর্ভোগের অবসান হতে যাচ্ছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মিত হচ্ছে কার্গো টার্মিনাল। সিলেট থেকে আকাশপথে পণ্য রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা কাটবে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা। আগামী জানুয়ারিতে কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই কার্গো টার্মিনাল চালু হলে সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুটিরশিল্প পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত গার্মেন্টপণ্য এ বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি সম্ভব হবে। তবে কার্গো টার্মিনালের পাশাপাশি ওয়্যারহাউস নির্মাণেরও দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ নির্মাণের প্রথম অংশের কাজ শুরু হয় গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। এখন কাজ শেষ পর্যায়ে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, ‘এই কার্গো কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ১০০ টন। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ ডেডিকেশন সিস্টেম স্ক্যানার মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে। ‘কার্গো টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সব কাজ সম্পন্নের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবে। তাদের অনুমতি পেলেই পণ্য রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে।’ সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানকার শাক-সবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, পান, ফ্রোজেন ফিশ, নানা জাতের সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুঠির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বিশাল অংশ সিলোটি হওয়ায় সেখানকার বাজারে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকায় কার্গো টার্মিনাল চালুর পর সরাসরি রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। পরবর্তীতে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে এই রপ্তানির সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে। জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। সিলেটে কার্গো টার্মিনাল তৈরি হওয়ায় রপ্তানি সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। এখন থেকে এই বিমানবন্দর থেকেই সিলেটের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন।’ শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য ঢাকার শ্যামপুরে এখন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনুমোদিত ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিতে হয়। শ্যামপুরের এই সুবিধা সিলেটে চালু করার জন্য সিলেট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কার্গো টার্মিনালের পাশপাশি ওয়্যারহাউস নির্মাণের দাবি জানিয়ে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘নির্ধারিত ওয়্যারহাউস না থাকায় (প্যাকেটজাতকরণ ও গুদাম সুবিধা) যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দেশগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে। এজন্য আমরা প্রায় দুই বছর আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছিলাম সিলেটে একটি ওয়্যারহাউস করতে। এখনও তার কোনো গতি হয়নি। আশা করছি এখন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।’