বালিগাঁওয়ের ‘শহীদ দানু মিয়া স্মৃতি পাঠাগার’ এর নানা আয়োজনে ব্যতিক্রমী বিজয়মেলা ও লোকজ উৎসব উদযাপিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান-নাচ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলা, গ্রামীণ উপকরণে গ্রামীণ মেলা এবং মেঠোপথে বর্ণাঢ্য র্যালীর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়দিন মধ্যরাতে পর্দা নেমেছে প্রত্যন্ত গ্রাম বালিগাঁওয়ের দু’দিনব্যাপী এ ব্যতিক্রমী বিজয় মেলা ও লোকজ উৎসবের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গ্রাম-বাংলার এক চমৎকার সমন্বয় হয়ে ওঠেছিলো উৎসবটি। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ছায়া সুনিবিড় এক পল্লীগ্রাম বালিগাঁও। প্রতিবছর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে এখানে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় মেলা ও লোকজ উৎসব। এ আয়োজনের প্রাণ এ গ্রামের তরুণরা। বিগত দেড় যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গ্রামীণ খেলাধুলা এবং গ্রামীণ মেলার আয়োজন ও সার্বিক কর্মযজ্ঞ করছে তরুণরাই। ’৭১ সালে রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী হত্যা করেছিলো বালিগাঁওয়ের সন্তান দানু মিয়াকে। গ্রামের তরুণরা এই শহীদ দানু মিয়ার নামে একটি পাঠাগার গড়ে তোলে। দানু মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করতে দেড় যুগ ধরে এ উৎসব পালন করে আসছে তারা। খেলাধুলা পরিচালনায় থাকা তাহেন আহমেদ জানান- প্রায় ৩০টি খেলাধুলায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে অংশ নেন। যে খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, সে খেলাগুলো আমরা উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। গ্রামীণ হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খেলাধুলা হলো- টায়ার খেলা, বাঁশের উপর বালিশ খেলাসহ অন্যান্য খেলা। এর সাথে যেমন খুশি তেমন সাজো, স্মৃতি পরীক্ষা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চিরাচরিত গ্রামীণ মেলায় ছিলো বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বাঁশ ও বেতের উপকরণ, আচার, বিভিন্ন খাবারের দোকান খইসহ ছোটবড় প্রায় অর্ধশত স্টল। পাশাপাশি শিশুদের আনন্দদানে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইড। সেচ্ছাসেবক ইমরান খান বলেন- সুসজ্জিত বিজয় র্যালী, গ্রামীণ বিলুপ্তপ্রায় খেলাসহ ৩০টি খেলাধুলা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, পথ নাটক, মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টরি-সিনেমা প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে এ উৎসব। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাজনগর উপজেলার দুজন মুক্তিযোদ্ধা শীতেষ দেব ও দিজেন্দ্র কুমার দেবকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। বিজয়মেলা ও লোকজ উৎসবের আয়োজক আব্দুল হান্নান জানান- বিজয়ের ৫০ বছরটি আমরা ব্যতিক্রমীভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। বিজয় উৎসবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ গড়তে ‘শহীদ দানু মিয়া স্মৃতি পাঠাগার’ কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। প্রতিবছর আমাদের এ উৎসব আয়োজন অব্যাহত থাকবে।