সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

তালতলীতে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী

তালতলী প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

বরগুনার তালতলীতে ডাকাতি মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ফেরারি আসামী ইলিয়াস খাঁ সহ ছালাম খা, রশিদ খা, লিমন খা, লুৎফা বেগমদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দৌড়াত্ম্যে গাববাড়িয়া গ্রামের নিরীহ মানুষ আতংকিত। এরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে খুন যখমের ভয় দেখিয়ে একই গ্রামের তরাব আলী খা গংদের ২০ বিঘা জমি জবর দখল করে ভোগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার তালতলী প্রেসক্লাবে এসে এমন অভিযোগ দায়ের করেন ওই জমির অংশিদার কামাল তালুকদার। অভিযোগে জানা যায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলাধীন গাববাড়িয়া গ্রামের আবদুল আজিজ তালুকদার ও তরাব আলী খা গংদের ২০ বিঘা জমি ছালাম খা, রশিদ খা, ইলিয়াস খা, লিমন খা, লুৎফা বেগমরা জবর দখল করে ভোগ করে আসছে। এনিয়ে জমির প্রকৃত মালিক ও ভূমিদস্যু ছালাম খা গংদের সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাটি ও হতাহতের ঘটনার মত লড়াই চলে আসছে। ভূমিদস্যু ছালাম খা গংদের নামে কোন কাগজপত্র বা দলিলপত্র নেই। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল গনি তালুকদারের রেকর্ডীয় প্রায় ৫ বিঘা জমি ৬/৭ বছর আগে ধান করারি হিসেবে ভূমিদস্যু ছালাম খা চাষাবাদ করে। পরাপর ৫/৬ বছর সে করারের ধান পরিশোধ করলেও গত ২ বছর যাবৎ ধান দিচ্ছে না এবং জমিও ছাড়ছে না। উল্টো করারের ধান চাইলে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে তারা। ভূমিদস্যু ছালাম খার স্ত্রী লুৎফা মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল গনি তালুকদারের পুত্রবধূ ও নাতিকে খুনের হুমকি দেয় যা মোবাইল ফোনে ধারনকৃত রেকর্ডে সংরক্ষিত আছে। ভূমিদস্যু ছালাম খা গংদের অবাক-করা ইতিহাস রয়েছে। ছালাম খাঁ’র পিতা আমজেদ খা ও তার চাচা ফজলে খা। এরা ২ ভাই পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় ৭০ বছর আগে ৫০ দশকে পটুয়াখালী থেকে গাববাড়িয়া গ্রামে কাজের খোজে আসেন এবং বিভিন্ন বাড়িতে কাজকর্ম করে এক পর্যায়ে খানজে আলী তালুকদারের এক খন্ড পতিত জমিতে অস্থায়ী বসতী স্থাপন করে। অতপর বাড়ির সংলগ্ন ১৬ বিঘা জমি বর্গা, একসনা ইজারা, ধান করারির মাধ্যমে খানজে আলী তালুকদারের কাছ থেকে নিয়ে চাষাবাদ করতে থাকে। অতপর এই ১৬ বিঘা জমির উপর আমজেদ খা ও ফজলে খার লোলুপ দৃষ্টি পরে। রেকর্ডের সময় জরিপ কর্মীদের সাথে যোগসাজসে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: গনি তালুকদারের বর্তমান রেকর্ডের ৪০২ নং দাগের ৬৮ শতাংশ জমিসহ ৬ বিঘা জমি রেকর্ড করান। এর ৪ বিঘা জমি খানজে আলী ও আ: আজিজ তালুকদারদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালে এক পর্যায়ে ফজলে খা ও আমজেদ খা গংরা ১৬ বিঘা জমির মালিক খানজে আলী ও আজিজ তালুকদারকে খুন করার উদ্যেশে রাত প্রায় ৮ টার দিকে খানজে আলীর বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। পথে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে ফজলে খা খুন হয়। ফজলের মৃত্যুতে তার ভাই আমজেদ খা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। খানজে আলী তালুকদারেরা ঐ ১৬ বিঘা জমির কাছেও আর ঘেষতে পারে না। খানজে আলী তালুকদার ১৯৬৫ সালে মারা যাওয়ার পর ওই ১৬ বিঘা জমি ভূমিদস্যু আমজেদ খা দখলে নেওয়ার জন্য আমতলী সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করে। আমজেদ খার দায়েরকৃত দেওয়ানী মোকদ্দমা ২ তরফা সূত্রে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে মামলাটি ডিসমিস হয়। যার নং-২৩০/৭৪। ১৯৮৩ সালে উচ্চ আদালতে আপীল করেন তারা। যার নং-৭/৮৩ মামলা চলাকালীন অবস্থায় আজিজ গংরা ধান কাটতে আসলে আমজেদ খার পুত্র রশিদ খা তার স্ত্রীকে ধান ক্ষেতের পাশে ধারালো দা দিয়ে খুন করলে আজিজ তালুকদাররা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। অতপর রশিদ খা তার ছেলে ইলিয়াসকে ঘুম করে আজিজ তালুকদার গংদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এতে উল্টো পিতা রশিদ খা নিজেই ফেসে গিয়ে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেন। আমজেদ খার দায়েরকৃত আপীলটি আবারও ২ তরফা সূত্রে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে মামলাটি ডিসমিস হয়। আমজেদ খা গংরা উচ্চ আদালত হাইকোর্টে দৌড়া দৌড়ি করলেও সেখানে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে মামলাটি ডিসমিস হয়। যার সিভিল রিভিশন নং-১১৪৭/১৯৯৬। তা সত্ত্বেও জমির দখল তারা ছাড়েনি। আমজেদ খা’র নাতি ইলিয়াস উক্ত মোকদ্দমার ২ নং বিবাদী আ: রশিদ হাওলাদারকে ইলিয়াসের নানা বাড়ির সামনের রাস্তার উপর ধারালো দা দিয়ে প্রায় শতাধিক কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে। এরপর ২১/০১/২০০২ ইং তারিখ এই ইলিয়াস আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সফিজদ্দিন হাওলাদারকে কুপিয়ে আহত করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ডাকাতি মামলায় ইলিয়াসের ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা হলেও সে ফেরারী হয়ে নানা অপকর্ম করে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে। ইলিয়াসের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ সে সংখ্যা লগু ১৪ পরিবারকে নির্যাতন করায় তারা অতিষ্ঠ হয়ে রাতের আধাঁরে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সংখ্যা লগু’রা এ ব্যাপারে মামলা করলেও ভয়ে ডাকাত ইলিয়াসকে আসামী করেনি। আমজেদ খা’র ২য় পুত্র ছালাম খা। ছালাম খা’র পুত্র লিমন ও স্ত্রী লুৎফা এরা সম্মিলিত ভাবে ২০/২৫ বিঘা জমি জবর দখল করে আছে। এছাড়া ৭/১০/২০১৮ ইং তারিখে পার্শেবর্তী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবু হানিফের পুত্র জহিরুল ইসলাম (২৬)কে ছালাম খার স্ত্রী লুৎফা বেগম ফোন দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনে। টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে লিমন খা, পিতা ছালাম খা, মাতা লুৎফা ও রিয়াজ খা গংরা ধারালো দা দিয়ে জহিরুলকে এলোপাতালি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। বর্তমানে জহিরুল পঙ্গু হয়ে জীবন-যাপন করছে। লিমন খা’র বিরুদ্ধে পটুয়াখালী মামলা রয়েছে যার নং-৩০, তারিখ-১৬.৭.২০১৭ ইং, তালতলী থানার মামলা নং-৩, ১১.৭.২০১৫ ইং ধারা-৩২৫.৩০৭.৩৭৯.৪৪৮, ঝালকাঠি থানায়ও মামলা রয়েছে। ছালাম খা’র পার্শের বাড়ির চুন্নু হাওলাদারের বসত ঘরে ঢুকে মারধর করে ঘরের মালামাল লুটপাট করে নেয়। এতে চুন্নুর পিতা-রফিক হাওলাদার তালতলী থানায় মামলা করলেও কোন সুফল পায়নি। ছালাম খা গংরা বাড়ির পাশে সরকারী গাববাড়িয়া খালে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে ও নেট জাল দিয়ে বাঁধ দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার খাল দখল করে সারা বছর মাছ ধরে আসছে। বর্ষার মৌসুমে ফসলের ক্ষতিসহ এলাকার অন্য কেহ জাল ফেললে মাছ ধরলে তাদের জাল কেটে ফেলে বা রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গনি তালুকদারের সন্তানরা ও প্রকৃত জমির মালিকরা গোপনে ও সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশ প্রধান ও র‌্যাব প্রধানের সহযোগিতা কামনা করছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com