শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চকরিয়ায় টেন্ডার ছাড়াই সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ লামায় বেইলি ব্রিজ ধসে যোগাযোগ বন্ধ ভাঙ্গায় ফেনসিডিলসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব-১০ তালাক প্রাপ্ত স্বামীর সাথে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ ৫ দিন পর কালীগঞ্জে ধান ক্ষেত থেকে স্ত্রীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার দুর্গাপূজা ঘিরে গুজব, বিশৃঙ্খলা, অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর বসালে কঠোর ব্যবস্থা-জেলা প্রশাসক জামালপুরের নান্দিনায় রেলওয়ের জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বন্যা সৃষ্টির সকল প্রতিকূলতা পরিষ্কার করতে চাই-ডিসি লক্ষ্মীপুর বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আলেমদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে-সুনামগঞ্জে গণ সমাবেশে জমিয়ত কলারোয়ায় বিদেশে পাঠানোর নামে ৮লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া বাবলুর শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ী থানা বিএনপি সভাপতির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

৯৯৯-এ প্রথম ফোন করেন শান্ত, লোকেশন বের করেন গুগল ম্যাপে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা চেয়ে সবার আগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছিলেন ইমাম হোসেন শান্ত (১৮) নামের এক যাত্রী। ফায়ার সার্ভিস তাকে জানিয়েছিল, ‘আমাদের নৌযান বরিশালে। যেতে একটু দেরি হবে। আপনার লোকেশন বলুন।’ নদীর মাঝে পড়ে থাকা লঞ্চে তখন আগুনের শিখা। শান্ত বুঝতে পারছিলেন না কোথায় আছেন। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে মোবাইলে নেট সংযোগ নেন। খোলেন গুগল ম্যাপ। এরপর ফায়ার সার্ভিসকে জানান লোকেশন। কিন্তু ঘটনাস্থলে নৌ-দমকল আসে এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট পর। এ ধরনের অগ্নিনির্বাপনে যে ধরনের যান ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস, দেশে সেটা আছে মাত্র দুটি। একটি পটুয়াখালীতে, আরেকটি বরিশালে। বরিশালের নৌ-দমকলের জলযানটি ২২ বছরের পুরনো। বয়সের ভারে গতিও কমেছে ওটার। তাই দ্রুত যেতে পারেনি ঘটনাস্থলে।
ঝালকাঠির ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা রওনা দেন সাধারণ ট্রলারে করে। ততক্ষণে পুরো লঞ্চেই আগুন ধরে যায়। সাধারণ ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ায় সময়মতো ও দরকারি গতিতে পানি ছিটাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতেও বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
ফায়ার সার্ভিসের অপেক্ষা করতে করতে অনেকের গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছিল। এমন দৃশ্য দেখার পরই মোবাইলটাকে পলিথিনে ভরে নেন শান্ত। বাকি সব ফেলে ঝাঁপ দেন নদীতে। কিছুটা সাঁতরানোর পর এলাকাবাসী তাকে টেনে ট্রলারে করে তীরে নিয়ে আসে। এরও প্রায় একঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আসে ঘটনাস্থলে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে প্রথম খবর দেওয়া তরুণ যাত্রী শান্ত। তিনি নিজেও লঞ্চ থেকে বের হওয়ার সময় পায়ে আঘাত পান। তবে চোখের সামনে মানুষের আগুনে পোড়ার দৃশ্যটাই তাকে ভোগাচ্ছে বেশি। শান্তর বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার চান্দখালী এলাকায়। স্থানীয় মোশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন। একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর বিকাল আড়াইটার দিকে উত্তরার মামার বাসা থেকে সদরঘাটে যান। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন। দ্বিতীয় তলার ডেকে সিঁড়ির পাশে ছিল তার আসন।
শান্ত বলেন, “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ টের পাই পিঠে তীব্র গরম লাগছে। চোখ মেলে দেখি সব অন্ধকার। রং পোড়ার গন্ধ। কালো ধোঁয়ায় কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। লঞ্চও চলছে না। নারী, পুরুষ ও শিশুদের কান্নার শব্দ আসছিল কানে।
শান্ত আরও বলেন, ‘ইঞ্জিনের পাশে ছিল দুটি মোটোরসাইকেল, এছাড়াও লঞ্চের হোটেলের দুটি সিলিন্ডার এবং লঞ্চের জ্বালানির কয়েকটি গ্যালন। এর মধ্যে বিকট শব্দে কি যেনও একবার বিস্ফোরণ হলো। তারপর সব কিছু আরো আগুন লেগে যায়’।
সিঁড়ির পাশেই ছিলাম। ইঞ্জিন বরাবর দোতলার সিঁড়ির পাশে দেখি আগুন। নিচে ইঞ্জিনের পাশেও আগুন। কোনোরকম দোতলা থেকে নামি। লঞ্চের বাইরের দিকে যে বাড়তি অংশটা থাকে, সেখানে যাই। পাশ দিয়ে হেঁটে সামনের দিকে এগোতে থাকি। দেখি একজনের গায়ে আগুন ধরেছে, তাকে আরেকজন ঠেলে পানিতে ফেলে দিলো। ওই সময়কার চিৎকারগুলো যে কত ভয়ানক ছিল, না শুনলে বিশ্বাস করবে না কেউ।
কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। রাত তখন ৩টা ১৩। হঠাৎ মনে পড়লো ৯৯৯-এর কথা। ফোন দিলাম। ১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড কথা হয় অপর প্রান্তে। তারা আমার লোকেশন জানতে চাইলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি। এরপর লাইন কেটে মোবাইলের নেট কানেকশন অন করি। গুগল ম্যাপে যাই। লোকেশন দেখে তাদের জানাই। ততক্ষণে আগুন আরও বেড়েছে।”
খানিকপরই ৯৯৯ থেকে ফোন করা হয় শান্তকে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে কানেক্ট করে দেয় তারা। লঞ্চের অবস্থান গাবখান ব্রিজের পাশে বলে ফায়ার সার্ভিসকে জানান শান্ত। বলেন, “বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম আমাকে বললো, ‘আমাদের নৌযান বরিশালে। ঝালকাঠি পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে। আপনারা অপেক্ষা করুন।’
এ সময় ৯৯৯ থেকে শান্তকে আরও একটি ফায়ার স্টেশনে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। সেটা ঝালকাঠি না খুলনা ফায়ার স্টেশন, শান্ত নিশ্চিত হতে পারেননি। এ দফায় সাড়ে চার মিনিট ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি সেবার সদস্যদের সঙ্গে শান্তর কথা হয়।” লঞ্চটির সব জায়গায় তখন আগুন। ভাটার টানে লঞ্চটি তখন গাবখান ব্রিজ থেকে দূরে সরে যায়।
শান্তর ভাষায়, ‘আগুন দেখে এলাকাবাসী ট্রলার নিয়ে লঞ্চটির দিকে যাচ্ছিল। তবে আগুনের তীব্রতায় ট্রলার পাশে ভিড়তে পারেনি। তারা যাত্রীদের নদীতে লাফিয়ে পড়তে বলেন। এসময় অনেকে ঝাঁপ দেন।’ রাত ৩টা ২০ মিনিটে ৯৯৯ থেকে আবার ফোন দেওয়া হয় শান্তকে। তখন ফোন রিসিভ করতে পারেননি। পরের একঘণ্টা তার সঙ্গে কেউ আর যোগাযোগ করেনি।
শান্ত বলেন, ‘লঞ্চে আর থাকা যাচ্ছিল না। দেখলাম অনেকের পায়ের চামড়া ফ্লোরে লেগে যাচ্ছে। রক্তও বের হতে লাগলো অনেকের। যাদের প্লাস্টিকের জুতা ছিল, তাদের জুতা আটকে গেলো মেঝেতে। মানুষ কোথাও দাঁড়াতে পারছিল না। এরপর আমি মোবাইলটা পলিথিনে ভরে নদীতে ঝাঁপ দিই।’
ভোর সাড়ে ৪টায় ফায়ার সার্ভিস আবার শান্তকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আমরা এসেছি, আপনি কোথায়?’ তখন শান্ত তাদের জানায়, ‘আমি তীরে এসেছি। ঠিক আছি।’ শান্ত ফোন করার এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট পর ঘটনাস্থলে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর শান্ত বাড়ি ফিরে যান। ২৬ ডিসেম্বর ফের ঢাকায় আসলে তার সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের কথা হয়।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দেরিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সহকারী পরিচালক (বরিশাল) কোবাদ আলী সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরুতেই আমাদের ঝালকাঠির টিম রেসপন্স করে। তবে কুয়াশার কারণে নদীর মাঝে পৌঁছানোটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ঝালকাঠির লঞ্চঘাট থেকে ট্রলার নিয়ে তারা স্পটে যায়।’ এ ধরনের অগ্নিকা- নির্বাপনে যেসব যান ব্যবহার হয় সেসবের সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। বরিশাল ও পটুয়াখালীতে দুটি নৌ-দমকল জলযান রয়েছে। সেগুলোও প্রায় দুই যুগ আগেকার। সেগুলোর মাধ্যমে পাম্প করে পানি দেওয়া যায়। তবে ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকায় সেগুলো আসতে পারেনি। এ ঘটনার পরপরই নতুন একটি নৌ-দমকল জলযান চেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে চাহিদাপত্র দিয়েছে বরিশাল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com