মন্ত্রিসভা বৈঠক নিয়ে ব্রিফিং করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সনদ ছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্টের মতো শপিংমলে প্রবেশ করা যাবে না। একই সঙ্গে ট্রেন, প্লেন, লঞ্চেও চলাচল করা যাবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক নিয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে (মূলত ছিলেন প্রধান অতিথি) একটি সভা হয়েছে। সেখানে যেই বিষয়টি পয়েন্ট আউট করা হয়েছে, সেটা হলো ভ্যাকসিনটা আরও জোরদার করতে হবে। বুস্টারটাকে আরও কীভাবে কমফোর্ট্যাবল ও বিস্তৃত করা যায় সেটা দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওমিক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমরা এখন থেকে রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে যারা উঠবে তাদের একটা টাইম দিয়ে, ডাবল ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যাতে না ওঠে। সেরকম একটা চিন্তা-ভাবনার দিকে যেতে হবে।’ ‘(রেস্টুরেন্ট, শপিংমলে প্রবেশ এবং প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে ওঠা) ওঠার ক্ষেত্রে ডাবল ভ্যাকসিনেশনের একটা ইমপোজিশন (টিকার দু-ডোজ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ) আসতেছে।’ রেস্টুরেন্টে সনদ যাচাই কীভাবে মনিটর করা হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোবাইলে সফট কপি থাকবে কিংবা হার্ড কপি থাকবে। কোনো দেশে পুরো জনসংখ্যা কোনোভাবেই চেক করা সম্ভব নয়, স্যাম্পল হিসেবে করা হয়। ভিজিল্যান্স টিম থাকতে প্রত্যেক শহরে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক আছেন তারা চেক করবেন। আমাদের ল-এনফোর্সিং এজেন্সি চেক করবে।’ কবে থেকে এটা কার্যকর করা হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একটা সময় দিয়ে দিতে বলেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রম ঠেকাতে গেলে স্ট্রিক্ট ভিউতে আপনাতে যেতে হবে। গতকাল দেখলাম আমেরিকায় এক মিলিয়ন আক্রান্ত হয়েছে। ভারতেও খুবই সিভিয়ার অবস্থা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা (সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা) অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে দু-একদিনের মধ্যে পরামর্শ করে সময় দিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা অর্ডার করে দিচ্ছি।’ এছাড়া বাড়ির বাইরে কোনোক্রমেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘অলরেডি আমরা বলে দিয়েছি, এখন থেকেই মোটিভেশন ও প্রোমোশনার কাজ করবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে।’
শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ যেতে টিকা বাধ্যতামূলক: টিকা ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল ও কলেজে যেতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধানত হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ১২ বছরের বেশি বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়েই স্কুলে আসতে হবে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করতে হবে।
দেশে করোনার টিকাগ্রহীতা ১৩ কোটি ছুঁই ছুঁই: রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে টিকাদান কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশে গত বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদানের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে ফাইজার, সিনোফার্ম, মডার্না ও সিনোভ্যাকসহ আরও চার ধরনের টিকা যুক্ত হয়। আজ পর্যন্ত (৪ জানুয়ারি) দেশে মোট টিকা নিয়েছেন প্রায় ১৩ কোটি মানুষ। এখন পর্যন্ত দেশে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার ১১১ জনে। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৬ জন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৬৪০ জন। এছাড়া বুস্টার ডোজ গ্রহীতা ২ লাখ ৭ হাজার ১৮৫ জন। গত মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজসহ মোট ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে প্রথম ডোজ ৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৩২ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৩ লাখ ৭১ হাজার ১৭৮ জন ও বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৩৫ জন।
এ সময়ে প্রথম ডোজের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪০৮ জন ও নারী ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪২৪ জন, দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৫ জন ও নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৩ জন ও বুস্টার ডোজের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ৪২০ জন ও নারী ১৭ হাজার ১১৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ জন শিক্ষার্থী টিকা নেন। তার মধ্যে প্রথম ডোজের টিকাগ্রহীতা ৪১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৯৩ জন ও দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহীতা ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৭১ জন।
এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ৯৫২ জন টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকাগ্রহীতা ১ কোটি ৭৩ লাখ ১১ হাজার ৫৮২ জন ও দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহীতা ৯০ লাখ ৯২ হাজার ৩৭০ জন।