সরকারে যতদিন আছে আওয়ামী লীগও ঠিক ততদিনই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকারে না থাকলে আওয়ামী লীগও থাকবে না। একাত্তরে যেমন কাউকে কাউকে বাসাবাড়ির সামনে লিখে রাখতে দেখা গেছে যে, ‘এখানে রাজাকার নেই’, তেমনই রাস্তার মোড়ে বিলবোর্ডে লিখা থাকবে ‘এখানে কেউ আওয়ামী লীগ নেই, আওয়ামী লীগের লোক নেই’। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে মন্তব্য গয়েশ্বর বলেন, অনেকদিন আগে থেকেই আপনার (শেখ হাসিনা) একমাত্র জামাতা দুবাইতে আছেন। তিনি নজরদারিতে নয়, গৃহবন্দি। দেশেও আসতে পারছেন না, কোথাও যেতেও পারছেন না। অপরাধ ছিল মুদ্রাপাচার। জামাই টাকা পাচার করেছেন, সেটা শাশুড়ির আঁচলের টাকা নাকি জামাইয়ের পকেটের টাকা, তা তো জাতির সামনে আসে না। সুতরাং যাওয়ার পথটা কিন্তু রুদ্ধ, থাকার পথটা নয়। যত অপরাধ করুক, অপরাধী যদি ক্ষমা চায় দেশের মানুষ ক্ষমা করবে। এ সংস্কৃতি ও ইতিহাস দেশে আছে।
তিনি বলেন, এখন শত অপরাধের জন্য যদি ক্ষমাপ্রার্থী হন এবং প্রায়শ্চিত্ত করেন এবং সরকার থেকে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনের ঘোষণা দেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন, দেখবেন দেশের মানুষ আপনার (শেখ হাসিনা) প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। ভোট হয়তো আপনাকে না-ও দিতে পারে, কিন্তু ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিলে মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারে। তাতে দেশে বসবাস করার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। সে পথ আপনি অবলম্বন করবেন কি না তা আপনার বিবেচ্য বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্রের পাতা খুলতেন বা আমাদের দেশের সামাজিক সংস্কৃতি বহাল রাখতে পারতেন তাহলে আমার বিশ্বাস পথে ফিরতে পারতেন। এ পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই আপনার পরিত্রাণের জন্য। আপনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, যদি জীবিত থাকেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে জেলে দেওয়া হয়েছে। জামিন দেননি, চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন, অনুরূপভাবে অন্য কোনো সরকার যদি আপনার পথ অনুসরণ করে তাহলে আপনার পথ কতটুকু ভয়াবহ তা নিশ্চয় পরিমাপ করা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, অন্য দেশে অপরাধ হয় হচ্ছে বলে আমাদের দেশেও অপরাধ হতে পারে, সেই লাইসেন্স আপনাকে কে দিয়েছেন? আমেরিকা আমাদের দেশের সাতজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তাহলে কি আপনিও তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন?
গয়েশ্বর বলেন, মাত্র সাতজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় দেশব্যাপী তোলপাড়। একটি অংশের বুকে কাঁপুনি ধরেছে আর বৃহত্তর অংশ আশার আলো দেখছে। দুষ্টের দমনে আমরা ব্যর্থ হলেও গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখ-কান খোলা। তারা নিন্দা করছে বা সরকারকে এ পথ পরিহার করতে সতর্ক করছে, পরামর্শ দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন কারো কারো ভিসা বাতিলের খবর আসছে। দিন দিন পথ রুদ্ধ হচ্ছে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।