মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

তৈরি পোশাক খাতে ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাব

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন ক্রেতারা

বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে দেশের তৈরি পোশক খাতে। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদে বলা হয়েছে,ইউরোপের দেশ জার্মানি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রয়াদেশ পায় বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা। সরবরাহের কথা ছিল ডিসেম্বরে। ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন হয়। ক্রেতা প্রতিনিধির পরিদর্শনে পণ্যের মান পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয় কারখানা। কিন্তু রফতানির তারিখ এগিয়ে এলেও পণ্য আমদানির বিষয়ে তাড়া দেখা যাচ্ছিল না ক্রেতার। একপর্যায়ে কারখানা মালিক যোগাযোগ করলে ক্রেতা জানান, ওমিক্রন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কারণে তারা পণ্যের সরবরাহ নিতে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কভিড-১৯ শনাক্তের পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। যার প্রভাবে ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের দেয়া প্রায় সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি নাজুক ছিল ২০২০ সালজুড়েই। যদিও সরকারি সিদ্ধান্তে কভিডের মধ্যে রফতানিমুখী কারখানা সচল রাখা হয়। যার প্রভাবে ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে কম হলেও ক্রয়াদেশ পাচ্ছিলেন পোশাক শিল্প মালিকরা। পরে পশ্চিমা দেশগুলোয় ব্যবসা-বাণিজ্য সক্রিয় হতে শুরু করলে বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫৬, ৪১ দশমিক ৬৬, ৫৩ দশমিক ২৮, ৩২ দশমিক ৩৪ এবং ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ ধারায় গড়ে প্রতি মাসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলারের রফতানি সক্ষমতার পোশাক খাত এক মাসে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পোশাক রফতানি করেছে। মালিক সংগঠন প্রতিনিধিদের পক্ষ হতে প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যের বিষয়েও বলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ সরবরাহ নিয়ে সংশয়ের জানান দিচ্ছেন তারা।
শুধু ওমিক্রন নয়, আরো বেশকিছু কারণে ক্রয়াদেশ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পোশাক শিল্প-কারখানার মালিকদের মধ্যে। এর অন্যতম হলো ক্রেতার পক্ষ থেকে যথাযথ প্রয়োজন নিরূপণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ প্রদান। এদিকে কভিডের প্রভাবে দীর্ঘ বিরতির পর উৎপাদন সক্ষমতার বেশি ক্রয়াদেশ নিয়েছেন কারখানা মালিকরা। আবার অনেক ছোট কারখানা বন্ধ হওয়ায় সাব-কন্ট্রাক্টের সুযোগ কমে গেছে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ, কর্মচ্যুতি ও কভিডের প্রভাবে পেশা পরিবর্তনের কারণে রয়েছে কর্মী সংকট। সব মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ পেলেও তা সরবরাহ নিয়ে সংশয় প্রকাশ শুরু করেছেন পোশাক শিল্পোদ্যোক্তারা।
জানতে চাইলে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও আছে। নানা কারণে সরবরাহ দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে। সবাইকে বলছি ক্রয়াদেশ দেখে বুঝে নিতে। দাম বাড়িয়ে নিতে বলছি। ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরবরাহের সক্ষমতাও থাকতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা ফতুল্লা অ্যাপারেলস। ইউরোপে নিয়মিত পোশাক রফতানিকারক এ প্রতিষ্ঠানকে বছরে চারবার ক্রয়াদেশ দেয় ফ্রান্সের ক্রেতা ফোপেম। প্রতিবারই ১৮-২০ হাজার পিস সরবরাহের ক্রয়াদেশে ফোপেম আমদানি করে মহিলাদের প্যান্ট, টি-শার্ট ও নাইট ড্রেস। এ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে ক্রয়াদেশ এসেছে, তাতে চাওয়া হচ্ছে ৩৫ হাজার পিসের সরবরাহ। এ অতিরিক্ত পণ্য সব বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নিট পোশাক প্রস্তুতকারকরা বলছেন, বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ নিয়ে ভীতির কারণ রয়েছে। দেখা গেছে, একটা বিরতির পর ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ দেন। তাদের লক্ষ্য থাকে সব বিক্রির। কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয় না। অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ দেয়ার পরবর্তী প্রভাব হিসেবে পণ্য মজুদ হয়ে যায়, বিক্রি হয় না। ফলে পরের মৌসুমে ক্রয়াদেশ কম দেন ক্রেতারা। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও ভয় সেখানেই। বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ ক্রেতারা দিয়েছেন, কারখানা মালিকও গ্রহণ করেছেন। এখন এসব পণ্য মজুদ হতে পারে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি, ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির প্রবণতায় অনেক মালিক কারখানার উৎপাদন লাইন বৃদ্ধি করে সক্ষমতা বাড়িয়েছেন। কিন্তু ক্রেতারা পণ্য নিয়ে যদি বিক্রি না হয় তাহলে তো আবারো ক্রয়াদেশ কম দেবেন, তখন কী হবে তা ভাবছেন না অনেকে। ক্রেতারা প্রক্ষেপণ করেছিলেন দুই লাখ পিস টি-শার্ট বিক্রি করে ফেলবেন, ওমিক্রন প্রেক্ষাপটে বিক্রি হলো এক লাখ, বাকি এক লাখ মজুদ রয়ে গেল। এর প্রভাব দেখা যাবে পরবর্তী মৌসুমের ক্রয়াদেশে। বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, সরবরাহ নিয়ে সংশয়ের প্রথমেই আছে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ থাকলেও পর্যাপ্ত কর্মী নেই। দ্বিতীয়ত, গত দেড়-দুই বছরে বিক্রি কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ দিয়েছেন ক্রেতারা, কিন্তু বিক্রি হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ওভেন পোশাক রফতানিকারকদের সংশয়ের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধের তৎপরতা শুরু হয়েছে। পোশাক বিক্রির অনেক আউটলেট বন্ধ রাখা হয়ে গেছে। অনেকে বাড়ি থেকে বের হন না। কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় সব মিলিয়ে ব্যাপক কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পণ্য নিয়ে কী হবেÍএমন ভাবনা ভাবতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা পোশাকের আমদানি এখন করব না পরে করব, এমন দোদুল্যমান মনোভাব প্রকাশ করছেন। পণ্য নেয়ার বিষয়ে ক্রেতাদের তাড়া নেই। কিন্তু এদিকে কারখানা মালিকরা ক্রয়াদেশ নেয়ার পর সব কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন বা কিনতে শুরু করে দিয়েছেন। ফলে চিন্তার জায়গাটা হলো ক্রয়াদেশ নিলেই তো হবে না, রফতানিও তো করতে হবে।
ক্রেতারা পণ্য নেয়ার সময় পেছাচ্ছেন, ধীরে চলো নীতির জানান দিচ্ছেন। ডিসেম্বর থেকে এ মনোভাব দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদেরÍএসব তথ্য জানিয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, অনেক কারখানায় দেখা যাচ্ছে, ক্রেতা মনোনীতদের মাধ্যমে পরিদর্শন চূড়ান্ত হয়ে পোশাকের মান অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু ক্রেতার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে উৎপাদনের এ রকম একটা পর্যায়ে ক্রেতারা ভেসেলের নাম জানিয়ে বলেন পণ্য পাঠাতে। কিন্তু এখন পণ্য উৎপাদন হয়ে রফতানির জন্য প্রস্তুত কিন্তু ক্রেতার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমরা পণ্য পাঠাব কোন ভেসেলে? কীভাবে? স্বাভাবিক সময়ের চাহিদায় ক্রেতারা এমন সময়ে আকাশপথে পণ্য পাঠানোর চাপ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
এদিকে ইউরোপের বৃহৎ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও ক্রয়াদেশ সরবরাহ নিয়ে সংশয়ের বিষয়টিতে একমত পোষণ করেছেন। ওমিক্রনের প্রেক্ষাপটে ক্রেতাদের ধীরে চলো নীতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তারা বলছেন কারখানা মালিকরা উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি আমলে না নিয়েই বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ গ্রহণ করেছেন। যার মাশুল দিতে হতে পারে।
বাংলাদেশে ইউরোপের বড় একটি পোশাক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পোশাক কারখানা মালিকরা সক্ষমতার চেয়ে বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কভিডের প্রভাবে অনেক কর্মী খাত ছেড়েছেন। অনেকে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে কর্মী সংকটে রয়েছেন পোশাক শিল্পোদ্যোক্তারা। ছোট অনেক কারখানা ছিল যেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সাবকন্ট্রাক্টিংয়ের সুযোগ অনেকটাই সীমিত এখন। আবার অনেক বড় কারখানাও বন্ধ হয়েছে। এটাই মূল কারণ। এ প্রেক্ষাপটেই অনেকে ক্রয়াদেশ নিয়েছেন, কিন্তু সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে পণ্যের সরবরাহ নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে, ফলে ক্রয়াদেশ পেলেও রফতানি সম্ভব নাও হতে পারে। আরেকটি কারণে সংশয় রয়েছে। ক্রেতাদের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে। এটি একটি উদ্বেগের বড় কারণ। ক্রেতারা কেউই পণ্য ডাম্পিং করতে চান না ক্ষতি মোকাবেলার কারণে। যার কারণে অনেক ক্রেতাই ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com