পড়াশুনা করার অদম্য ইচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা মার অভাবের সংসার। খাতা কলম বা শিক্ষা সামগ্রী কেনা তো দূরে থাক নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা। তবুও পড়তে হবে। এমন ইচ্ছেকে ধারন করে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির কন্যা সিলভিয়া পাউরিয়া স্কুল বন্ধের দিন অন্যের জমিতে দিন মজুরীর কাজ আর রাতে পড়াশুনা করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৯৩ পযয়েন্ট নিয়ে পাস করেছেন। সে কোতয়ালীবাগ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এ সাফল্য অর্জন করেন। সিলভিয়া পাউরিয়া উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের ফনি পাউরিয়ার মেয়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফনি পাউরিয়ার তিন মেয়ের মধ্যে ছোট সিলভিয়া পাউরিয়া। ছোট্ট একটি টিনের চালা দেওয়া ঘরে জবু থবু অবস্থায় বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে বসবাস করেন। তার বাবার নিজের কোন জায়গা জমি নেই। তার পিতা-মাতা দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমি ও কৃষিক্ষেতে কাজকর্ম করে সংসার চালানোর পাশাপাশি অন্য দুই মেয়েকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছন। এখন বয়সের ভারে ও অসুস্থতার কারণে পরিশ্রম করতে পারেন না। এতে সংসারে প্রতিয়িনত অভাব লেগেই থাকে। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাস সেভেনে পড়–য়া মেয়ে শিলভিয়া পাউরিয়াকে অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পাঠান। এরপর থেকে সিলভিয়া শুক্রবার ছুটির দিন ও অন্যান্য সময়ে মানুষের জমির কাজ চুক্তি করে সম্পন্ন করে দেন, সেখান থেকে যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতার অভাবের সংসার আর নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ পাওয়ার পর সিলভিয়া পাউরিয়ার এই ফলাফলে তার পরিবার ভীষণ খুশি। তার বাবা ফনি পাউরিয়া বলেন, আমার যদি টাকা থাকতো বা আমি যদি আগের মত কাজ করতে পারতাম তাহলে আমার মেয়ের জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করার পিছনে খরচ করতাম। শিলভিয়া বলেন, সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার উপরে যদি না থাকতো এবং লেখাপড়ার খরচ আমাকে জোগাড় করতে না হতো তাহলে পরীক্ষায় আরো ফলাফল ভালো হতো। সিলভিয়া আরো বলেন আমি ডাক্তার অথবা নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু অর্থ ছাড়া এই স্বপ্ন পূর্ণ হবে না। তবে আমি লেখাপড়ার সুযোগ পেলে এর থেকে আরো ফলাফল করব। কোতোয়ালীবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, সিলভিয়া পাউরিয়া অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। ক্লাশের পড়াশুনায় বেশ মনোযোগী। কিন্তুু দারিদ্রতার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেলে সে আরো উন্নতি করবে।