অনেকটা অনাড়ম্বর পরিবেশেই ৭৩ তম শুভ জন্মদিন পালন করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বৌদ্ধ মনীষী ও পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের উপসংঘরাজ ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো। পাহাড়ের বাতিঘর দিঘীনালার অনাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটির মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো একাধারে একজন স্বপ্নবাজ, শিক্ষানুরাগী এবং প্রতিথযশা সংঘমনীষা। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি দিনটি উদযাপন উপলক্ষে অনেক ভক্ত, অনুরাগী, শুভাকাঙ্খী আর সহকর্মীরা আসেন ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর কর্মস্থল ও আবাসস্থল মিরপুরের শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে। তিনি ঐতিহ্যবাহী শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ এবং স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের প্রধান ট্রাস্টি। সর্বাগ্রে শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘের মধ্যে উপাধ্যক্ষ ভদন্ত লোকপ্রিয় মহাথের মহোদয়ের নেতৃত্বে ছয় জন ভিক্ষু ও একজন শ্রামণের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর ৭৩তম জন্ম দিনের শ্রদ্ধাসহগত শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন শুরু হয়। অতপর পহেলা ফেব্রুয়ারি সকাল সাত ঘটিকার দিকে বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে মি. রিয়েল দেওয়ান ও মি. প্রীতিময় চাকমার নেতৃত্বে ফুলের তোড়া প্রদান ও ৭৩তম জন্ম দিনের কেক কাটা হয়। এছাড়াও রাঙ্গামাটির মোনঘরের পক্ষ থেকে মানিক, মৃণাল কান্তি চাকমা, চিংম্রা মারমা, বুলবুল বড়ুয়া ও নিগিরাধন চাকমাসহ বেশ কয়েকজন পুষ্পস্তবকসহ কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। বৌদ্ধিক রীতি মেনে অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্থ থেরোবাদী বৌদ্ধা সন্ন্যাসী ভেন প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোকে কোন দিনই আয়োজন করে জন্মদিন পালন করতে দেখা যায়নি। জানা যায়, অনাড়ম্বর পরিবেশে হলেও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন তাঁর জন্মদিন পালনের রেওয়াজ শুরু হয় আজ থেকে বছর তিনেক আগে। প্রথমবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করেন মানবতাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর একজন আস্থাভাজন উপাসিকা মিস. এলিনা চাকমা। এ বছরও এলিনা চাকমা পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা ও উপহার প্রদান পূর্বক ৭৩ তম জন্মদিন পালন করেন। সর্বোপরি এ বছরই শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অন্যতম হিতাকাক্সক্ষী ও পুণ্যার্থী ধর্মীয় সংগঠন ‘ত্রিরত্ম সংঘ’ কর্তৃক ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর ৭৩তম জন্ম দিনটি সংঘদান, বুদ্ধমূর্তি দান, সহস্র প্রদীপ দান, চীবর দান ও ধমীর্য় আলোচনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিপালন করা হয়। ৭৩তম
জন্মদিন উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলার আলোকবর্তিকা এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে অনেকেই ফুলের শুভেচ্ছা জানান। আন্তরিক শুভেচ্ছা ও জন্মদিনের শুভকামনা জানিয়ে তার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করেন বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের রেক্টর প্রফেসর তরুণ কান্তি বড়ুয়া, অধ্যক্ষ সুদীপ কুমার মন্ডল, কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি মো. জাকিদুল ইসলাম, মোস্তাকিয়া মাহমুদা পারভীন, অভিভাবক প্রতিনিধি ড. অমর কান্তি চাকমা ও রেলী চাকমা। এদেশের শিক্ষা প্রসারে অনন্য ভূমিকা রেখে চলা ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর ৭৩তম জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা ও কল্যাণ কামনা জানিয়েছেন বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের প্রভাষক মতিয়া খান, রুলী খন্দকার, সুশীল চাকমা, হ্লাচিংমং মারমা প্রমুখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভকামনা জানিয়েছেন উপসংঘরাজ ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর জন্য। প্রত্যেকেই মানবতাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর জন্য প্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন এবং করুণাঘন বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন তার নিরোগ ও শতায়ু জীবন কামনা করে। উল্লেখ্য, আলোকিত মানুষ ও মানবতাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহারোর জন্ম ১৯৫২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি, খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া গ্রামে। রং বস্ত্রধারী একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়েও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছেন বাংলা সাহিত্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রি। মোনঘর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়, বনফুল শিশু সদন, বনফুল গ্রীনহার্ট কলেজের মতো নামকরা বহু প্রতিষ্ঠান গড়ার মাধ্যমে মানবতাবাদী এই ভিক্ষু তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম।