শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

আবাদযোগ্য জমির ৮৫ ভাগ ভূমির উর্বরতা শক্তি কমে গেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা 

ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস ও অপরিকল্পিত চাষাবাদের ফলেও অনেক অঞ্চলের মাটি নষ্ট হচ্ছে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের আবাদযোগ্য জমির ৮৫ ভাগ ভূমির উর্বরতা শক্তি কমে গেছে। চাষযোগ্য কোনো জমিতেই নেই প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন। এছাড়া জৈব পদার্থের অভাব রয়েছে ৩৮ শতাংশ জমিতে। তাই ভবিষ্যতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার ধরে রাখতে হলে জমির পুষ্টি ও উর্বরতা শক্তির বিষয়ে এখনই বিশেষ নজর দেয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, নগরায়ণসহ নানা কারণে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। পরিসংখ্যান বলছে, চার দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে আবাদি জমি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট। ১৯৮০ সালে মোট জমির ৬৫ শতাংশের বেশি ছিল আবাদি। ২০১৯ সালে তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে আবাদি জমির পরিমাণ কমলেও এক ফসলি ও অনাবাদি জমির রূপান্তর ঘটেছে দ্রুত। দেশের এখন দুই ফসলি জমি প্রায় ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২১ শতাংশ। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শস্য উৎপাদনে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ১৯৮০ সালে মোট জমির তুলনায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ৬৫ দশমিক ৫০ ও ২০০০ সালে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে আসে। কৃষিজমির পরিমাণ কমার এ হার পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে মোট জমির মাত্র ৫৮ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল কৃষিজমি, যা ২০১৯ সালে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসে।
১৯৮০ সালে এক ফসলি জমির পরিমাণ ছিল মোট আবাদি জমির প্রায় ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ। যা ১৯৯০ সালে ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশে, ২০০০ সালে ৩৪, ২০১০ সালে ৩০ দশমিক ১ ও ২০১৯ সালে ২৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। তবে এই সময়ে দুই ফসলি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮০ সালে দুই ফসলি জমির পরিমাণ ছিল মোট আবাদি জমির প্রায় ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ। যা ১৯৯০ সালে ৪০ দশমিক ১ শতাংশে, ২০০০ সালে ৪৭ দশমিক ১, ২০১০ সালে ২৬ দশমিক ৮ ও ২০১৯ সালে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়।
গত চার দশকের ব্যবধানে তিন ফসলি জমির পরিমাণ বেড়েছে। ১৯৮০ সালে তিন ফসলি জমির পরিমাণ ছিল মোট আবাদি জমির মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। যা ১৯৯০ সালে ১০ দশমিক ১ শতাংশে, ২০০০ সালে ১১ দশমিক ৩, ২০১০ সালে ১৫ ও ২০১৯ সালে ২১ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। দেশের ২৩টি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিন ফসলি জমির আবাদ বৃদ্ধি পচ্ছে খুলনা বিভাগে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকি নিয়েই দেশের কৃষিতে সফলতা এসেছে। সময়ের সঙ্গে দেশের বেশির ভাগ কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি কমে গেছে। অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে পানির স্তর বিপজ্জনকভাবেই নেমে গেছে। সেই সঙ্গে কৃষিতে আছে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। পাশাপাশি জমি, উপকরণ ও প্রযুক্তির স্বল্পতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই দেশে কৃষিশস্যের উৎপাদন বাড়ছে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পুলের সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, কৃষিজমি কমার নেতিবাচক প্রভাব উৎপাদনে পড়েনি মূলত দুটি কারণে। এর মধ্যে প্রথমত অনাবাদি ও এক ফসলি জমিকে দ্রুত দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত গত চার দশকের ব্যবধানে হেক্টরপ্রতি ফলন দ্রুত বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। উন্নত জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কারণে হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
তিনি বলেন, ফল আরো বাড়াতে জমিতে আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করতে হবে। বিভিন্ন ফসলের স্বল্পমেয়াদি জাতসহ খরা, বন্যা এমনকি লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া কৃষিবিষয়ক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে আরো সমন্বয় প্রয়োজন। গবেষণা ও সম্প্রসারণে দ্রুত সংযোগ ঘটাতে পারলে কৃষির উন্নয়ন টেকসই করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দুই ও তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরকেই দেশের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে জমি কমার
নেতিবাচক প্রভাব উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাধা হতে পারেনি। গত চার দশকে দেশে চাল ও গমের উৎপাদন তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। এ ধরনের বৈশ্বিক অবস্থান বেশ কয়েকটি শস্যে এসেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত চার দশকে প্রধান চারটি খাদ্যশস্যের হেক্টরপ্রতি ফলন বেড়েছে। ১৯৭০-৭১ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে আউশের হেক্টরপ্রতি ফলন বেড়েছে তিন গুণ। এ সময়ে আমন ও বোরো ধানের হেক্টরপ্রতি ফলন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি এবং গমে তা বেড়েছে চার গুণ। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি খাতের কার্যক্রম এখন শুধু উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কৃষি খাতই এখন দেশের খাদ্যনিরপাত্তা নিশ্চিত করা, মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার। পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকের উন্নয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ কৃষি খাত। কৃষককে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপকরণ সহায়তা, অপ্রচলিত শস্যকে জনপ্রিয় করা ও কৃষিপণ্যকে রফতানিমুখী করতে নীতিসহায়তা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের প্রযুক্তি দ্রুততার সঙ্গে কৃষকের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com