নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বেসরকারি বিজয়ী হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সাল থেকে তিনি না.গঞ্জ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার নিয়ে তৃতীয়। গতকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে ভোট গণনা শেষে ১৯২ কেন্দ্র থেকে আসা প্রাথমিক তথ্যে এ ফল নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে যে ফল ঘোষণা করছেন, সেখান থেকে এখনো পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। পুরো সিটির নির্বাচনই ইলেক্টনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হয়েছে। এরমধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৬৯ হাজার ১০২। আইভী ও তৈমুর আলম ছাড়া মেয়র পদে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়েন ৩৪ জন প্রার্থী। ২০ লাখ বাসিন্দার সিটি করপোরেশনে ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন।
নাসিকে ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক), টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপ-নির্বাচন ও পাঁচ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ইসি সচিব বলেন, সব নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ছিল। তিনটি নির্বাচনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। জাতীয় সংসদের ১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া যে পাঁচটি পৌরসভায় ভোট হয়েছে সেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইসি তার কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সবগুলো ভোট পর্যবেক্ষণ করবে। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ টাঙ্গাইল-৭ আসনের নির্বাচন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও পাঁচ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইভিএমের কারণে ভোটদানে ধীরগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু নারী ভোটাররা সেখানে আসেননি। ফলে ভোটপ্রদান সম্পর্কে তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়েছে। ওইখানে হয়তো একটু সময় লেগেছে। তবে যারাই এসেছে সবার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্যের প্রচার ও নারায়ণগঞ্জে তফসিল ঘোষণার পরে কিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব বিষয়ে ইসিকে অবহিত করা হয়নি, ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এটা আসলে তালুকদার স্যার, ভালো বলতে পারবেন। তবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে যতগুলো অভিযোগ এসেছে, তিনি সবগুলো অ্যাড্রেস করেছেন।
কুমিল্লা-নারায়ণগঞ্জ সিটি আমাদের সর্বোত্তম নির্বাচন: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালালেও তাকে কোনো চিঠি পর্যন্ত না দেওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এ সময় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম বলে দাবি করেছেন তিনি। গতকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন শেষে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমার কথা’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি কিছুটা বিস্মিত। একজন মাননীয় সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাকে কোনো চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে, তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেননি। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিংবা শাস্তিহীন অপরাধের বিভাজন কোথায় আছে? তাহলে অন্যান্য মাননীয় সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চিঠি দেওয়া হলো কেন? এসব বিষয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতার লক্ষণ নয়।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘পত্রিকামতে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন কারণে কিছু সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেও এ সম্পর্কে কোনো সংখ্যা জানা যায়নি । নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এমনকি অন্যান্য নির্বাচনকালে সহিংসতায় নিহতদের কোনো তথ্য নেই। আমরা একসময় তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট, বিশেষত পোলিং এজেন্টদের কাউকে গ্রেফতার করতে বারণ করেছি। তবে ফৌজদারি মামলা বা তাৎক্ষণিক আমলযোগ্য অপরাধ হলে ভিন্ন কথা। আমি নিজে সবসময় গায়েবি মামলার বিরোধিতা করেছি। নির্বাচনকালে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে যায় কেন, তা এক প্রশ্ন। এই নির্বাচনকালেও পুরোনো মামলায় আটক অব্যাহত রয়েছে, যা দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমাদের কার্যকালে সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এটি ছিল আমার অনেক প্রত্যাশার স্থান। কারণ, আমি এর আগে বলেছি যার শেষ ভালো, তার সব ভালো। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আমি চারটি কেন্দ্রের ১৪টি বুথ পরিদর্শন করেছি। এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোনো সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি। বিগত পাঁচ বছরে যতগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার বিবেচনায় আমাদের প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’