মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব কুদস দিবসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষণ

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

বিশ্ব কুদস দিবস উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছেন। (শুক্রবার) তিনি রেডিও ও টেলিভিশনে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে এ ভাষণ দেন। তার ভাষণে পূর্ণ বিবরণ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহিত তাহেরিন ওয়া সাহবিহিল মুনতাজাবিন ওয়া মিন তাবেয়া’হুম বিইহসান ইলা ইয়াওমিদ্দিন।

বিশ্বের সব মুসলমান ভাইবোনের প্রতি দরুদ ও সালাম। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তিনি যেন সবার রমজান মাসের ইবাদত-বন্দেগি কবুল করেন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবার প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঐশী আতিথেয়তার মাসে নেয়ামতের জন্য শোকরিয়া আদায় করছি।

আজ কুদস দিবস। ইমাম খোমেনি (রহ.)’র বিজ্ঞোচিত উদ্যোগে এ দিবসটি নির্ধারিত হয়েছে যা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ও মজলুম ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের ক্ষেত্রে সংযুক্তির বৃত্ত হিসেবে ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক দশক ধরে দিবসটি এ ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বিশ্বের জাতিগুলো কুদস দিবসকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা ফিলিস্তিনের মুক্তির পতাকা উড্ডীন রাখাকে প্রথম ফরজ কাজের মতো নিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের প্রধান নীতি হচ্ছে মুসলমানদের মাঝে ফিলিস্তিন ইস্যুকে গুরুত্বহীন করে তোলা এবং মুসলমানদের মন থেকে ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলা। এখন যে দায়িত্বটি দ্রুততার সঙ্গে পালন করা দরকার তাহলো, এই যে অপরাধটি মুসলিম দেশগুলোতেই তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চরদের মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে তা মোকাবেলা করা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে মুসলিম জাতিগুলোর ক্রমবর্ধমান সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস ও সচেতনতা ফিলিস্তিন ইস্যুর মতো এত বিশাল ইস্যুকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং তাদের অনুগত চাকর-বাকরেরা যতই অর্থ ও শক্তি ব্যয় করুক না কেন, সফল হতে পারবে না।

প্রথম কথা হলো-ফিলিস্তিন দখলের ভয়াবহ বিপর্যয় এবং ইহুদিবাদী ক্যান্সারের টিউমার সৃষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় অপরাধ আর সংঘটিত হয় নি। একটি দেশকে দখলে নিয়ে সেখানকার জনগণকে নির্মম হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে চিরতরে নিজ ঘর-বাড়ি ও ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত করা এবং দশকের পর দশক ধরে এই এই অপরাধ অব্যাহত রাখা-এসবই মানব ইতিহাসে শয়তানির এক নয়া রেকর্ড। এই বিপর্যয়ের প্রধান হোতা হচ্ছে পাশ্চাত্যের সরকার ও তাদের শয়তানি নীতি। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে বিজয়ী সরকারগুলো যেদিন পশ্চিম এশিয়া অর্থাৎ ওসমানী সাম্রাজ্যের এশিয় অঞ্চলকে যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গনিমত হিসেবে গণ্য করে প্যারিস কনফারেন্সে তা ভাগ-বাটোযারা করে নিয়েছিল, সেদিনই তারা তাদের স্থায়ী আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চলের মূল কেন্দ্রে একটি নিরাপদ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা জোরেসুরে উপলব্ধি করেছে। ব্রিটেন বহু বছর আগেই বেলফোর পরিকল্পনার মাধ্যমে এর ক্ষেত্র তৈরি করেছে এবং পুঁজিপতি ইহুদিদের সঙ্গে নিয়ে ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।

তারা সে সময় থেকেই ক্রমেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং চূড়ান্তভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে এই অঞ্চলের সরকারগুলোর অসচেতনতা ও সমস্যাকে অপব্যবহার করে লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে এবং জাতিবিহীন অবৈধ ইহুদিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে।

এই আঘাতের ঢেউ প্রথমে ফিলিস্তিনি জাতি এবং পরবর্তীতে এই অঞ্চলের সব জাতির ওপর এসে আছড়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের পরবর্তী ঘটনাবলীর দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট হয় যে, ইহুদিবাদী সরকার গঠনের পেছনে পাশ্চাত্য এবং ইহুদি কোম্পানিগুলোর মালিকদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ায় স্থায়ী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা যাতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ ও আধিপত্য বজায় রাখা যায়। এ কারণে তারা এই অবৈধ ও দখলদার সরকারকে সামরিক ও বেসামরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এমনকি পরমাণু অস্ত্রেও সজ্জিত করেছে এবং ক্যান্সারের এই টিউমারকে নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

দুঃখজনকভাবে বেশিরভাগ আরব সরকার ক্রমেই আত্মসমর্পণ করেছে। যদিও কোনো কোনো সরকারের প্রথম দিকের প্রতিরোধ ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুর অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর তারা তাদের ইসলামি, রাজনৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব এবং আরব সাহসিকতা ও গৌরব ভুলে গেছে। তারা মিথ্যা আশায় শত্রুদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে।

এই তিক্ত বাস্তবতার ক্ষেত্রে ক্যাম্প ডেভিড হচ্ছে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সংগ্রামী সংগঠনগুলোও ক্রমেই দখলদার শক্তি ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে নিষ্ফল আলোচনার পথে হেঁটেছে এবং যে প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনি লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারতো তারা সেটাকে ছেড়ে দিয়েছে। যদিও প্রথম দিকে তারাও কিছু আত্মত্যাগী লড়াই করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সরকার এবং বেহুদা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের আলোচনা কেবল তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতার পাল্লাকেই ভারী করেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জয়তুনের শাখা প্রদর্শনের ফলাফল হিসেবে ক্ষতিকর অসলো চুক্তি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি এবং তা শেষ পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাতের জন্যও দৃষ্টান্তমূলক পরিণতি এনে দিয়েছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের উদয়,ফিলিস্তিনের সংগ্রামে নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে। বিপ্লবের পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইরান থেকে ইহুদিবাদীদের অনুচরদের বিতাড়ন করা হয়েছে। এরা বিপ্লবের আগে ইরানকে নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ ঘাঁটি বলে মনে করতো। এরপর ইসরাইলের অনানুষ্ঠানিক দূতাবাসকে ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া তেল সরবরাহ বন্ধ থেকে শুরু করে বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব কাজ এবং রাজনৈতিক তৎপরতার ফলে গোটা অঞ্চলে প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে উঠেছে এবং সবার মনে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের আশা জাগ্রত হয়েছে।

প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে উঠায় দখলদার ইসরাইলের কাজ কঠিন থকে কঠিনতর হয়ে পড়েছে এবং নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতে তাদের কাজ আরও কঠিন হবে ইনশাআল্লাহ। অবশ্য ইসরাইলকে রক্ষায় মার্কিন নেতৃত্বে তার মিত্রদের তৎপরতাও অনেক বেড়েছে। লেবাননে ঈমানদার ও আত্মত্যাগী হিজবুল্লাহর অস্তিত্ব এবং ফিলিস্তিনের ভেতরে হামাস ও ইসলামি জিহাদের উত্থান শুধু ইহুদিবাদীদেরকে নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের সব বিদ্বেষী শক্তিকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এ কারণে তারা এই অঞ্চলের ভেতর থেকে অর্থাৎ আরব সমাজের ভেতর থেকে সহযোগী খোঁজাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। দখলদার ইসরাইলকে সামরিক-বেসামরিক সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়ার পর তারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের ব্যাপক তৎপরতার ফলাফল এখন কোনো কোনো আরব সরকারের প্রধান এবং কোনো কোনো বিশ্বাসঘাতক আরব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীর আচার-আচরণ ও কথায় স্পষ্ট হয়েছে এবং প্রকাশ হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে দুই পক্ষ থেকেই নানা ধরনের তৎপরতা লক্ষণীয়। এর মধ্যে পার্থক্য হলো, প্রতিরোধ ফ্রন্ট ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তা ও প্রত্যাশা নিয়ে ক্রমেই শক্তি অর্জনের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, উল্টো দিকে জুলুম, কুফরি ও সাম্রাজ্যবাদের ফ্রন্ট প্রতিদিনই শূন্যতা, হতাশা ও শক্তিহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দাবির প্রমাণ হলো, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে এক সময় অপরাজেয় ও বজ্রগতির বলে মনে করা হতো এবং দুই দেশের বিশাল সেনাবাহিনীকে কয়েক দিনের মধ্যে থামিয়ে দিতে পারতো তারা। কিন্তু বর্তমানে লেবানন ও গাজার গণপ্রতিরোধ বাহিনীর প্রতিরোধের মোকাবেলায় তারা পিছুহটতে এবং পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

এরপরও লড়াইয়ের ক্ষেত্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল। এ ক্ষেত্রে বিরামহীন সতর্কতা জরুরি। যেকোনো ধরণের অবহেলা, অসতর্কতা এবং মৌলিক হিসেব-নিকেশে ভুল করলে তা বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

ফিলিস্তিনের বিষয়ে যাদের মনে টান অনুভূত হয় তাদের সবাইকে এর ভিত্তিতে কিছু পরামর্শ দেব।

এক- ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য সংগ্রাম আল্লাহর পথে জিহাদ এবং ইসলামের ফরজ কাজ। এ ধরণের সংগ্রামে বিজয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলেও ইহদাল হুস্নায়াইয়ান ( দু’টি কল্যাণের একটি) পেয়ে যাবে। এছাড়াও ফিলিস্তিন ইস্যুটি একটি মানবিক ইস্যু। লাখ লাখ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি, জমি-জমা ও কর্মক্ষেত্র থেকে হটিয়ে দেওয়ার এই যে ঘটনা তা হত্যা ও নির্মমতার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে এবং এই নির্মমতা মানুষের বিবেককে কষ্ট দেয় ও প্রভাবিত করে। স্বাভাবিকভাবেই এসব ঘটনা শক্তি ও সাহসের অধিকারীদেরকে তা মোকাবেলায় সামনের ঠেলে দেয়। এ কারণে এই ইস্যুকে শুধু ফিলিস্তিন বা আরব ইস্যু হিসেবে সীমাবদ্ধ করা মারাত্মক ভুল।

কয়েক জন ফিলিস্তিনির আপোষ অথবা কয়েকটি আরব দেশের শাসকের আপোষকে যারা ইসলামি ও মানিবক এই ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি বা অজুহাত হিসেবে মনে করছে তারা ফিলিস্তিন ইস্যুকে উপলব্ধি করতে মারাত্মক ভুল করছে অথবা সম্ভবত বিকৃতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

দুই- এই সংগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছে ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত ফিলিস্তিনের সব ভূখণ্ড মুক্ত করা এবং সব ফিলিস্তিনির নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। গোটা ভূখণ্ডের একটি ছোট্ট অংশকে নিয়ে অপমানজনক পদ্ধতিতে সরকার গঠন করার মানে অধিকার আদায় নয় এবং তা বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়কও নয়। বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে এখন এই মহান জিহাদকে বাস্তবে রূপায়িত করা যেতে পারে। আল্লাহর সহযোগিতা বা চূড়ান্ত বিজয়ের বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, অলা-ইয়ান্ ছুরন্নাল্ লা-হু মাইঁ ইয়ান্ছুরুহ্;ইন্নাল্লা-হা লাক্বওয়িয়্যুন্ আযীয্। অর্থাৎ আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন,যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান,পরাক্রমশালী।

নিঃসন্দেহে গোটা বিশ্বের অনেক মুসলমান তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে এবং তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা দেখাবে ইনশাআল্লাহ।

তিন- যদিও এই সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ সব হালাল ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সরকারগুলো এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের আনুগত্য করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখা যাবে না। তারা যেকোনো প্রভাবশালী ইসলামি ভিত্তির শত্রু,তারা বিভিন্ন জাতির অধিকারের ব্যাপারে উদাসীন। তারা নিজেরাই মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির ও অপরাধযজ্ঞের কারণ। বিশ্বের কয়েকটি মুসলিম ও আরব দেশে নৃশংসতা, গণহত্যা, যুদ্ধ, বোমাবর্ষণ ও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের বিষয়ে বর্তমানে কি কোন বিশ্ব সংস্থা ও শক্তি জবাবদিহি করবে?

বর্তমান বিশ্ব করোনাভাইরাসের শিকার প্রতিটি মানুষকে গণনা করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ এই প্রশ্ন করছে না যে, আমেরিকা ও ইউরোপ যেসব দেশে যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে সেখানকার লাখ লাখ শহীদ, বন্দি ও নিখোঁজদের জন্য দায়ী কে, কারা তাদের খুনি? আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যে এতো এতো রক্ত ঝড়লো এর জন্য দায়ী কারা? ফিলিস্তিনে এতো অপরাধ, দখলদারিত্ব, ধ্বংস ও জুলুমের জন্য দায়ী কে? কেন মুসলিম বিশ্বে হত্যা, নির্যাতন ও গুমের শিকার মজলুম নারী, শিশু ও পুরুষদের হিসেব কেউ রাখে না? কেন মুসলমানদের গণহত্যার বিষয়ে কেউ শোক জানায় না? কেন লাখ লাখ মুসলমান ৭০ বছর ধরে তাদের ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হয়ে নির্বাসনে থাকবে? কেন মুসলমানদের প্রথম কেবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস অপমানের শিকার হবে? তথাকথিত জাতিসংঘ তার দায়িত্ব পালন করছে না এবং তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মৃত্যু হয়েছে। যখন নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার স্লোগান দেওয়া হয় তখন ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনের নারী-শিশুরা এর অংশ হিসেবে গণ্য হয় না।

এই হলো পাশ্চাত্যের জালিম শক্তি ও তাদের অনুগত বিশ্ব সংস্থাগুলোর অবস্থা। এই অঞ্চলে তাদের অনুগত কোনো কোনো সরকারের অপমানকর অবস্থাতো আরও খারাপ যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

সাহসী ও ধার্মিক মুসলিম সমাজকে নিজের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং নিজের শক্তির ওপর ভর করে এগোতে হবে। সাহস দেখাতে হবে এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও নির্ভরতার মাধ্যমে বাধা অতিক্রম করতে হবে।

চার- গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামরিক বিজ্ঞজনদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না তাহলো সংঘাতকে প্রতিরোধ ফ্রন্টের আশেপাশে নিয়ে আসার মার্কিন ও ইহুদিবাদী নীতি। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাধানো, ইযেমেনে সামরিক অবরোধ ও রাতদিন হত্যাযজ্ঞ, ইরাকে হত্যা, নৃশংসতা ও দায়েশ (আইএস) সৃষ্টি এবং আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দেশে এ ধরণের ঘটনার সবই হচ্ছে প্রতিরোধ ফ্রন্টকে ব্যস্ত রেখে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সুযোগ দেওয়ার ঘৃণ্য কৌশল ও ষড়যন্ত্র।

মুসলিম দেশগুলোর কোনো কোনো রাজনীতিক জেনে-বুঝে অথবা নিজের অজান্তে শত্রুদের এই সব ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলে সহায়তা দিচ্ছে।

গোটা মুসলিম বিশ্বের সাহসী তরুণদের আন্তরিক প্রত্যাশা হচ্ছে এই ঘৃণ্য ও শয়তানি নীতির মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বিশ্বের সব মুসলিম দেশ বিশেষকরে আরব দেশগুলোর তরুণদেরকে মহান ইমাম খোমেনির পরামর্শ এড়িয়ে গেলে চলবে না। তিনি বলেছেন, যত পারুন আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন।

পাঁচ- এই অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অস্তিত্বকে স্বাভাবিক করে তোলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। কয়েকটি আরব দেশ যারা আমেরিকার গোলামি করছে তারা অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। তবে এগুলো একেবারেই নিষ্ফল প্রচেষ্টা। ইহুদিবাদী ইসরাইল এই অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক বাড়তি সংযোজন, এর অস্তিত্বের পুরোটাই এ অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর। নিশ্চিতভাবে এর শেকড় উপড়ে যাবে এবং অপসারিত হবে। অপমান ও কালিমা তাদের জন্য রয়ে যাবে যারা আজ সাম্রাজ্যবাদী নীতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। কেউ কেউ এই ঘৃণ্য আচরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই যুক্তি তুলে ধরে যে, ইহুদিবাদী ইসরাইল হচ্ছে এই অঞ্চলের একটি বাস্তবতা, কিন্তু তারা এ কথা বলে না যে, ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর বাস্তবতার সঙ্গেও লড়াই করতে হয় এবং তা উপড়ে ফেলতে হয়।

বর্তমানে করোনাভাইরাস এক বাস্তবতা। বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন সব মানুষই এই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে ওয়াজিব বলে মনে করেন। ইহুদিবাদ নামক দীর্ঘদিনের ভাইরাসও নিঃসন্দেহে বেশি দিন টিকবে না এবং সাহসী ও ঈমানদার তরুণদের মাধ্যমে তা উচ্ছেদ হবে।

ছয়- আমার মূল পরামর্শ হচ্ছে সংগ্রাম অব্যাহত রাখা এবং ফিলিস্তিনের জিহাদি সংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করা, তাদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা এবং জিহাদের ক্ষেত্র বিস্তৃত করা। সবার উচিত ফিলিস্তিনি জাতির এই পবিত্র জিহাদে তাদেরকে সহযোগিতা করা। সবার উচিৎ ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামী হাতকে শক্তিশালী করা। আমরা গর্বের সঙ্গে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করব। এক সময় আমরা নিশ্চিত হলাম যে, ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা ধর্মপ্রাণ ও সাহসী, তাদের কেবল অস্ত্র নেই। আর এটাই তাদের সমস্যা। এরপর আমরা আল্লাহর সাহায্যে কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং এর ফল পাওয়া গেছে। এর ফলে ফিলিস্তিনে শক্তির ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন গাজা উপত্যকা ইহুদিবাদী সামরিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় জবাব দিতে পারে এবং তারা বিজয় লাভ করে। এই পরিবর্তন অধিকৃত হিসেবে পরিচিত গোটা অঞ্চলে ফিলিস্তিন ইস্যুকে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে। এ ক্ষেত্রে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের বড় দায়িত্ব রয়েছে। হিংস্র শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ়তা ও শক্তির অবস্থান থেকে কথা না বললে লাভ হয় না। আলহামদুলিল্লাহ এই শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের সাহসী ও শক্তিশালী জাতি প্রস্তুত রয়েছে।

ফিলিস্তিনি তরুণরা আজ তাদের সম্মান-মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের জন্য তৃষ্ণার্ত। ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামি জিহাদ এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। পৃথিবী সেই দিনের কথা ভুলেনি এবং কখনোই ভুলবে না যেদিন ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী লেবাননের সীমানা লঙ্ঘন করে সেদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল ও বৈরুত পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল এবং যেদিন এরিয়েল শ্যারন নামের ঘাতক সাবরা ও শাতিলায় রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। সেদিনের কথাও কেউ ভুলবে যেদিন দখলদার ইসরাইলের সেই বাহিনীই হিজবুল্লাহর দাঁতভাঙা জবাবের মুখে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে পরাজয় স্বীকার করেছিল এবং লেবানন সীমান্ত থেকে পিছু হটেছিল এমনকি যুদ্ধরিবতির জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিল।

এটাই হলো শক্তিশালী অবস্থান। কোনো একটি ইউরোপীয় সরকার যার উচিৎ সাদ্দামের কাছে রাসায়নিক উপাদান বিক্রির জন্য আজীবন লজ্জিত হওয়া, সে কিনা এখন হিজবুল্লাহকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আসলে অবৈধ হলো আমেরিকা যে কিনা দায়েশ (আইএস) সৃষ্টি করেছে, অবৈধ হলো ইউরোপীয় সরকার যে কিনা ইরানের ‘বানে’এবং ইরাকের ‘হালাবজা’য় হাজার হাজার মানুষকে রাসায়নিক অস্ত্রের সাহায্যে হত্যা করেছে।

সাত-শেষ কথা হলো ফিলিস্তিন হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ফিলিস্তিন পরিচালিত হতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনের সব ধর্ম ও জাতির মানুষের অংশগ্রহণে গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা প্রায় দুই দশক আগে উত্থাপন করেছি। ফিলিস্তিনিদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যা মোকাবেলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের প্রস্তাব থেকেও এটা প্রমাণিত হয় যে, পশ্চিমারা বারবারই ইহুদি বিদ্বেষের যে অপবাদ দিচ্ছে তা পুরোটাই ভিত্তিহীন। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনের সব ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান একসঙ্গে একটি গণভোটে অংশ নেবে এবং ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থার পুরোপুরি ইতি ঘটবে তাহলো ইহদিবাদী ব্যবস্থা এবং ইহুদিবাদ খোদ ইহুদি ধর্মে একটা বেদআত। ইহুদি ধর্মের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

সবশেষে কুদসের শহীদ শেইখ আহমাদ ইয়াসিন, ফাতহি শাকাকি ও সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি থেকে শুরু করে ইসলামের মহান কমান্ডার ও অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব শহীদ সোলাইমানি ও ইরাকের মহান মুজাহিদ শহীদ আবু মাহদি আল মোহানদেসকে স্মরণ করছি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মহান ইমাম খোমেনি (রহ.)’র প্রতি দরুদ পাঠাচ্ছি যিনি আমাদের জন্য সম্মান ও জিহাদের পথকে উন্মোচন করেছেন। পাশাপাশি মরহুম হোসেইন শেইখুল ইসলামের জন্য দোয়া করছি যিনি বছরের পর বছর ধরে এই পথে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

এমআর/প্রিন্স




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com