রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

মারাত্মক রহস্যময় আফ্রিকার ‘কিলার লেক’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে আছে কতই না রহস্য ! যার অনেক কিছুই হয়তো আমরা জানি না। যেমন আফ্রিকার ‘কিলার লেক’ । আফ্রিকার কিভু হ্রদে ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছিলেন। হঠাৎ একদিন তাঁরা কম্পন অনুভব করেন। দেখতে পান সামনের আগ্নেয়গিরিটি হিংস্রভাবে লাভা উদগীরণ করছে। যার জেরে জলের মধ্যেও অনুভূত হচ্ছে কম্পন। যদিও মাউন্ট নাইরাগঙ্গো থেকে এই লাভা নিক্ষেপ তাদের ভয় দেখায়নি, তারা ভয় পাচ্ছিলেন কিভুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিস্ফোরক গ্যাসের বিশাল ঘনত্ব টের পেয়ে। রুয়ান্ডা এবং কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত কিভু আফ্রিকার অন্যতম বড় হ্রদ।
বিদ্যুতের জন্য হ্রদের জল থেকে গ্যাস উত্তোলনকারী একটি কোম্পানি কিভুওয়াট-এর ফ্রাঙ্কোইস দারচাম্বেউ-এর মতে, যতই হ্রদের জল কাঁচের মত ঝকঝকে হোক ,কিভু মোটেই শান্ত হ্রদ নয়। হাজার হাজার বছরের আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের জেরে কিভুর গর্ভে জমে আছে মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড, যা রীতিমতো ধ্বংসাত্মক। কিভুওয়াটের পরিবেশ ব্যবস্থাপক দারচাম্বিউ বলেছেন , যদি এই বিস্ফোরক গ্যাস হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে তবে গভীর জল থেকে ভূপৃষ্ঠে গ্যাসের বিশাল বিস্ফোরণ ঘটবে,সেই সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাসের মেঘ তৈরি হবে যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। আর সেই কারণেই স্থানীয়রা এই হ্রদকে বলে কিলার লেক বা হত্যাকারী হ্রদ। পৃথিবীতে মাত্র তিনটি এরকম হ্রদ রয়েছে: কিভু, এবং উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনে নিওস এবং মোনুন হ্রদ। ১৯৮০ -র দশকে লিমনিক অগ্ন্যুৎপাতের জেরে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিষাক্ত নিঃসরণে নিওসে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছিল, প্রায় ১৭০০ মানুষ দম বন্ধ হয়ে মারা যান। কিভুর আশেপাশে থাকা ২ মিলিয়ন মানুষও এরকম ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছেন বলে সতর্ক করেছেন দারচাম্বিউ। রুয়ান্ডা এবং ডিআর কঙ্গো উভয় দেশের মানুষই হ্রদের ক্ষতিকারক সম্ভাবনা জেনেও জলে নামেন। যার জেরে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এখানে নিত্তনৈমিত্তিক । হ্রদের খারাপ , ভালো দুটো দিক আছে। KiuvWatt , বিশ্বের একমাত্র প্রকল্প যা শক্তি উৎপাদনের জন্য এই বিস্ফোরক গ্যাসগুলিকে ট্যাপ করার একটি সম্ভাবনা দেখেছিল৷ মূল স্থলভাগ থেকে একটি ২০-মিনিটের স্পিডবোট যাত্রার মাধ্যমে KiuvWatt  এর ভাসমান প্লাটফর্মে পৌঁছানো যায়। ৩৫০ মিটার (১,১৫০ ফুট) থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন দিয়ে পরিপূর্ণ জল পাম্প করে ওপরে তোলা হয় । চাপের পরিবর্তনের সাথে সাথে জল এবং গ্যাস আলাদা হয়ে যায়। কিভুওয়াটের পরিচালক প্রিয়শাম নুন্দাহ বলেছেন, বিষয়টি ঠিক সোডা বোতল খোলার মতো। নিষ্কাশিত মিথেন একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে রুয়ান্ডার উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বিতীয় চেম্বারে পাঠানো হয়, যেখানে গ্যাসটি বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়। ভারসাম্য যাতে বিপর্যস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার পর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে একটি সুনির্দিষ্ট পথে হ্রদের জলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোম্পানিটি বলেছে যে ,মিথেন অপসারণ সময়ের সাথে সাথে হ্রদের মধ্যে চাপ কমাতে পারে, ফলে লিমনিক অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকি কমাতে পারে।
কিন্তু এই ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা আবার জেগে ওঠে ২০২১ সালে। যখন কিভুর উত্তরে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ মেলে। লাভা প্রবাহের জেরে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের জেরে শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়। যখন ভূমিকম্পের হার এবং ভূমিকম্পের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে শুরু করে তখন KiuvWatt তাদের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ গোটা আকাশ ঢেকে গিয়েছিল লাল আভায়। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের স্নায়ুর চাপ ধরে রেখেছিলেন হ্রদের জলে ভাসমান ইঞ্জিনিয়াররা। কিভুওয়াট পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে বার্ষিক বিদ্যুতের প্রায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন করে।আমেরিকান কোম্পানী ContourGlobal, যারা KiuvWatt এর মালিক, ২০১৫ সালে লেক কিভু উদ্যোগ চালু করে। তারা এই হ্রদের জল থেকে এখন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বিবেচনা করছে। এরকম আরেকটি কোম্পানি নিজ উদ্যোগে হ্রদের জল থেকে ৫৬-মেগাওয়াট গ্যাস উত্তোলন করার সম্ভাবনা অন্বেষণ করছে। সুইস ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের গবেষক মার্টিন স্মিড বলেছেন, ”এই বিশাল গ্যাসের মজুদ নিষ্কাশন করতে কতদিন লাগবে তা নির্ভর করবে উত্তোলনের গতির ওপর। হ্রদের জল থেকে মিথেন কমাতে কিভুওয়াট- এর মতো কোম্পানিরই হয়ত কয়েক শতাব্দী লেগে যেতে পারে। ” সূত্র :www.sciencealert.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com