আইসোলেশন ১০ দিন, সনদ ছাড়াই ফেরা যাবে কাজে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিন আইসোলেশনে থাকার পর উপসর্গ না থাকলে করোনার নেগেটিভ সনদ ছাড়াই কাজে ফেরা যাবে। গতকাল রোববার বেলা দুইটায় ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৩৬৩ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৮৩ জনের। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩২ জনে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকাল রোববার (৩০ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত শনিবার জানানো হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়; শনাক্ত হন ১০ হাজার ৩৭৮ জন; শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ। রোববারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৬৭ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৫ জন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৪৩ হাজার ২৬৬টি। পরীক্ষা করা হয় ৪৩ হাজার ৬টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী। ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২২ জন। চট্টগ্রামে ৫, রাজশাহীতে ৪, সিলেটে ১ ও ময়মনসিংহে ২ জন মারা গেছেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেল বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
আইসোলেশন ১০ দিন, সনদ ছাড়াই ফেরা যাবে কাজে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিন আইসোলেশনে থাকার পর উপসর্গ না থাকলে করোনার নেগেটিভ সনদ ছাড়াই কাজে ফেরা যাবে। গতকাল রোববার বেলা দুইটায় ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের করোনা পজিটিভ হয়েছে, তাঁদের ১০ দিনের জন্য আইসোলেশন করতে বলব। ১০ দিন পর জ্বর ভালো হয়ে গেলে, উপসর্গ চলে গেলে তিনি আবার তাঁর কাজে ফিরে যাবেন। কাজে ফিরে যাওয়ার শর্ত হিসেবে আগে আরটিপিসিআর সনদ নিয়ে যেতে হতো, সেটিকে আপাতত স্থগিত রাখছি।’
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে বলেও জানান অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, যাঁরা বুস্টার ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন, যাঁদের খুদে বার্তা এসেছে বা আসবে, অথচ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ গ্রহণ করবেন। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০। শনাক্ত ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৮৮ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন মারা গেছেন। গত শনিবার পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলেও জানান মো. নজরুল ইসলাম। গত সাত দিনে দেশের করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বেড়ে চলছিল। ২৯ জানুয়ারি এসে শনাক্তের হার খানিকটা কমেছে। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৮ জনÍ৩১ শতাংশের বেশি। ছুটির দিনের কারণে এ শনাক্ত কম হতে পারে। তবে আজকের করোনার বুলেটিনে বোঝা যাবে, বাস্তব অবস্থার কতটা কাছাকাছি আমরা আছি। গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ২৫ জানুয়ারি। সেদিন ১৬ হাজার ৩৩ জন শনাক্ত হয়েছিলেনÍ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্ত ৭৮৪, মৃত্যু ১: খুলনা বিভাগে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে খুলনা মহানগরীতে করোনা আক্রান্তে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৮৪ জনের। এর আগে, শনিবার বিভাগে ৩৫৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল।
খুলনা ২০০ শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ফোকাল পারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দ্বীন মোহাম্মদ (৮৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ৪৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ জন, রেডজোনে ১৫ জন এবং ইয়েলো জোনে ২৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৭৮৪ জন। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খুলনা। এই জেলায় সর্বোচ্চ ২১২ জনের শনাক্ত হয়েছে। আর যশোরে ১৯১ জন ও কুষ্টিয়ায় ৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া বাগেরহাটে ৭০ জন, সাতক্ষীরায় ৬৫ জন, ঝিনাইদহে ৪৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৫১ জন, নড়াইলে ১৪ জন, মাগুরায় ১৩ জন ও মেহেরপুরে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওই প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, খুলনা বিভাগে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট ১ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬৮৫ জন। আর মোট মারা গেছেন ৩ হাজার ২০৬ জন। শনাক্ত সংখ্যা বিবেচনায় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা। এখানে ৩০ হাজার ১০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যায় সবচেয়ে কম মাগুরায় ৪ হাজার ৪০১ জন।
এ ছাড়া করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনায়। এই জেলায় মারা গেছে ৮১০ জন। আর মৃতের সংখ্যায় সবচেয়ে কম সাতক্ষীরায় ৮৮ জন।