সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

বরিশালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

এবার বরিশাল নগরের আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশনের শিক্ষকদের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশনের শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বরিশাল প্রেসক্লাব ও রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে। এঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক (৩১) জানুয়ারী সোমবার বরিশাল প্রেসক্লাবে বেলা সাড়ে ১১টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, তৃতীয় এডহক কমিটির সভাপতি নুপুর নাহার ও সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবু নিজেই বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের নামে পুরানো ইট বালু ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা লুটেপুটে নিয়েছে। অবশেষ পুনাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষে সম্পূর্ন বেআইনি ভাবে ম্যানেজিং কমিটির ১২ নং ধারা উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দের লোক দ্বারা পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন। যা কোন অভিভাবক সদস্যদের অবহিত করা হয়নি। তারা ম্যাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২১ তফসিল ঘোষনা করে। এঘটনায় আমি ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্বাচন পক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর সভাপতি নির্বাচনের সভা আয়োজন করে। তখন বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবুর নেতেৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন ক্যাডার বিদ্যালয়ে মহড়া দেয়। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর বিকেল পৌনে তিনটার দিকে প্রধান শিক্ষক বশির আহম্মেদ ও সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবু’র নির্দেশে ১০ থেকে ১২জন সন্ত্রাসী বিদ্যালয়ে আমার বাসভবনে এসে গালাগাল শুরু করে। আমি বারন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রীল কেটে আমার বাসায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এসময় আমার মেয়ে ফাহমিদা জেবিন জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এর আগে তারা আমাকে লাঞ্চিত করতে গেলে আমার স্ত্রী আমাকে বাঁচাতে আসলে তারা আমার স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে। পরে তারা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বরখাস্তের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির বিধিমালা ৪১(খ) এবং ২৮ মার্চ/২০২১ এর নং ধারা উপেক্ষেত করা হয়েছে। সরকারি বিধান মতে ২০১৭ সালের ৬ আগষ্ট মোতাবেক গত ১৪ মার্চ কর্মে যোগদানের আবেদন করলেও সাড়া দেয়নি বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। তাছাড়া গত সবছরের ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশ বলে পুনবহালের আবেদন করলেও তা করা হয়নি। তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকবশির আহমেদ সম্পূর্ন বেআইনিভাবে অফিসকক্ষ জোরপূর্বক দখল করে নেয়। দায়িত্ব হস্তান্তরের ৩৮নং ধারা উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেছে। এবিষয়ে আমি ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়রি করি। সাময়িক বরখাস্তের চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি কমিটির সভাপতি ও অনান্যদের বিরুদ্ধে বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করি। উক্ত মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। পরবর্তীতে কতৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যা পিবিআই এর তদন্তাধিন। মামলায় অর্থআত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগে আমার উপর যে দায় চাপানো হয়েছে উক্ত টাকা ভাউচার প্রদানকারী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সদস্য সচিব হিসেবে অনুমোদনের পর ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে অর্থ গ্রহন করা করেছে। সুতারাং উক্ত দায় ভাউচার উপস্থাপনকারী ব্যাক্তির বা প্রতিষ্ঠানের। যা আমাকে হয়রানী করা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি আরো বলেন, আমি ২০০৯ সালের ৬ জুন বিদ্যালয়ে যোগদানের পর নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদন করি। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যার পাশিপাশি বিদ্যালয়টি সৌন্দর্যপূর্ন হয়েছে। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সড়াতে উঠেপরে লেগেছে। শিক্ষকরা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে ছাত্র সংখ্যা ৬০০ থাকলেও তা এখন ২০০ তে নেমে এসেছে। এতে শিক্ষকদের কারো কিছু আসে যায়না। কেননা তাদেরতো স্কুলের স্টলের ভাড়া দিয়ে বেতন চলমান রয়েছে। ছাত্র কমলে তাদের কিছুই আসে যায়না। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ও দুই সন্তান। এর আগে শিক্ষকদের আয়োজন করা সংবাদ সম্মেলনে একে ইনস্টিটিউশনের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু জানিয়েছিলেন, ‘স্কুল পরিচালনায় আমাদের একটি পরিপত্র আছে। সেই পরিপত্র অনুযায়ী আমরা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছি। পরিপত্র অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম ছাড়া সকল কার্যক্রম সম্পাদিত করতে পারবে এডহক কমিটি। পরিপত্রের নিয়মগুলো মেনেই আমরা প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি মামলা করেছেন। আমরা আদালতে মামলাটি খারিজের জন্য আবেদন করেছি। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। এটা নিয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষকদের তেমন আপত্তি ছিলো না। তবে সম্প্রতি সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করায় বিষয়টি অন্য শিক্ষকদের গায়ে লেগেছে। এ কারণেই তারা এখন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে শ্রেণি কক্ষ মুক্ত করতে চাচ্ছেন। আমরা পারতাম তাকে টেনে হেচড়ে শ্রেণি কক্ষ থেকে বের করে দিতে। কিন্তু তিনি একজন শিক্ষক, তার সাথে এমন আচারণ আমরা করতে চাই না। আমরা আইনিভাবেই মোকাবেলা করবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com