আমার বাসা থেকে প্রায় সমান দূরত্বে (দুশ কদমের মধ্যে) দুটি জামে মসজিদ। একটি আততাকওয়া জামে মসজিদ, যেটির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিগত এক যুগের অধিক সময় এ মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির গুরুভার আমার কাঁধে। অনেক মসজিদে পদ-পদবি নিয়ে লড়াই-যুদ্ধের খবর আসে। কিন্তু বেশ কবার নির্বাচনের তফসিল দিয়ে, পদ ছাড়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করেও পারিনি। কেউ এ পদে প্রার্থী হতে বা দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসছেন না। এলাকায় থাকলে বেশিরভাগ নামাজ এ মসজিদে পড়লেও আমার অভ্যাস হচ্ছে- মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করা। বিদেশে গেলেও মসজিদ পরিদর্শন, নামাজের পদ্ধতি-ধরণ দেখা আমার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে।
বাসার কাছের অপর মসজিদটির নাম হয়রত ইমাম আবু হানিফা ( )জামে মসজিদ। এটি শুধু মসজিদ নয়, কমপ্লেক্স। আছে একটি পূর্ণাঙ্গ কওমী মাদ্রাসা। এখানকার খতিব ও মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা ইকবাল হোসাইন মাসুম। এ কমপ্লেক্সের মূল উদ্যোক্তা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সুযোগ্য আলেমে দীন। আবু হানিফা র. মসজিদটি আয়তনে এলাকার বৃহৎ। আর ইকবাল মাসুম সাহেবের সময়োপযোগী জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতে আশেপাশের এলাকা থেকে অনেক মুসল্লী এখানে জুমা পড়তে আসেন। তাঁর আলোচনায় সমসাময়িক ইস্যু প্রধান্য পায়। সাহস, বাগ্মীতা ও বলিষ্ঠ কন্ঠের জন্যে আমিও তাঁর একজন নগন্য অনুরাগী। আজ বৃষ্টিভেজা জুমা সেখানে আদায় করেছি। একটু বিলম্ব হওয়ায় আরবি খুৎবাপূর্ব বাংলা বয়ান শোনার সুযোগ হয়নি। তবে হাত তুলে একটা ওয়াদা করতে হয়েছে। সুন্নত শেষে খুৎবার আগে তিনি মুসল্লিদের অঙ্গীকার করালেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন না করার। বুঝলাম আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী কথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসই ছিল তাঁর আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু। দুহাত তুলে সবাই তাঁর কাছে ওয়াদা করলেন- ভালোবাসা দিবস পালন থেকে সবাই বিরত থাকবেন। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য এমনকি বাড়ির ভাড়াটিয়ারাও যাতে পালন না করে সে ব্যাপার উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন বলেও অঙ্গীকার করলেন সব মুসল্লী। পেছনের কাতারে থাকায় লক্ষ করলাম- তরুণ-যুবা থেকে শুরু করে সব বয়েসী, সর্বস্তরের মুসল্লিরা দুহাত উর্ধ্বে তুলে মুখে ওয়াদা করলেন। এমনটা আর কোন মসজিদে করা হয় বা হয়েছে কিনা জানিনা। ওয়াদা কতটা রক্ষা করবেন সেটাও পরের বিষয়। অবশ্য অতীতের অভিজ্ঞতা ও এলাকার পরিবেশ বলে, ওয়াদা বহুলাংশে প্রতিপালিত হবে। আলেম ও ইমামরা সমাজ সংস্কারে এভাবে সাহসী ভূমিকা রাখলে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা অনেকটাই সহজ হতে পারে। কুড়ি বছরেরও বেশি সময় দেখছি, মাওলানা ইকবাল মাসুমসহ অন্যান্য খতীব, ইমাম ও আলেমদের বেশ প্রভাব রয়েছে অত্র এলাকায়। নিছক ইমামের গন্ডি ছাড়িয়ে তাঁরা সমাজ সংস্কারক হয়ে উঠতে পেরেছেন। সাধারণ সুন্নাত, মোস্তাহাব আমল নিয়ে ফেরকা ও বিভেদ-বিভাজন হয়-এমন আলোচনা পরিহার ইকবাল মাসুম সাহেবের বয়ানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কয়েক জুমা আগে তিনি ধর্মের অনুশীলনে মাজহাবের গুরুত্ব তুলে ধরলেন। আমি বুঝতে ভুল না করে থাকলে, তিনি বলেছেন- সাধারণের পক্ষে সরাসরি কোরআনের আয়াত বা হাদিসের অনুসরণ অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বরং ইমাম ও ফকীহদের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত বা মাজহাবের অনুসরণ আম জনতার ধর্ম পালনে অধিকতর সহায়ক। (লেখাটি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)