একই ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ উপজেলা কমিটির ৯ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাড়ি। তবে তাদের প্রায় সকলের কোন না কোন আত্মীয় ওই ইউনিয়নে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ফলে প্রায় সকলেই ব্যস্ত ছিলেন নিজের আত্মীয়কে নির্বাচিত করা নিয়ে। তাদের এ আত্মসম্মান রক্ষায় পিছনে ছুটতে গিয়ে নৌকর যে ভরাডুবি হচ্ছে সে বিষয়ে খেয়াল ছিল না কারোই। অনেকে মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে রয়েছেন নিষ্কিয়। কেউবা গোপনে আর্থিক কিংবা অন্য সুবিধা নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সহ দলীয় নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার নবগঠিত চন্ডিপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে স্বপন মাঝি’র এ পরাজয় হয়। এ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি (জেপি- মঞ্জু) মনোনীত মোঃ মশিউর রহমান মঞ্জু বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। মঞ্জু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর চেয়ে ২ হাজার ৩০৭ ভোট বেশি পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ইন্দুরকানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমানের বাড়ি চন্ডিপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়ন থেকে তার ঘনিষ্ট ২ আত্মীয় ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান সেলিম তার প্রতিবেশী। তার আপন ভাইও ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি প্রায় ৭০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেও, তার কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক পেয়েছে মাত্র ২৫০ ভোটের কিছু বেশি। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ আবুল কালাম আজাদ ওরফে ইমরানের ঘনিষ্ট এক আত্মীয় ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেয়। ইমরান এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এবং উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদকের বাড়িও চন্ডিপুর ইউনিয়নে। এক ইউনিয়নে এত নেতা থাকলেও, তাদের অধিকাংশ গোপনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছে বলে অভিযোগ নৌাকা মনোনীত প্রার্থী স্বপন মাঝি’র। তার অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান এর বাড়ি একই ওয়ার্ডে। এছাড়া তাদের ঘনিষ্টজন ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায়, তারা নৌকাকে হারিয়ে তাদের স্বজনদের জন্য কাজ করেছে। এছাড়া নির্বাচনে তারা নূন্যতম কোন সহযোগীতা করেনি বলেও অভিযোগ তার। এই দুই নেতার সাথে জামায়াতের লোকদের সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বলেও অভিযোগ তার। অন্যদিকে দলের কোন নেতাকর্মীকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মৃধা মোঃ মনিরুজ্জামান। তার অভিযোগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান তাদেরকে নির্বাচনে কোনভাবেই সম্পৃক্ত করেননি। সে বিজয়ী প্রার্থীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছে। তারও অভিযোগ উপজেলা পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা থাকা সত্ত্বেও একই ইউনিয়ন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সকল পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে এবং দলের প্রতি তাদের কোন ভূমিকাই নাই। তবে দলের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের কাছ থেকে কোন দায়িত্ব না পেলেও, নিজ উদ্যোগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। তিনি জানান, চন্ডিপুর ইউপি নির্বাচনে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী উঠান বৈঠকে অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান সেলিম মোবাইলে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তার দাবি সে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাই সে মোবাইলে সব কথা বলতে পারে না। আর সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান জানান, সে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য কাজ করেছেন। তবে প্রার্থী যথাযথ না হওয়ায় সে হেরেছে দাবি ইমরানের। তবে অধিকাংশ নেতার স্বজনরা ইউপি সদস্য প্রার্থী নিয়ে ব্যর্থ থাকায় নৌকার পরাজয় হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম মতিউর রহমান। তবে নৌকার বিপক্ষে কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। এছাড়া কেউই দায়িত্ব নিতে তার কাছে না যাওয়ায়, কাউকেই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও দাবি তার। এক ইউনিয়নে উপজেলা পর্যায়ের এতগুলো নেতা থাকার পরও নৌকার এ পরাজয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা।