সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৮:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে পথে-প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া জগন্নাথপুরে রাণীগঞ্জ সেতু নিয়ে মিথ্যাচারে এলাকাবাসীর ক্ষোভ দুই যুগ ধরে কুইচা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার শতভাগ পাস : পলাশবাড়ী হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাফল্য ফরিদপুর জেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা তারাকান্দায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ নিরাপদ সড়ক চাই দাউদকান্দি সেরা সংগঠনের পুরস্কারে ভূষিত মৌলভীবাজারে প্রতীকী শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে ঘড়–য়া গ্রামের পন্ডিত সারদা-অন্নদা শহীদ দিবস পালণ সাদা মনের মানুষ আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ হক গাইবান্ধায় রেলের যাত্রীসেবা বাড়াতে বাদিয়াখালি রেলস্টেশনের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন

হিজাব নারীর প্রাকৃতিক পোশাক

জাফর আহমাদ:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

হিজাব নারীর ভূষণ, হিজাব নারীর সৌন্দর্য, হিজাব নারীর প্রাকৃতিক পোশাক। হিজাব নারীকে এক ভিন্ন ও বিশেষ মর্যাদার আসনে আসীন করে। হিজাববিহীন নারী সামাজিকভাবে কুলষিত হয় এবং সে নিজেও সমাজকে কুলষিত করে। নারী মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে অনন্য ও মূল্যবান একটি সৃষ্টি। আর আমরা খুব ভালো করেই জানি, পৃথিবীর মূল্যবান সম্পদ সহজলভ্য বা সহজ দৃশ্যমান নয়। মণিমুক্তা, স্বর্ণ-রৌপ্য, হিরা-জহরত মূল্যবান এসব সম্পদ খোলামেলা জায়গায় বা পথে-ঘাটে পাওয়া যায় না। এগুলো কঠিন লৌহ কপাট বা ইস্পাত নির্মিত নিরাপদ স্থানে রাখা হয়। আমরা আরো জানি, এ মূল্যবান পদার্থগুলো সহজলভ্য নয়। অত্যন্ত কঠিন জায়গা থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়। আমাদের নারী জাতি এগুলো থেকেও মূল্যবান। নারী তার নিজেকে সেভাবেই মূল্যায়ন করতে হবে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলো। আশা করি বুঝতে পারবেন হিজাবের মূল্য কতটুকু।
উদাহরণ-১, কলা খেতে সবাই পছন্দ করেন নিঃসন্দেহে। কোনো কলা বিক্রেতা যদি আপনাদের অধিক সুবিধার কথা ভেবে কলাগুলোকে বাকল বা খোসা মুক্ত করে বা কভার উন্মুক্ত করে দোকানে সাজিয়ে রাখে, তবে ব্যাপারটি আপনার কাছে কেমন লাগবে? অবশ্যই তা আমাদের কাছে বৈসাদৃশ লাগবে। তা ছাড়া কলাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যে অখাদ্যে পরিণত হবে। এমনকি আপ্যায়নের মুহূর্তেও যদি কলাগুলোর কভার উন্মুক্ত করে আপনার সামনে পরিবেশন করা হয়, তাতেও ব্যাপারটি অসুন্দর লাগবে। বিপরীত দিকে আবার এমন কিছু ফল বা খাদ্যও রয়েছে যেগুলো খোসাযুক্ত অবস্থায় উপস্থাপন করা হলে অসুন্দর লাগবে। এখানে যা সুন্দর তাই প্রকৃতি এবং যা অসুন্দর তা প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ। প্রকৃতির দাবিকে উপেক্ষা করা হলে, ব্যাপারটি রুচিশীল ও পরিশীলিত মানুষের কাছে অসুন্দর হয়ে দেখা দেয়।
উদাহরণ-২, দু’টি প্রাণী, হরিণ ও পাঁঠা (ছাগল)। দু’টি জীব প্রকৃতির দু’টি ভিন্ন পরিবেশে লালিত-পালিত হয়। একটি লোকালয়ের বাইরে গভীর অরণ্যের জীব এবং অন্যটি লোকালয়ে মানুষের গৃহপালিত জীব। হরিণ কদাচিত কেউ দেখতে পায় আর পাঁঠা লোকালয়ে মানুষের সামনেই থাকে। দু’টি প্রাণীর শারীরিক কাঠামো বা গঠন প্রকৃতি, সৌন্দর্য দুই রকম হওয়ায় মানুষের দৃষ্টির পছন্দও দুই রকম। একান্তই ব্যতিক্রম ছাড়া, প্রায় সবারই দৃষ্টির তৃপ্তি পাঁঠার তুলনায় হরিণ থেকেই বেশি লাভ করবে। হরিণের শারীরিক সৌন্দর্য ছাড়াও তার মধ্যে জন্ম নেয় অমূল্য সম্পদ মৃগনাভী। পক্ষান্তরে পাঁঠা হয় খুবই দুর্গন্ধযুক্ত।
উদাহরণ-৩, মাঠের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঘাস জন্মায়। ঘাসগুলো যদি পরিপূর্ণভাবে সূর্যের আলো পায়, তা হলে তা গাঢ়ো সবুজ রঙ ধারণ করে এবং শক্ত হতে থাকে। এসব ঘাসের ওপর যদি কোনো ঢাকনা দিয়ে দেয়া হয় তা হলে কিছু দিন পর ঢাকনা তুলে দেখা যাবে, ঘাসগুলো সাদা ধবধবে সুন্দর রঙ ধারণ করেছে এবং তা নরম বা মোলায়েম হয়েছে। এগুলোর ওপর যদি হাত বুলানো হয় তবে বিশেষ এক অনুভূতি আপনাকে শিহরিত করবে।
উদাহরণ-৪, সাইকেল, রিকশা, বাস ও ট্রাকের চাকায় টায়ার ও টিউব ব্যবহার করা হয়। টায়ার ওপর ভাগে ও টিউব ভেতর ভাগে থাকে। টায়ারের শক্তি-সামর্থ্য অনেক বেশি। পক্ষান্তরে, টিউব নরম ও মোলায়েম থাকে। কেউ যদি জোর করে টিউবটিকে টায়ারের ওপরি ভাগে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে টিউবসহ পুরো যানবাহনটির অবস্থা কী হবে একটু চিন্তা করুন।
প্রিয় পাঠক! এ চারটি উদাহরণ দ্বারা আমি কী বলতে চাই আশা করি কিছুটা অনুমান করতে পেরেছেন। তবুও পরবর্তী আলোচনা থেকে ধারণা আরো স্পষ্ট হবে ইনশা আল্লাহ। পুরুষ-মহিলা আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের এক অসাধারণ মহিমা। আমার মনে হয় এটি সব সৃষ্ট জীবের মধ্যেই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। জৈবিক চাহিদার দিক থেকেও সব সৃষ্টি জীব একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পুরুষ-মহিলা দু’টি প্রাণীর শারীরিক ও মানসিক কাঠামো এক নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিগতভাবে পুরুষ মানুষের শারীরিক ও মানসিক কাঠামো শক্ত ও মজবুত প্রকৃতির ওপর দাঁড় করেছেন; পক্ষান্তরে, মহিলা মানুষের শারীরিক ও মানসিক কাঠামে কোমল ও নরম প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন। মানসিকভাবে পুরুষ অনেকটা চৈত্রের খরফাটা রুক্ষ মাটির মতো। পক্ষান্তরে, মহিলাদের মানসিকতাকে করেছেন আকর্ষণীয় ও তৃপ্তিদায়ক। পুরুষ সংসারের ব্যয়ভার বহনের জন্য খরতাপ রুদ্রে পুড়ে দিন শেষে খিটখিটে মেজাজে ঘরে ফিরে যার থেকে সুখের পরশে প্রশান্তি লাভ করবে তিনি হলেন নারী। সুতরাং তার মেজাজ ও আচরণ প্রশান্তিদায়ক হওয়াই প্রকৃতির দাবি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক’। আল কুরআনে এ কথাটির তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর। সংক্ষিপ্ত আকারে এর অর্থ হলো- ‘এঁরা একে অপরের পরিপূরক’। এ জন্য আল্লাহ তাদের মধ্যে একটি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কিন্তু এই ‘আকর্ষণ’-এর সুযোগ গ্রহণ করেছে শয়তান। ‘আকর্ষণ’কে পুঁজি করে শয়তান নারী-পুরুষের মধ্যে কত যে বিপত্তি ঘটিয়েছে তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে? এ আকর্ষণকে কেন্দ্র করে শয়তান নারী জাতির শালীনতার পোশাক হিজাবকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার কুমন্ত্রণা দিয়েছে। আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করা এরই অংশ। পৃথিবীর কুমতলববাজ আধুনিক প্রগতিবাদী গোষ্ঠী(?) নারীদের গোপন সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্যই নারীদের উলঙ্গ করার পরামর্শ দেয়। নারীদের তারা আধুনিকতা বা মিথ্যা প্রগতির বুলি শুনিয়ে এই ফাঁদে জড়িয়েছে। পৃথিবীর যেখানেই এ ধরনের হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনা ঘটছে, ভালো করে লক্ষ করবেন, এরা চরিত্রহীন, নারীলোভী বা অবৈধ নারী সৌন্দর্যভোগী। হিজাব নারীর প্রাকৃতিক পোশাক। ইসলাম নির্ধারণ করেছে, একজন পুরুষের লজ্জাস্থান তথা আররাত হবে ‘নাভী থেকে হাঁটুর পর্যন্ত’ এবং তা অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। পাগল ছাড়া কোনো সুস্থ ব্যক্তি তা খুলে রাখে না। আর মহিলাদের হাত, পা ও মুখ ছাড়া পুরো অবয়বই লজ্জাস্থান বা আররাত। নারীর অপর নাম হলো ‘আররাত’ অর্থাৎ তার পুরো অবয়বই লজ্জাস্থান হিসেবে পরিগণিত। সুতরাং তার পুরোটাই ঢেকে রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! মুুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য বেশি পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন। আর হে নবী! মুমিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে আর সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৩০-৩১) আল্লাহর দু’টি আদেশ- এক. দৃষ্টি সংযত বা অবনত রাখা; দুই. লজ্জাস্থান হেফাজত করা। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য এ হুকুম। নারীদের অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে, তাদের সাজসজ্জা অন্যদের যাতে না দেখায়। অর্থাৎ নারীরা যাতে তাদের সৌন্দর্য অবৈধ নারীলোভীদের না দেখায়। নারী-পুরুষ উভয়েরই দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। নবী সা: এ ধরনের দেখাকে চোখের জিনা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের জিনা, ফুসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়ে চলা হাত ও পায়ের জিনা। ব্যভিচারের এ যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয় তখন লজ্জাস্থানগুলো তাকে পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)
তাই বলে নারীরা বাইরের জগতে বিচরণ করতে পারবে না এমনটি ইসলাম বলে না। বাইরে যাবে বলেই তো ইসলাম হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে। বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই হিজাব পরিধান করতে হবে। নারীকে যদি একটি ঘরের সাথে তুলনা করা হয় তবে বলতে হয়, একটি ঘরের দরজা জানালা থাকে এবং ওই ঘরে মূলবান ধনসম্পদ থাকে। বাড়ির মালিক কোথাও বের হলে, অবশ্যই তাকে ঘরের দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে বের হতে হবে। মূল দরজায় একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেই বাইরে বেরোবে; অন্যথায় চোর তার ঘরের মূলবান সব সম্পদ চুরি করতে পারে। তদ্রুপ নারী যখন বাইরে বের হবে অবশ্যই তাকে ওই ঘরের মতো তার শরীরের মূল্যবান সম্পদগুলো আড়াল করার জন্য দরজা-জানালা বন্ধ করতে হবে; অর্থাৎ হিজাব পরতে হবে; অন্যথায় লোভী চোরগুলোর লোলুপদৃষ্টি তার মূল্যবান সম্পদের ওপর ফেলতে পারে এবং সুযোগ বুঝে তা ছিনিয়ে নিতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com