ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে মুফতি ফয়জুল করীম
‘ইসলাম মদকে হারাম করেছে। শেখ মুজিব দেশে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন। আর এ সরকার হালালের চেষ্টা করছে। যারা শেখ মুজিবের আদর্শ ধারণ করেন, তাদেরও উচিত রাস্তায় নামা, মদ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার থাকা।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
ভারতে হিজাব নিষিদ্ধকরণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মদ পান ও বিক্রয় সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দলটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলের আগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘চাল ডাল তেলের দাম বাড়ছে। মধ্যবিত্তের লোকজনও লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছে। সেদিকে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নাই।’ তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে কেরোসিনের দাম যখন কমে, বাংলাদেশে তখন বাড়ে। এ এক আজব দেশ, আজব সরকার। এখানে কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে আর কমে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নাকি এখন ২১ বছরের যুবক মদের লাইসেন্স পাবে। মুজিববর্ষে সরকার শেখ মুজিবের নানা কর্মের প্রচারণা চালিয়েছে। শেখ মুজিব যেখানে ৭২-এর সংবিধানে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন, সেখানে সরকার নতুন করে যুবকদের লাইসেন্স দিতে চাচ্ছে।’ ফয়জুল করীম বলেন, ‘ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন কোনঠাসা করার চেষ্টা চলছে। মোদি সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে মুসলিমরা কখনো মাথা নত করে না।’
তিনি বলেন, ‘কাদিয়ানিদের সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ তারা বাংলাদেশে থাকতে পারবে, তবে মুসলিম জামাত হিসেবে নয়। দেশে ইসলামী নেতাদের জেলে আটকে রাখা হচ্ছে। দ্রুত তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক। চট্টগ্রামে বইমেলায় ইসলামী বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে; এটা সহ্য করা যায় না।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মজুমদার বলেন, ‘ওলি-আউলিয়াদের মুসলিমপ্রধান দেশে ২১ বছরের যুবক মদ পান করতে পারবে- এ নির্দেশনাই সরকার পতনের জন্য যথেষ্ট।’ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা উত্তরের সেক্রেটারি মাওলানা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মুসলিম নারীদের পর্দা ফরজ। সেটি কর্ণাটকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভুল করেও ভারতে মোদি সরকার যাতে পর্দার বিধান বাতিলের চেষ্টা না করে। বাংলাদেশে ভুল করেও মদের অবাধ লাইসেন্স দেওয়ার আইন পাস করতে দেওয়া হবে না।’ ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর নেসার উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে আগুন লেগেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী প্রটোকল ও মিডিয়া ছাড়া বাজারে গিয়ে দেখুন। জনগণের সুখ-দুঃখের কথা শুনুন। ন্যায্যমূল্যে সব চাহিদা ন্যায্য অধিকার৷ এক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শায়েখ ফজলে বারী বলেন, ‘বুঝতে ভুল করলে সমস্যা। এক জেলা কক্সবাজারেই আড়াই কোটি ইয়াবা ধরা পড়ে। এমন অবস্থায় কীভাবে ২১ বছরের যুবককে মাদকের লাইসেন্স দেয় সরকার?’
মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘হারামকে হালাল করার চেষ্টা চলছে। যারা জেগেও ঘুমিয়ে থাকে, তাদের জাগানো যায় না।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মো. ইমতিয়াজ আলম আলম বলেন, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কীভাবে হিজাব নিষিদ্ধ হয়? সরকারের উচিত ভারতকে জবাব দেওয়া, প্রতিবাদ করা। বাংলাদেশে মদের দোকান কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ঘুমিয়ে থাকবেন, ২০১৮ আর ২০৪১ এ যাবে না।’ বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বাইতুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা।