সুঁই-সুতায় নিজের ভাগ্য বদলে ফেললেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউনিয়ন এর মাস্টারপাড়া গ্রামের মমতা বেওয়া। সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃঙ্খলা, সময়জ্ঞান একজন মানুষকে যে সফল করে তুলতে পারে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত মমতা। সে ২০০৫ সালের কথা তার স্বামী র্স্টক করে মারা যায়। এ অবস্থায় তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তিন সন্তান নিয়ে খুবই জীর্ণভাবে সংসার চালাতে হত। সারাদিন হাত পাখা পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে যে টাকা পেত সেই টাকা দিয়ে চলত তার সংসার। একদিকে পড়াশোনার খরচ চালানো ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সমস্যা ও হতাশা যেন পিছু ছাড়ছিল না মমতার। তিনি সেই সময়ে আরডি আর এস এর সাহায্যে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষন নিয়ে শুরু করে কারুকাজ। তার এই কারুকাজ সঠিক ব্যবহারে ভাগ্য বদলের দ্বারপ্রান্তে। শূন্য থেকে শুরু করে আজ তিনি একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা। নিজের জীবন যেমন বদলে ফেলেছেন, তেমনি স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তার মতো আরও হাজারো নারীকে। তিনি এখন বীরগঞ্জে সবার কাছে ‘মমতা দিদি’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে শুরু করেন সুতার তৈরি ম্যাট এর কাজ তার সেইগুলো বাজারে বিক্রি করেন। সেই কাজ দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে অর্ডার দিয়ে যায়। ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সেগুলো তৈরি করে জমা দেওয়ার পরের মাসেই ৩০ হাজার টাকার কাজ পান মমতা। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি মমতাকে। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। গ্রামের নারীদের দিয়ে তৈরি হয় কুশন কাভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, পাটের তৈরি পাপস, পাটের ব্যাগ ও ড্রাম তৈরি করছেন তিনি। বর্তমানে তার তৈরি পণ্য বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন খ্যাতমান শপিং মলে। মমতা জানালেন, মাষ্টারপাড়া গ্রাম ছাড়াও বীরগঞ্জের বাইরেও তার বুননের এই কাজ চলছে। প্রথম মাসে ১০ হাজার টাকা, এরপর থেকে ২০ হাজার আবার কোনো কোনো মাসে ৫০ হাজার টাকার কাজও করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যারা তার ক্রেতা ছিলেন তারা কুশন কাভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, পাটের তৈরি পাপস, পাটের ব্যাগ ও ড্রাম কেনার পর তারা তার কাজের খুব প্রশংসা করতেন। ক্রেতাদের প্রশংসা তার মনোবল ও সাহস আরও বাড়িয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে অর্ডার বাড়তে থাকে। এর মধ্যে কিন্তু পুঁজি না থাকায় আটকে যান। কিন্তু থেমে থাকেননি। আবারও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে শুরু করেন তার কাজ। তিনি স্থানীয় সরকারের কাছে দাবি করছেন যদি তার পাশে দাড়ানো হয় তাহলে তিনি তার মতো আরও অনেক নারী উদ্যেক্তা তৈরি করতে পারবেন। তার এই কারুকাজের পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন। পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করে উদ্যেক্তা হতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’ শুধু নিজের জীবনের গল্পই নয়, সুঁই-সুতার কারুকাজে বদলে দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আরও সহস্রাধিক নারীর জীবন। সংসারের পাশাপাশি বুননের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। মমতার বড় ছেলে তপন রায় জানান, যেসব এলাকায় আমাদের সেলাইয়ের কাজ হয় সেখানে একজন দলনেত্রী আছেন। প্রত্যেক দলনেত্রী সহ সকল নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। এজন্য সরকার যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে আরও উদ্যোক্তা বেরিয়ে আসবে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিবেদিতা দাস বলেন, উপজেলায় নারী উদ্যেক্তা তৈরি করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নারীদের প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি। আর এই প্রশিক্ষন নিয়ে তারা বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেকে সাবলম্বী করে তোলে হয়ে উঠে একজন নারী উদ্যেক্তা।