মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

প্রশাসনে পদোন্নতি : যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২

সারা দেশে বেকারদের দুর্ভোগ লাঘবের পথ রুদ্ধ হলেও সচল থাকছে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। প্রশাসনে ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৭৮ জন সচিব রয়েছেন, অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৪২১ জন, যুগ্ম সচিবের ৪১১ পদে ৭৬০ জন, উপ-সচিবের ১৩২৪ টি পদে কর্মরত আছেন ১৭৩৫ জন। প্রশাসনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি আগের তুলনায় বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তার পর ও এবার প্রশাসনে দুই স্তরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে করেছে সরকার। এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতরের নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভা শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন না হলে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তার আগেই আবারো এসএসবি সংক্ষিপ্ত সভা হতেও পারে নাও পারে।
গত ১২ বছরের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকার সব সময়ই নিয়োগ বেশি দিয়েছে। সেই তুলনায় পদোন্নতি হয়েছে কম। গত বছরের নিয়োগ ও পদোন্নতির অনুপাত ছিল দশমিক ৭৫ঃ১। এর আগের চার বছরে নিয়োগ ও পদোন্নতির গড় অনুপাত ২ঃ১। এবার বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত লেফট আউট ১৪৭ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ জন কর্মকর্তা এ তালিকায় রয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২৮ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ৩৬৩ জন কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচের রয়েছেন ১৬৪ জন কর্মকর্তা। ইকোনোমিক ক্যাডারের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ৪৫ জন কর্মকর্তাকে। বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত (লেফট আউট) ১৫৪ জন কর্মকর্তা রয়েছে। চলতি বছরে অবসর যাবেন ১২জন সচিব। এসব সচিবের ১২ পদ ফাঁকা হচ্ছে। অতিরিক্ত সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে ১২টি পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। শূন্য হতে যাওয়া এসব পদ পাওয়া নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। অবসরের সময় হওয়ায় কোনো কোনো সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে চেষ্টা করছেন।
গত বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সভাপতিত্বে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের শেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পদোন্নতির জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তার কর্মজীবনের সমস্ত নথিপত্র আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে, বেকারদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার চেয়ে নিজেদের পদোন্নতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। করোনা মহামারির মধ্যে অফিস-আদালত থেকে সেবা প্রার্থীদের সেবা না দেওয়া হলেও তারা নিজেদের পদোন্নতি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া হচ্ছে চলমান। সময় হলেই কর্মকর্তাদের পদ্দোন্নতি দেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়ায় এবার পদ্দোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, প্রশাসনে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদের পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ১৫তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হবে। প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হবে। এ ছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আগে পদোন্নতিবঞ্চিত বিভিন্ন ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকেও এই পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হতে পারে। এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার ২৯৫ জন যোগ্য কর্মকর্তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত ১৫তম ব্যাচের রয়েছে ৯৮ জন ইকোনোমিক ক্যাডারসহ কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত লেফট আউট ১৪৭ জন কর্মকর্তা রয়েছে। অন্যান্য ক্যাডারের রয়েছে ৫০ জন কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন ২৪ হাজার ৫৫৩ জন। একই সময়ে পদোন্নতি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৭০৯ জন। আগের বছরের তুলনায় করোনাভাইরাস বিস্তারের বছরে পদোন্নতি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। অথচ নিয়োগ কমে অর্ধেকে নেমেছে। আগের অর্থবছরে ২০১৯-২০ সরকারের নিয়োগ ছিল ৪৮ হাজার ৮৮৭টি আর পদোন্নতি ছিল ১৮ হাজার ৫৮৩টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিয়োগ হয়েছে ৪০ হাজার ২৫৮ জনের আর একই সময়ে পদোন্নতি হয়েছে ২২ হাজার ৩৬২ জনের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিয়োগ ৪০ হাজার ৫৯৯ এবং পদোন্নতি হয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৯ জনের। গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদোন্নতি হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮২ হাজার ৫৮৯ জনের। ওই সময় পদোন্নতি পেয়েছেন ৩৭ হাজার ২৭৬ জন।
চলমান করোনা মহামারির মধ্যে যুগ্ম সচিব পদে দুই দফায় পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রথম দফায় ২০২০ সালের ৫ জুন ১২৩ জন উপসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৯ অক্টোবর ২০তম বিসিএস ব্যাচের ২০৩ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব করা হয়। ২৭তম বিসিএস ক্যাডারদের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৭ মার্চ। এ ব্যাচকে মূল ব্যাচ ধরে ৩৩৭ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব করা হয়। ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব করা হয় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। এ ব্যাচকে মূল ব্যাচ বিবেচনায় ধরে ৯২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত অর্থনৈতিক ক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়া ২২০ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরের দিন ২ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক ক্যাডারের ১৪৩ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক ক্যাডারের ২৫ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) অর্থনৈতিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত করা হয়। অর্থনৈতিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদে পদোন্নতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল।
২৭ বিসিএসের ৬৩ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২০২১ সালের ২ মে। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ২০ ব্যাচের ১৯ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ১২ ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিআইজি থেকে অ্যাডিশনাল আইজিপি হয়েছেন। বেকারদের দুর্ভোগ লাঘবের পথ রুদ্ধ হলেও সচলই ছিল সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। প্রশাসন ক্যাডারের মতো নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন পুলিশ, কাস্টমস, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যসব ক্যাডার কর্মকর্তারা। ক্যাডার কর্মকর্তাদের বাইরে প্রথম শ্রেণির সব কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। বাদ যাননি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। সিনিয়র স্কেলের পদোন্নতি পরীক্ষাও হয়েছে এসময়। স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) গত বছরের এক সমীক্ষায় বলেছে, প্রায় ৫৭ শতাংশ লোক বলেছেন যে মহামারিকালে তাদের কোনো বেতন নেই, ৩২ শতাংশ লোকের আয় হ্রাস পেয়েছে এবং মাত্র ১১ শতাংশের স্থিতিশীল আয় ছিল।
চলতি বছরে যে সব সচিব অবসরে যাচ্ছেন তারা হলেন, আগামী ৯ এপ্রিল পিপিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ, ২২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ১৪ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, ২৬ জুলাই আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ৫ আগস্ট এনএসডিএ এর নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ২৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফজলুল বারী, ৩০ সেপ্টেম্বর পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. ইয়ামিন চৌধুরী, ৩০ অক্টোবর জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. আখতার হোসেন, ২ নভেম্বর জনপ্রশাসন সচিব কেএম আলী আজম, ৩১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশিদ, ৩১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রামেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ৩১ ডিসেম্বর বিমান পরিবহণ ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন।- সূত্র: ইনকিলাব অন লাইন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com