মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্র্বতী সরকার : নাহিদ ইসলাম শাপলায় ৪০০ পরিবারের জীবিকা আওয়ামী লীগের ‘আলোচিত’ সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী গ্রেপ্তার এবার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল বিমান ও নৌ বাহিনী শ্রমিকরা গত ১৫ বছরে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাননি: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাত্র জনতার বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে সকল ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে : সালাহউদ্দিন আহমেদ মিরাজকেই সাকিবের বিকল্প ভাবছেন নির্বাচকরা এই আনন্দে হাসতেও পারছি না, কাঁদতেও পারছি না: মিঠুন পানি কমেছে তিস্তায়, বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত দিলো ভারত

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ মার্চ, ২০২২

ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। কখনো মা হিসেবে, কখনো স্ত্রী হিসেবে, কখনো মেয়ে হিসেবে, আবার কখনো বোন হিসেবে। ইসলাম আগমনের আগে জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে নারীরা ছিল চরম অবহেলিত, ঘৃণিত। তখন তাদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পর্যন্ত হরণ করা হতো। কন্যাসন্তানকে জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্মম ঘটনাও ঘটেছিল সে সময়। ইসলাম এসে এই বর্বরতা রুখে দিয়েছে। ইসলাম সম্মান নিয়ে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। একসময় নারীদের উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হতো, ইসলাম তা কঠোরভাবে বন্ধ করেছে। নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় ইসলাম প্রয়োজনীয় সব বিধান দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে সুরা ‘নিসা’ (অর্থ : নারী) নামে একটি সুরাও আছে। নি¤েœ ইসলামে নারীর সম্মান বিষয়ে কিছু তথ্য সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
নারী যখন মা : মহান আল্লাহ নারীকে মায়ের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসে মাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ জারি করেছেন যে তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করো। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এর পরও তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তার পরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এরপর তোমার পিতা। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৯৪)
সুবহানাল্লাহ! এতে করে স্পষ্ট হয়ে যায়, ইসলাম সর্বোচ্চ নারীকে সম্মান দেয় বলেই আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের সম্মানের ব্যাপারে এতটা গুরুত্বারোপ করেছেন।
নারী যখন স্ত্রী : নারী যখন স্ত্রী, তখনো তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ নারীদের তাঁর বিশেষ নিদর্শন বলে আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে। ’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
ইসলাম নারীকে রানির মর্যাদা দিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। একজন শাসক সে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৮৮)
নারী যখন মেয়ে : ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, সন্তানরা আল্লাহর নিয়ামত। আর মেয়েসন্তানরা পুণ্য। মহান আল্লাহ নিয়ামতের হিসাব নেন, আর পুণ্যের প্রতিদান দেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় (প্রতিবন্ধক) হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩)
নারী যখন বোন : ইসলাম মেয়ে এবং বোনের সঙ্গেও সদাচরণ করার তাগিদ দিয়েছে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)
নারী যখন অনাত্মীয় : নারী অনাত্মীয় হলেও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের সৌন্দর্য। তার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা সবার দায়িত্ব। ইসলামের ইতিহাসে নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় বনু কাইনুকা গোত্রের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এক সাহাবি তার মুসলিম বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় জীবন দিয়ে দিয়েছেন।
আবু আওন থেকে ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন, একদিন জনৈকা মুসলিম নারী বনুু কাইনুকা গোত্রের বাজারে দুধ বিক্রি করে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে এক ইহুদি স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে বসে পড়েন। কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইহুদি তাঁর মুখের নেকাব খোলানোর অপচেষ্টা করে, তাতে ওই নারী অস্বীকৃতি জানান। ওই স্বর্ণকার গোপনে মুসলিম নারীটির (অগোচরে) পরিহিত বস্ত্রের এক প্রান্ত তার পিঠের ওপরে গিঁট দিয়ে দেয়, তিনি তা বুঝতেই পারলেন না। ফলে তিনি উঠতে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে পড়েন। এ ভদ্র মহিলাকে বিবস্ত্র অবস্থায় প্রত্যক্ষ করে নরপিশাচের দল হো হো করে হাততালি দিতে থাকল। মহিলাটি ক্ষোভে ও লজ্জায় মৃতপ্রায় হয়ে আর্তনাদ করতে লাগলেন। তা শুনে জনৈক (প্রতিবাদী) মুসলিম ওই স্বর্ণকারকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রত্যুত্তরে ইহুদিরা মুসলিম লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হত্যা করে।
এরপর নিহত মুসলিমটির পরিবারবর্গ চিৎকার করে ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের কাছে ফরিয়াদ করেন। এর ফলে মুসলিম ও বনু কাইনুকার ইহুদিদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত বাধে। প্রায় ১৫ দিন সে গোত্রের দুর্গ অবরোধ করে রাখার পর তাদের সবাইকে বন্দি করা হয়। (ইবনে হিশাম : ২/৪৭, আর রাহিকুল মাখতুম [বাংলা] : ২৪০/২৪২) উপরোক্ত আলোচনা থেকে অনুধাবন করা যায় যে ইসলাম নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি কতটা গুরুত্ব দিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com