পাঁচ বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেলেন নার্সিং শিক্ষার্থী মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম। ওই নারীর নাম রিনা আক্তার খতে(৪৬)। তবে খতে নামেই তাকে সবাই ডাকত। রিনা আক্তার খুলনার ফুলতলা উপজেলার নাড়ীপাড়া গ্রামের মোহসীন আখনের স্ত্রী। তিনি ফারজানা আক্তার মিম নামের এক সন্তানের জননী। ওই নারীর মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম জানান, ২০১৫ সাল থেকে আমার মায়ের মাথায় প্রচন্ড সমস্যা দেখা দেয়। আমি তখন কেবল সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। তখন মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত, তেমনি ফিরেও আসত। ২০১৭ সালে আমি যখন অষ্টম শ্রেণি পাশ করি, তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি তার গর্ভধারীনি মা। পরে অনেক স্থানে খোঁজাখুজি করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। এদিকে মাকে খুঁজে না পাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে বাবাকে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। পরিবারের সহযোগিতায় আমি এখন ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং কলেজে ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমরা তো মনে করেছিলাম আমার মা মারা গেছেন। কিন্তু গত রোববার মোবাইল ফোনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন আসলে পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার মায়ের নাম রিনা কিনা? এ কথা শোনামাত্রই আমি তাকে ছবি পাঠাতে বললে তিনি ছবি পাঠান। ছবি দেখে আমি চিনতে পারি যে তিনিই আমার মা। সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় ব্রিজের ওপর ভবঘুরে হিসেবে থাকতেন। তার এ অবস্থা দেখে স্থানীয় যুবক আবদুর রাজ্জাক নয়ন, তারেক এবং এক ওষুধের দোকানদার হারুন অর রশিদ ওই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং স্থানীয় সদর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈমের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রাথমিকভাবে ওই নারী তার নাম রিনা বলে তার পরিচয় জানায়। এরপর স্থানীয় যুবক তারেক ফেসবুকে হারানো বিজ্ঞপ্তি খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পরিবারের নাম্বার পেলে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁর মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম ও বোনের মেয়ে শাহানাজ নিয়ামতপুরে আসেন রিনা আক্তারকে নিতে। রিনা আক্তারের বোনের মেয়ে শাহানাজ পারভীন বলেন, আমার খালারা ৫ বোন ও ২ ভাই। খালা ভাইবোনদের মধ্যে ৫ নম্বর। ২০১৭ সালে হারিয়ে যাবার পর অনেক খুঁজে না পেলে আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃতজ্ঞতা খালাকে খুঁজে পেয়েছি। এখানকার নয়ন, তারেক, রশিদ এবং ইউপি চেয়ারম্যান যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা সারাজীবন আমরা ভুলবো না। খালু পেশায় ট্রাকচালক। ট্রাক নিয়ে বান্দরবান থাকায় তিনি আসতে পারেননি। সদর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈম সাংবাদিকদের জানান, আমাকে যখন জানানো হয় সেতুর (ব্রিজের) ওপর মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা শুয়ে আছেন, তখন নিজে গিয়ে সেখানে দেখে এসেছি। বৃদ্ধার মুখমন্ডলে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলে পরে তার মেয়ে মিম এসে নিজ জিম্মায় নিয়ে চলে যান। মিম এবং তার উদ্ধার হওয়া মা বিকেল পর্যন্ত সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পরে গাড়ির ব্যবস্থা করা হলে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা লিখে নিয়ে বিকেলে ওই মহিলাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া তাদের আসা ও যাওয়ার জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে বলেও আরো জানান ইউপি চেয়ারম্যান। নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন এ-র সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বিষয়টি অবহিত নই। আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম।