ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো প্রকার সম্মতিতে পৌঁছানো যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়ায় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ চাভুশওলুর মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কুলেবা বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অন্য ব্যক্তিরা রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শান্তির সন্ধানে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে এসেছি, অপরদিকে ল্যাভরভ শুধু শুনতেই এসেছেন।’ যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনে মানবিক সংকট সমাধানের জন্য এই যুদ্ধবিরতি প্রয়োজনীয় ছিলো বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে সংকট সমাধানে দুই পক্ষই একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানান কুলেবা। সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করা, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘব এবং রুশ দখলদার বাহিনীর হাত থেকে ইউক্রেনের অঞ্চল স্বাধীন করার প্রয়াসে এই আলোচনা চালিয়ে যেতে আমি প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ থামাতে পারি না, তা করতে সক্ষমও হবো না যদি আগ্রাসী দেশটি তা না চায়।’ ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখনো পর্যন্ত ন্যাটো সমন্বিতভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও জনগণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। এর আগে বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়ায় যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ চাভুশওলুর মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৈঠকে বসেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় রাশিয়া। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আলোচনার কিছু বাকি নেই, হামলা চলবে : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনের সাথে আলোচনার আর কিছুই বাকি নেই। রাশিয়ার দাবি না মেটানো পর্যন্ত দেশটিতে হামলা চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়ায় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ চাভুশওলুর মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি। সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক প্রমাণ করছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা প্রক্রিয়ার আর কিছুই বাকি নেই। রাশিয়ার দাবি মেটানো না পর্যন্ত ইউক্রেনে অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো দেশে আক্রমণের পরিকল্পনা করিনি এবং ইউক্রেনেও আমরা আক্রমণ করিনি, আমরা সেখানে শুধু কিছু বিষয়ের সমাধান করছি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির
[শেষ পৃষ্ঠার পর]
এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে তা ‘রুশ ফেডারেশনের জন্য সরাসরি হুমকি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পশ্চিমা শক্তি ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে বিপজ্জনক আচরণ করছে। যার ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে। তিনি বলেন, যারা ইউক্রেনে অস্ত্র, পেশাদার সৈন্য পাঠাচ্ছে, তারাই তাদের কাজের জন্য দায়ী থাকবে। বৈঠকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ‘মানবিক সংকট সমাধানের’ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ইউক্রেন বেসামরিক নাগরিকদের আটকে রেখে তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে ‘মানবিক করিডর’ তারা অব্যাহতভাবে চালু রেখেছেন বলে জানান ল্যাভরভ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়ায় যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ চাভুশওলুর মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৈঠকে বসেন। দুই পক্ষের কোনো প্রকার সমঝোতা ছাড়াই এই বৈঠক শেষ হয়।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় রাশিয়া। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বোমায় ছিন্নভিন্ন হাসপাতাল, ‘যুদ্ধাপরাধ, বিচারের মুখোমুখি করা হবে পুতিনকে’: নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে রাশিয়া। তারা এখন আর বেসামরিক আবাসিক এলাকা, হাসপাতালের পরোয়া করছে না। উন্মত্তের মতো শিশুদের হাসপাতালে পর্যন্ত বোমা হামলা চালাচ্ছে। দখল করে নেয়া মারিউপোলে একটি শিশু ও মাতৃসেবা বিষয়ক হাসপাতালে বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে একটি শিশু সহ কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপ্পি একে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন। শিশুদের হাসপাতালে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন ও তার জেনারেলদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি একে নৃশংসতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া আরও একবার প্রমাণ দিল যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে তারা। জেমস হিপ্পির মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। তার কথায় সেই প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। বলেছেন, ভবিষ্যত বিচারে ব্যবহৃত হতে পারে এমন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে পশ্চিমারা। টিভির পর্দায় আমরা যা দেখছি তা যুদ্ধাপরাধ।
মারিউপোলে ওই হাসপাতালে বোমা হামলার পরের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে পশ্চিমা মিডিয়ায়। এতে দেখা যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই হাসপাতালের বাইরে ধ্বংসাবশেষ। সেখানে কয়েকজন মানুষের সঙ্গে একজন রক্তাক্ত নারী। কম্বল জড়িয়ে তিনি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় একজন ডাক্তার অথবা নার্সকে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন। আরেকটি ভয়াবহ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায় একজন অন্তঃসত্ত্বা বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন সহায়তাকারীরা। অন্তঃসত্ত্বা আরও একজন ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের সিঁড়ি দিয়ে কোনোমতে নিচে নেমে আসছেন। হাসপাতালের বাইরে দাউ দাউ করে জ্বলছে গাড়ি। পাশেই পুকুর সমান এক গর্ত ভূপৃষ্ঠে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বারা ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সন্তান প্রসব করতে অথবা মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে। সন্তানের মা হতে গিয়ে এমনিতেই তাদের জীবন ঝুঁকিতে, তার ওপর বোমা হামলা, বিশেষ করে হাসপাতালে বোমা হামলা- মৃত্যুর খুব কাছাকাছি নিয়ে গেছে তাদের।
দখল করে নেয়া ওই শহরে উচ্চ ক্ষমতাশীল রাশিয়ান বোমা দিয়ে বেশ কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালের বাইরে পড়েছে। এতে দোতলা ভবনের সমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য বোমাগুলো সরাসরি হাসপাতালে আঘাত করেছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এতে কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা বলেছেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই এখন আর। এই হামলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। এর নিন্দা জানিয়েছেন বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপ্পি। তিনি বলেন, পুতিন যা করছেন তা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ নয়। এখন তিনি ইউক্রেনের অনেক শহর দখল করেছেন। যুদ্ধ করছেন দেশটির বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে। জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের মায়েদের সেবা দেয়ার হাসপাতালে সরাসরি হামলা করেছে রাশিয়া। ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে শিশু, মায়েরা ও সাধারণ মানুষ। এ এক নৃশংসতা। এই সন্ত্রাসকে বিশ্ব আর কতদিন এড়িয়ে চলবে? এখনই আকাশসীমাকে বন্ধ করে দিন। বন্ধ করুন এই হত্যাযজ্ঞ। আপনাদের ক্ষমতা আছে। কিন্তু মানবতার কাছে হেরে যাচ্ছেন। এরপরই রাজধানী কিয়েভে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ থেকে টেলিগ্রামে যোগ দেন জেলেনস্কি। এতে বলেন, এখন প্রমাণ সামনে এসেছে যে- ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যা ঘটছে তা হলো গণহত্যা। ইউরোপিয়ান, এখন আপনারা বলতে পারেন না- যা ঘটছে তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না। রাশিয়া যাতে তার যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার সক্ষমতা হারায় এজন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করুন। কোন ধরনের দেশ হাসপাতালে বোমা হামলা চালায়? তারা কি হাসপাতাল নিয়ে ভীতশঙ্কিত? এ প্রশ্ন রেখে জেলেনস্কি বলেন- কেউ কি রাশিয়ানদেরকে অবমাননা করছেন? রোস্তোভের দিকে কি কোনো অন্তঃসত্ত্বা গুলি ছুড়েছেন? হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয় নাৎসীকরণ বন্ধের জন্য?
পরে তিনি স্কাই নিউজকে আলাদা সাক্ষাতকার দেন। এতে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার হানাদাররা চায় ইউক্রেনিয়ানদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করতে। তাদের খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দিতে চায় তারা। ইউক্রেনের শহরগুলোকে অবরুদ্ধ করে রাখছে তারা। আপনাদের কাছে আমি অনেকবার, মিলিয়নবার আকাশসীমাকে বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। আপনাদের উচিত আমাদের কাছে, আমাদের জনগণের কাছে- যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন, তাদেরকে ফোন করা এবং বলা যা হয়েছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত।