পঞ্চাশোর্ধ কল্পনা সরকার অন্যের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। তার প্রতিবন্ধি বড় ছেলেটি টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হুইল চেয়ারে ভিক্ষা করে। ছোট ছেলে দিন মজুর। একমেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কল্পনার স্বামী স্বাধীন তাদের ভরণপোষণ না করে অন্যত্র থাকেন। দুই ছেলেকে নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ায় বস্তির মতো ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। কথা হয় কল্পনা সরকারের সাথে। তিনি বলেন আমাদের কোন জায়গা জমি নাই। দুই বাসায় আমি ধোঁয়া মোছার কাজ করি। মাসে এক বাসা থেকে ৬০০ আরেক বাসা থেকে ১২০০ ট্যাহা দেয়। প্রতিবন্ধী পোলাডা ভিক্ষা করে। আরেক পোলা ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করলে দিনে ৫০ ট্যাহা পায়। এখন সবাই মিলা যা কামাই করি হেইডা ঘরভাড়া, খাওন আর অসুদ (ঔষধ) কিনতেই শেষ হয়ে যায়। খুবই কষ্টে দিন পার করি। আমার বাবা ৪ বোন ১ ভাই রাইখা ছোট বেলা মারা যায়। আমরা বাবার ঘর থিকাই খাইয়া না খাইয়া বড় অইছি। জীবনে আর সুখ পাইলাম না। আর পারছি না। কল্পনা আরো বলেন সরকার কত মাইসেরে ঘর দিতাছে। কত ভাল লোকেরাও পাইতাছে। আমিও ঘরের লিগা নাম দিছিলাম, কিন্তু পাই নাই। আমার মতো গরিবের ভাগ্যে কি একটা ঘর জুটবো না? ঘরটি আমার খুব দরকার। আর ভাড়া দিয়ে থাকতে থাকতে কুলায় না। নিজের ঘর অইলে মেলা খুশি অমু। কষ্ট দূর অইবো। পঙ্গু পোলাডারে নিয়া শান্তিতে থাকতে চাই। কল্পনার প্রতিবেশিরা সোহাগী দাস বলেন ওদের অনেক কষ্ট। জামাইটা অকর্মা। ঘুরে ঘুরে খায়। বউ ছেলেদের খেয়াল রাখে না। বাসার মালিক হারুণ অর রশিদ বলেন শুনেছি কল্পনাদের জমি বাড়ি কিছুই নাই। ওরা মাসে ১২০০ টাকায় আমাদের ঘর ভাড়া নিয়ে অনেক দিন ধরে থাকেন। টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর কামরুল হাসান মামুন বলেন এই অসহায় পরিবারটি অনেক বছর ধরে আমার ওয়ার্ডে ভাড়া থাকে। তাদের কোন জায়গা জমি নাই। আমি পৌরসভা থেকে সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। তারা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার দাবিদার। কল্পনা সরকার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মাথা গোজার একটি স্থায়ী ঘর পেলে আমরাও খুশি হবো। টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন অসহায় কল্পনার পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী ঘর দরকার। যাতে তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে জীবনের শেষ সময়ে যেনো নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেন। এবিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।