প্রচারণার প্রথম দিনেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদেও নির্বাচনী সভাসহ সারা দেশে বিরোধী জোটের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হয়েছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে এসব হামলার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে পুলিশ তাদের নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতার করছে। সীতাকু-ে নির্বাচনী সভা থেকে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী আটক করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচনী প্রচারের গাড়িবহরে হামলা ও বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের বানারহাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আমাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি বিধান দাস এ তথ্য জানিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে থেকে নির্বাচন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে গতকাল (মঙ্গলবার) তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে গণসংযোগ করেছেন। গত সোমবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার (গতকাল ১১ ডিসেম্বর) ঠাকুরগাঁও যাব। সেখানে ভোটের প্রচারে অংশ নেব। এরপর বগুড়াও যাব। দুইদিন থেকে ঢাকায় ফিরে আসব।’
মওদুদের নির্বাচনী সভায় সরকার সমর্থকদের হামলা, আহত ৪০
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পূর্ব ঘোষিত পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে উভয় দলের ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতের মধ্যে বিএনপির ৩০ জন এবং আওয়ামী লীগের ১০ জন রয়েছে বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে। হামলায় কমপক্ষে ২৫টি দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও বিএনপি অফিস ভাংচুর হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পথসভা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারের সভাস্থলে সমবেত হতে থাকে। এসময় বিএনপি সমর্থকরা জিরো পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা লিটনসহ ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়।
কবিরহাট পৌর বিএনপি সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু জানান, তার বাড়ীসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিএনপি অফিস ভাংচুর করা হয়। কবিরহাট উপজেলা জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তারের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
এছাড়া নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদল সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও কবিরহাট বিএনপি প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সল গুলিবিদ্ধ হয়। অপরদিকে পথসভায় আসার পথে ভূঁইয়ারহাট, শাহজীর হাট, কাচারি হাট, কালামুন্সী, ব্যাপারী হাটে বিএনপির মিছিলে হামলা হয় বলে বিএনপি অভিযোগ করেন। এতে ১০ জন আহত হয়।
অপরদিকে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম জানান, বিএনপির হামলায় তিনিসহ আওয়ামী লীগের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ কবিরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা একরাম উদ্দিনকে আটক করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুর হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ তার নির্ধারিত পথসভাস্থলে আসেন নি। ঘটনা জানতে কবিরহাট থানার ওসিকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিনেই তিন জেলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ বাজারে গতকাল মাজার জিয়ারত নিয়ে দু দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন।
নাটোরের লালপুরে নাটোর-১ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমলের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন মনজুরুল ইসলাম বিমলসহ তিনজন। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৭ জন আহত হন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গতকাল রাতে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মেহেরপুর ও পীরগঞ্জে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির ভোটের প্রচারে বাধা দেওয়ায় তিন জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
জামালপুর: মেলান্দহে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ধানের শীষ বরাদ্দ পেয়ে হজরত শাহ কামালের (র) মাজার জিয়ারত করতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরীসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, মাজারের প্রবেশপথে পেছন থেকে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে কমপক্ষে আমার ১০ কর্মী-সমর্থককে আহত করে।
এ ব্যাপারে দুরমুঠ ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরী বলেন, বিনা উসকানিতে বিএনপির প্রার্থীর বহর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়।
নাটোর: নাটোর-১ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল কয়েকজন কর্মী নিয়ে মাইক্রোবাসে লালপুরের একটি জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস লালপুর ত্রিমোহনীর স্কুলগেটের কাছে পৌঁছলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীরা মাইক্রোবাসটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা মনজুরুল ইসলাম বিমল ও তার কর্মীদের বেধড়ক পেটায়। পরে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাদের লালপুর ফিলিং স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। গোপালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন বলে জানা যায়।
আহত কর্মী ইসমাইল হোসেন মোবাইলে জানান, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের দেখলে তারা চিনতে পারবেন। ঘটনার জন্য প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করে বলেন, আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। একটা জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলাম। ভাবতেও পারিনি এ অবস্থায় হামলা চালানো হবে। ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। একই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বকুল জানান, এ হামলায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। দলীয় কোন্দলের জের ধরেই এ হামলা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ: সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল, সারটিয়া ও ধুকুরিয়ায় সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে উভয়পক্ষে ৫ নেতাকর্মী আহত হন।
জানা যায়, হাইকোর্টের রায়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার খবরে নিজ এলাকা চক শিয়ালকোল এলজিইডি মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই মিছিলে হামলা চালালে সংঘর্ষ হয়। এতে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চার্লি, বিএনপি কর্মী শফিকুল ইসলাম, রেজাউল কামরুল পান্নাসহ ৫ জন আহত হন।
একই সময় উত্তর সারটিয়া ও ধুকুরিয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগকর্মীরা বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ছানোয়ার হোসেন ছানু আহত হন। এ ছাড়া শিয়ালকোলে আরেক হামলায় আহত হন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর-ই আলম। একই সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা জিব্রাইলের বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, এ ব্যাপারে তার কাছে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আ.লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে গাংনীতে ৫ জনকে কুপিয়ে জখম, পীরগঞ্জে হামলা: অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে মেহেরপুরের গাংনীর দুর্লভপুরে আওয়ামী লীগের একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের ৫ জন আহত হন। গতকাল সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে চার জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য জনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মেহেরপুর ও পীরগঞ্জ প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা শহরে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ইয়াসিন আলীর পক্ষে প্রচারকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইমদাদুল হকের সমর্থকরা হামলা চালায়। বিকাল ৫টায় পীরগঞ্জ শহরের পশ্চিম বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় পীরগঞ্জ উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবু জাহেদ ইবনে জুয়েল আহত হন। এ সময় পীরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশিদ সংবাদকর্মীদের হামলার ছবি তুলতে বাধা দেন। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংবাদকর্মীরা। তারা ওসির অপসারণও দাবি করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম ও দুর্লভপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হায়দার আলী পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে তিন দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জেরে গতকাল গ্রামের আশরাফুল ইসলামের চায়ের দোকানে হায়দার পক্ষের লোকজনের ওপর হামলায় চালায় তৌহিদের পক্ষের লোকজন। তারা প্রতিপক্ষকে রামদা দিয়ে কোপায়। এতে ৫ জন গুরুতর জখম হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখান থেকে উসমান গনি, আবদুর রাজ্জাক, আজমত আলী ও এনামুলকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। জিয়া উদ্দীন নামের একজনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। হামলাকারীদের আটকের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারকালে হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক বলেন, আমরা পীরগঞ্জে ছিলাম না। এটি নিছক পাতানো খেলা। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা অঙ্গসংগঠনের কেউ এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
তিন জেলায় বিএনপির প্রচারে পুলিশের বাধা, সংঘর্ষে আহত ৩০, নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিন খুলনা, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও শেরপুরের শ্রীবরদীতে দলীয় প্রার্থীদের পুলিশ প্রচার চালাতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। এতে ৩০ জন আহত হন। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরীর নির্বাচনী সভা থেকে দলীয় ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুলনা : নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল শেষ করে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল মিছিলসহকারে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ের অদূরে খুলনা সদর থানার মোড়ে তাদের মিছিলের গতি রোধ করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুপুর ২টার পরে প্রচার মিছিল বের করতে পারবে। বেশকিছু সময় মিছিলটি থমকে থাকার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ফের দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যান। অবশ্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, বিশৃঙ্খলা এড়াতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়।
শ্রীবরদী: শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রথম নির্বাচনী পথসভা আহ্বান করে। বিকালে স্থানীয় যুবলীগের পক্ষে পাল্টা সভা আহ্বান করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিকাল ৩টায় সভাস্থানে অবস্থান নেয়। পরে ধানের শীষের পক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল আসতে শুরু করলে পুলিশ সভা করতে নিষেধ করে। এতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাহমুদুল হক লংগরপাড়া-শ্রীবরদী সড়কে মিছিল করেন এবং স্থান ত্যাগ করেন।
মাহমুদুল হক জানান, বিষয়টি সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটন জানান, স্থানীয় যুবলীগ আগে থেকেই সমাবেশ ডাকলেও বিএনপির প্রার্থী একই স্থানে সভা আহ্বান করে। সে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার সেঁজুতি ধর জানান, আমি শুনেছি রুবেল সাহেব আমার কাছে একটি তালিকা দিয়েছেন, কিন্তু জেলায় মিটিং থাকায় আমি তা দেখিনি। একই স্থানে দুই দল সভা আহ্বান করায় আমরা উভয় দলকেই সভা না করতে বলেছি। তবে পুলিশ বলছে, তারা সমাবশে কোনো বাধা দেননি।
চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ ভাটিয়ারি ইউনিয়নের মুজিব চৌধুরীর বাড়িতে নির্বাচনী সভা চলাকালে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরীর প্রায় ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। ইসহাক কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে প্রচার শুরু করব। তাই কর্মিসভা আহ্বান করা হয়েছিল। সেই সভা থেকে নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হলো। তবে সীতাকু- থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ: চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী আলহাজ এমএ হান্নান শোডাউনের উদ্দেশে ফরিদগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে বিকাল সাড়ে ৪টায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে প্রবেশ করেন। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পুলিশ আরিফ হোসেন ও ইমাম হোসেন নামে এক সাবেক ছাত্রনেতাকে আটক করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে।
বিএনপির প্রার্থী এমএ হান্নান অভিযোগ করেন, কোনো কারণ ছাড়াই তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। পাল্টা অভিযোগ করেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ চৌধুরী।
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে আ.লীগের হামলা-ভাঙচুর
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শরীফুজ্জামানের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। সোমবার রাত নয়টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বহরে থাকা দুটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। হামলায় আহত হনঅন্তত আটজন।
সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শরীফুজ্জামান এ অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, জেহালা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান ওরফে হাট হান্নানের নেতৃত্বে তিন শতাধিক লোক পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা চালায়। শরীফ ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, মজিবুল হক মালিক ও খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতা জেএসডির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শরীফুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হামলার ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে মুঠোফোনে জানিয়েছে। উভয় কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেছেন লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন। আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, বিএনপির প্রার্থী শরীফুজ্জামান বা তাঁর পক্ষে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে, লোকমুখে গোলযোগের খবর পেয়ে পরিদর্শককে (তদন্ত) সরেজমিনে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুরের সত্যতা পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস গণমাধ্যমকে জানান, শরীফুজ্জামান মৌখিকভাবে বিষয়টি অবগত করেছেন। তাঁকে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে, হান্নান (জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসানুজ্জামান হান্নান) তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিএনপি প্রার্থীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর ভাষ্য ঘটনার সময় তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর লোকেরা মুন্সীগঞ্জ পশুহাটে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের ছবি ভাঙচুর করলে সেখানে উপস্থিত দলীয় লোকজন গাড়িবহরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।
খবরপত্র/এমআই