বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রোজার জরুরি মাসায়েল

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

(গতকালের পর )
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় না
১. রোজা রেখে দিনে ঘুমালে ও স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না (হেদায়া)।
২. চোখে সুরমা লাগানো বা ওষুধ ব্যবহার করা, মাথা, চুল দাড়ি ও শরীরে তেল লাগানো এবং আতরের ঘ্রাণ নেয়া বৈধ। এমনকি চোখে সুরমা লাগানোর পর যদি থুথু কিংবা শ্লেষ্মার সাথে সুরমার রং দেখা যায় তবুও রোজা মাকরুহ হয় না (প্রাগুক্ত)।
৩. মুখের থুথু যত বেশিই হোক না কেন, তা গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না (তাহতাবি)।
৪. সাহরি খাওয়ার পর পান খাওয়া হলে সুবহে সাদিকের আগই উত্তমরূপে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। এরপরও যদি সকালে থুথুর সাথে কিছু লালা দেখা যায় তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৫. রোজা অবস্থায় ইনজেকশন বা টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হয় না তবে খাওয়া নিবারণ হয় এরূপ ইজেকশনে ভঙ্গ হয়ে যাবে (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।
৬. নাকের শ্লেষ্মা কণ্ঠনালীর ভেতরে চলে গেলে রোজা নষ্ট হয় না।
৭. রোজার কথা ভুলে গিয়ে কিছু খেয়ে ফেললে কিংবা সহবাস করলে এতে রোজা ভঙ্গ হয় না। কিন্তু খাওয়া শুরু করার পর স্মরণ হলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করতে হবে। স্মরণ হওয়ার পর সামান্য কিছু খেলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৮. অনিচ্ছাকৃত বমি বেশি কিংবা কম এতে রোজা নষ্ট হয় না (শামি)।
৯. অনিচ্ছাকৃত বমি কণ্ঠনালীর ভেতর চলে গেলেও রোজা নষ্ট হয় না। অবশ্যই যদি ইচ্ছাপূর্বক বমি করে, সে ক্ষেত্রে কম হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
১০. কান দিয়ে পানি পড়লে রোজা ভঙ্গ হয় না (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।
১১. কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজা জায়েজ। এমনকি নিমের কাঁচা ডালে দিয়েও যদি মিসওয়াক করা হয় এতেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না; মাকরুহও হবে না।
১২. রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা রক্ত বের হলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে মাকরুহ হবে।
যেসব অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ
১. রোজা অবস্থায় যদি এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে যে, কিছু ওষুধ ও খাবার না খেলে জীবনের আশঙ্কা হতে পারে বা রোগ বেড়ে যেতে পারে, যেমন- হঠাৎ পেটে ব্যথা দেখা দিলে ও সাপ দংশন করলে এমতাবস্থায় রোজা ছেড়ে দিয়ে ওষুধ সেবন করা জায়েজ (হেদায়াত প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-২০১)।
২. গর্ভবতী নারী যদি এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, যাতে তার গর্ভস্থিত সন্তানের জীবনের জন্য আশঙ্কা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ (শরহুল বিদায়াহ প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-২০২)।
৩. তৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হলে (দুররে মুখতার)।
যেসব কারণে রোজা না রাখা জায়েজ
১. এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যে রোজা রাখলে তার রোগ বেড়ে যাবে কিংবা রোগ দুরারোগ্য হয়ে যাবে কিংবা মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে রোজা না রেখে সুস্থ হওয়ার পর কাজা করবে। কিন্তু নিজের খেয়ালে রোজা ছেড়ে দেয়া জায়েজ হবে না। এ জন্য মুসলমান দ্বীনদার বিজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশ ও প্রাজ্ঞ মুফতির পরামর্শ প্রয়োজন হবে (দুররে মুখতার প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৩)।
২. আরোগ্য হওয়ার পর দুর্বল অবস্থায় রোজা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে রোজা না রেখে পরে কাজা করা জায়েজ আছে (প্রাগুক্ত)।
৩. যারা শরিয়ত অনুসারে মুসাফির তারা সফরে থাকাকালীন রোজা না রেখে অন্য সময় রাখতে পারে। যে ব্যক্তি ৪৮ মাইল বা তদূর্ধ্ব দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা করে নিজ বাসস্থানের সীমা অতিক্রম করেছে, সে ‘মুসাফির’ (হেদায়া)।
৪. সফরে কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম। তবুও যদি না রাখে, (পরে কাজা করে) তবে গোনাহগার হবে না (প্রাগুক্ত)।
৫. সফরে বের হওয়ার পর বিদেশে কোনো স্থানে ১৫ দিন বা এর চেয়ে বেশি অবস্থান করার নিয়ত করলে সে মুসাফির থাকে না, মুকিম হয়ে যায়। সুতরাং মুকিম অবস্থায় তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে (শামি দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৬৮)।
৬. গর্ভবতী নারী অথবা সদ্যপ্রসূতি রোজা রাখলে যদি নিজের বা শিশুর জীবন নাশের আশঙ্কা হয়, তবে তার জন্য রোজা না রাখা জায়েজ (প্রাগুক্ত)।
৭. রোজার মাঝে হায়েজ বা নেফাস হলে, এ অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ নয়, পরে কাজা করে নেবে। (জাওহারাহ দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৪৮)।
৮. রাতে যদি কোনো মহিলার হায়েজ বন্ধ হয়, তবে সকালে রোজা ছাড়বে না। যদি রাতে গোসল নাও করে থাকে তবুও রোজা রেখে দেবে এবং সকালে গোসল করে নেবে। আর যদি সুবহে সাদিক হওয়ার পর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়, তখন রোজার নিয়ত করা জায়েজ হবে না। অবশ্যই দিনভর কিছু পানাহার করা ঠিক নয়; রোজাদারের মতো থাকবে (প্রাগুক্ত)।
৯. কোনো মহিলা যদি ঋতুস্র্রাবরোধক ট্যাবলেট সেবন করে স্র্রাব বন্ধ রেখে রমজান মাসের রোজা পূর্ণ করে, তবে স্বাস্থ্যের জন্য কোনোরূপ ক্ষতির কারণ না হলেও এরূপ করা ঠিক নয়। বড় কোনো ওজর বা প্রয়োজন না থাকলে আল্লাহর দেয়া স্বাভাবিক বিধান যথাযথভাবে মেনে নিয়ে তা অনুযায়ী আমল করাই উত্তম।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যথাযথভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রধান ফকিহ আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com