বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বোরহানউদ্দিনে বিডি ক্লিনের খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান সম্পন্ন লালমোহনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণের উদ্বোধন নীলফামারীর ডোমারে ওলামা দলের মতবিনিময় সভা অ্যাডভোকেট হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিতে আইনজীবীদের মানববন্ধন নড়াইলে মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন রোধের দাবীতে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন নিলাম ডাকে সিন্ডিকেটের কবলে রৌমারী কাস্টমস মঠবাড়িয়ায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াই গলাচিপায় শহিদ সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শাহজাহান খানের স্মরণসভা এবং খুনিদের বিচার দাবী

বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে গড়ে উঠেছে অপার সম্ভাবনা

বরিশাল ব্যুরো :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার পর এখন জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সুবাতাস বইছে বরিশালেও। গত এক দশকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০ থেকে ১২টি ডকইয়ার্ড। যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট-বড় লঞ্চ, যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী জাহাজ। বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ বিলাসবহুল নৌযানই তৈরি এসব বরিশালের ডকইয়ার্ডে। দেশি-বিদেশি প্রযুক্তির মিশ্রনে স্থানীয় শ্রমিকরাই নির্মাণ করছে তারকা মানের এসব জলযান। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশত মানুষের। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং স্বল্প সুদে ঋণ পেলে বরিশালে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ করা সম্ভব বলেও মনে করেন উদ্যোক্তারা। সরজমিন দেখা গেছে, কোনো ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা জাহাজ নির্মাণ শিল্প। লাগসই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই এই শিল্পে ইতোমধ্যে অর্ধ শতাধিক ছোট-বড় যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান নির্মিত হয়েছে। সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণও ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫-৬টি জাহাজ নির্মাণ করা হয় বরিশালে। তবে বিদ্যুৎ ঘাটতিসহ ভ্যাট ও আগাম আয়করের খড়গ রয়েছে। অথচ মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে ভোলায় গ্যাস থাকলেও গ্যাসনির্ভর এই শিল্পে নেই কোনো গ্যাস সুবিধা। ফলে প্রতিনিয়ত এসব বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেই টিকে আছে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। ভোলার গ্যাস বরিশালে এলে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে খরচ অনেক কম হতো। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ খরচও বেশি। জানা গেছে, উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকলেও এখনো বরিশালের নৌযান নির্মাণ শিল্পে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিনিয়োগের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, জনতা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক এই সেক্টরে সীমিত আকারে কিছু বিনিয়োগ করেছে। তবে উচ্চ সুদের হারের সঙ্গে ব্যাংক ঋণ পেতে দীর্ঘ কালক্ষেপণসহ অসামঞ্জস্যপূর্ণ শর্তের বেড়াজালের কথা জানিয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা। এ ব্যাপারে বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পথিকৃৎ সুরভী শিপিং লাইনসের পরিচালক রিয়াজ-উল কবির বলেন, বরিশালে এ ব্যবসার গোড়াপত্তন ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তখন বরিশালে দক্ষ কারিগর পাওয়া যেত না। ঢাকা থেকে শ্রমিক এনে বরিশালে জাহাজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে বরিশালের শ্রমিক ও কারিগররা এখন অনেক দক্ষ হয়েছেন। ফলে বাইরে থেকে এখন আর শ্রমিক আনতে হয় না। দেশের যে কোনো স্থানের চেয়ে বরিশালে মজুরিও কম। এ কারণেই বরিশালে জাহাজ নির্মাণ করলে ৩০ ভাগ খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। সুন্দরবন নেভিগেশন ও সুন্দরবন শিপইয়ার্ডেরস্বত্বাধিকারী ও বরিশাল চেম্বার এন্ড কমার্সের সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বর্তমানে বরিশালে ছোট-বড় প্রায় ২০টি শিপইয়ার্ড রয়েছে। আর এতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন দুই সহ¯্রাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী। এখানকার শিপইয়ার্ডেই নির্মিত হয়েছে যাত্রীবাহী এমভি কীর্তনখোলা-১, ২ ও ১০, এমভি সুন্দরবনসহ অসংখ্য বিলাসবহুল জাহাজ। নির্মাণাধীন রয়েছে প্রায় ২০টি ছোট-বড় নৌযান। জাহাজ শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, বরিশালে জাহাজ শিল্পের অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে নদী ভাঙন। সুন্দরবন শিপইয়ার্ডের নিজস্ব ৩ একর জমির অর্ধেকই কির্তনখোলা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যান্য শিপইয়ার্ডেরও একই অবস্থা। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বরগুনার পাথরঘাটায় শিপ ব্রেকিং কার্যক্রম শুরু করার জন্য জরিপের কাজ এগিয়ে চলছে। এটা চালু হলে জাহাজের কাঁচামাল সংগ্রহে চট্টগ্রাম যেতে হবে না। তাছাড়া অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে পাথরঘাটায়। ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের মতে, প্রতি বছর ৭০০টি জাহাজ কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ পুরনো জাহাজ ক্রেতাদের ভিড়ে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে। বাংলাদেশের রড তৈরির কারখানাগুলোতে জাহাজ ভাঙা কাঁচামালের একটা অংশ জোগান দেয়। এতেই এ খাতটি শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। বর্তমান জাহাজ ভাঙা শিল্পকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ জাহাজের সব উপকরণ পুনঃব্যবহারযোগ্য। এই শিল্প যেমনভাবে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের জোগান দিচ্ছে, তেমনিভাবে এ শিল্প থেকে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যা আমরা আমাদের বাসাবাড়িতে ব্যবহার করছি। বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি পাথরঘাটায় শিপ ব্রেকিং কার্যক্রম শুরু হলে এ অঞ্চলের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। অবশ্য এ জন্য তারা ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস আনা এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের দাবি জানিয়েছেন। এক কথাই বলা যায় বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com